ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা……..
কোনও এক মন খারাপের দুপুরে দরজা এঁটে একা বসেছিলাম নিজের ঘরে। দিনটা ছিল ভাইফোঁটা। মন খারাপের কারণ হচ্ছে, এবারে ভাইফোঁটায় আমার দাদা বাড়ি আসছে না। সকাল থেকেই বসে ছিলাম একা একা । বাড়িতে সবাইকে বলা ছিল আমাকে যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে। কথা মত কেউ আসেনি। কিছু খাইও নি। মনে মনে ভেবেছিলাম,দাদাকে ফোঁটা দিলেওতো না খেয়ে থাকতে হতো। তাই ইচ্ছে করছিল না কিছু মুখে তোলার। যেদিন জানলাম দাদা আসবে না, সেদিন দাদার সঙ্গে ফোনে খুব করে ঝগড়া করেছিলাম। এক সময় দাদার সঙ্গে ঝগড়া করাটা আমার খুব প্রিয় ছিল। আর ঝগড়ার শেষে কান্নাকাটি করে দাদার কাছ থেকে কিছু আদায় করে নেওয়া ছিল তার চাইতেও প্রিয়। এবারও খুব করে ঝগড়া করলাম, ভাই ফোঁটাতে দাদার বাড়ি না আসার জন্য। এমনটা কখনোই হয় না। প্রতিবছরই দাদা ভাইফোঁটাতে বাড়ি আসে। এবারে বন্ধুরা মিলে সিকিম ঘুরতে যাবে বলে বাড়ি আসছে না। খুব কষ্ট হচ্ছিল সেদিন। প্রতি বছর সকাল থেকেই বাড়িতে আয়োজনের তোড়জোড় পড়ে যেত। এবার আমি ঘরে একা বসে।
দুপুর বারোটার সময় হঠাৎ আমার ঘরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। প্রথমবার পাত্তাও দিলাম না, কারণ রাগটা আমার একরত্তিও কমেনি। আবারও কড়ানাড়ার শব্দ। আবারও। এবার বাধ্য হয়ে রাগের বশেই দরজা খুলনাম। দরজা খুলতেই প্রকাণ্ড একটা বেবি পিঙ্ক কালারের টেডিবিয়ার। টেডিবিয়ারের পেছনে ঢাকা পড়ে আছে মানুষটার মুখ। আমি তো অবাক! কিন্তু অবাক হওয়ার পালা কি আর শেষ? টেডিবিয়ার সরাতেই দেখি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার দাদা! আমার চোখকে আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এক চোখ জল নিয়ে দাদাকে জড়িয়ে ধরলাম। ” চল্, ফোঁটা দিবি চল্। তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য আমাকে বন্ধুর বাড়িতে রাত কাটাতে হয়েছে। তুই ভাবলি কি করে, ভাই ফোটাতে আমি আসবো না?” দাদা আলতো করে আদরের চিমটি কেটে দিল গালে। সেটা শুধু ভাইফোঁটার জন্য না, আমার সারা জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ ছিল। সেদিন আমার খুশির ঠিকানা ছিল না।
বিয়ের পর পুরনো জিনিস গোছানোর সময় সবচেয়ে প্রথমে এই টেডিবিয়ারটার প্যাকিং করেছিলাম। আজ পাঁচ বছর হয়েছে বিবাহ সূত্রে বিদেশে থাকার জন্য ফোঁটা দিতে পারি না। কিন্তু ভাই ফোঁটাতে ওই টেডিবিয়ার টাকে যখন জড়িয়ে আদর করি,মনে হয় দাদাকেই জড়িয়ে ধরছি।” আর কিছু বলতে চাইলেন না বর্তমানে কানাডায় থাকা শিলচরের সুতপা। বুঝতে পারলাম তার আবেগ তাকে আর কিছু বলতে দিচ্ছিল না।
আসলে যে যতই দূরে থাক, ফোঁটা খাওয়ার জন্য বাড়িতে আসতে উন্মুখ হয়ে থাকে। বোনেরও আয়োজন শুরু হয়ে যায় বহু দিন আগে থেকে।যদিও এ ব্যস্ততম পৃথিবীতে আমরা এতটাই নিজেকে ব্যস্ততায় জড়িয়ে ফেলেছি, কঠিন বাস্তবের কাছে নতি স্বীকার করে আজ দূরদূরান্ত থেকে ভাইফোঁটা খেতে আসা আর সম্ভব হয়ে উঠে না।
এরকমই আর এক বাস্তবের শিকার চাকরি সূত্রে দিল্লিতে থাকা শিলচরের মধুমিতা পুরকায়স্থ। চাকুরির সুবাদে ভাই আমেরিকায় থাকার জন্য অনেক বছর ধরেই আর ভাইফোঁটা দেওয়া হয়ে উঠে না মধুমিতার। এ নিয়ে মনের মধ্যে আক্ষেপ তো থেকেই যায়। অতীতের কথা মনে করে বললেন,” অথচ আগে ভাইফোঁটা এলে কত আয়োজনের রমরমা ছিল। ঐদিন নিজের হাতে ভাইয়ের পছন্দ অনুযায়ী অনেক কিছু রান্না করতাম। শুধু নিজের ভাই নয় পিসতুতো মাসতুতো ভাই মিলে অনেকজনকে ফোঁটা দিতাম। সবাই একসঙ্গে বসে যখন আমার হাতে ফোঁটা নিত, সেই মুহূর্তের আনন্দের কথা ভাবলে আজও শিহরণ জাগে। কিছুটা বড় হওয়ার পর পিগি ব্যাঙ্ক এর পয়সা খরচ করে ভাইয়ের জন্য উপহার কিনে আনতাম। উপহারটা পাওয়ার পর ভাইয়ের আনন্দটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ছিল। এখন দূরে বসে ওই দিনগুলোর কথাই ভাবছি”।
মধুমিতার মনের আক্ষেপ মনটাকে ভারাক্রান্ত করলেও, অন্য দিকে কল্যাণী ভট্টাচার্যের মনের আনন্দও আমাকে স্পর্শ করল। কারণ প্রায় ৫০ বছর পর এবার আবার ভাইকে ফোঁটা দেওয়ার সুযোগ এসেছে হাইলাকান্দির কল্যাণী ভট্টাচার্যের কাছে। শুধু ভাইকে ফোঁটা দেওয়ার জন্য এবার কলকাতায় পাড়ি দিয়েছেন তিনি। এতে ভাই বোন দুজনেরই আবেগের পরিসীমা নেই। এটা একটা বড় প্রাপ্তি ভাই বোন দুজনের জন্যই, আনন্দ আপ্লুত কণ্ঠে জানালেন তিনি।
একই বিষয় নিয়ে গুয়াহাটির পম্পা দেবেরও আনন্দের শেষ নেই। কারণ পম্পাও ১৫ বছর পর ভাইকে ফোঁটা দিতে শিলচরে পাড়ি দিয়েছেন। “সে এক অদ্ভুত অনুভূতি। আবেগপ্রবণ হয়ে ভাই বোন দুজনেরই চোখে জল আসার উপক্রম। শুধু কি তাই? আমার ছেলেও ১৫ বছর পর ভাইফোঁটা খাবে। তাই নিয়ে আমার ভাইজির কি প্রচণ্ড উৎসাহ! শাড়ি পড়ে ফোটা দেবে বলে নতুন শাড়িটাড়ি কিনে হুলুস্থুল ব্যাপার!এবার বাড়িতে যেন একটু বেশি আয়োজন!”
আজ আনন্দের হাট বসেছে শিলচরের মুন্না পুরকায়স্থের বাড়িতেও। তুলসী গাছের তলার মাটি দিয়ে ভাইকে প্রতিপদের ফোঁটা দিয়ে মুন্না প্রতীক্ষার আনন্দ নিচ্ছেন দ্বিতীয়ার ফোঁটার জন্য। খুশির সঙ্গে জানালেন,” আমার শ্বশুর বাড়ি ঢাকায়, তাই নিয়মটা একটু অন্যরকম। আমাদের পাঁচ রকমের নাড়ু বানাতে হয়। নারকেল, খই, চিড়ে, মুড়ি, খই এর নাড়ু বানাই প্রতিবছর। ৫ ব্যঞ্জন রান্না করে খাওয়াই ভাইকে। ধান দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করি। ধান হচ্ছে আমার ভাইয়ের সম্পদের প্রতীক, আর দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করি ভাইয়ের আয়ু বাড়ার জন্য। দূর্বা যেমন যেখানে সেখানে অজস্র পরিমাণে গজায় তাই বলা হয়, দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করলে এরকম ভাবেই আয়ু বাড়ে। ফোঁটাও আমরা পাঁচ রকমের দেই, চন্দন, দই, কাজল, ঘি আবির ও হলুদের মিশ্রণ এবং তুলসীর তলার মাটির।”
যদিও শিলচরের অসীমা রায়ের ভাইফোঁটা পর্বের অনুভূতি একটু অন্য ধরনের। “আমরা দুই বোন হওয়ায় এবং নিজের ভাই না থাকার জন্য ছোট বেলায় খুব মন খারাপ হতো। মনে হতো, সবার ভাই রয়েছে আমার কেন শুধু বোন? এখন আর এমনটা হয় না।তবে নিজের ভাই না থাকলেও আমার বাবার বন্ধুকে যেমন নিজের কাকা বলে মনে করতাম, উনার ছেলেকে নিজের খুড়তুতো ভাই বলেই মনে করতাম। তাই সেজদাকে প্রতিবছর ভাইফোঁটা দিতাম। বড় হওয়ার পরে আর তেমন করে ফোঁটা দেওয়া হয়ে উঠেনি। তবে এখন বাড়িতে বড় করে ভাইফোঁটার আয়োজন করি। অনেক ধরনের খাবার বানাই।আমার মেয়ে যখন আমার ছেলেকে ফোঁটা দেয়, তখন এর মধ্যে দিয়েই ভাইফোঁটার আনন্দ টাকে উপভোগ করে নেই।”
ভাই না থাকলে সেটা এক ধরনের, কিন্তু যারা শুধু দূরে থাকার জন্য ভাইফোঁটা দিতে পারেন না কিংবা ভাইফোঁটা নিতে পারেন না ওদের অনুভূতিটা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। সৌদি আরবে থাকায় শিলচরের অরিন্দম ধরের এবার আর ভাইফোঁটা নেওয়া হচ্ছে না। তবে অনেক বছর ধরেই চাকরির সুবাদে বাইরে থাকার জন্য ভাইফোঁটা উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত অরিন্দম। তাই তার কথার মধ্যেও এর রেশ খুঁজে পাওয়া যায়, “ভাইফোঁটা আসলেই মনে পড়ে ছোটবেলায় আমার পাড়ার সব বন্ধুরা চলে আসত আমার দিদির হাতে ফোঁটা নেবার জন্য। সবাই লাইন করে বসতাম আর দিদি এক প্লেটে করে ধুপকাঠি, মোমবাতি, লাল আবির, চাল, ধান দূর্বা, মিষ্টি আরো কত কিছু নিয়ে বসত। দিদি ফোঁটা দিচ্ছে আর পেছনে বসে মা মন্ত্র পড়ছেন “যম দুয়ারে দিয়া কাঁটা, বোন এ দেয় ভাইরে ফোঁটা……..”। খুবই মনে পড়ে হারিয়ে যাওয়া পুরোনো এই দিনগুলো…….”।
একই অবস্থা শিলচরের হেমো কান্ত নাথের। “বিয়ের সুবাদে বোন গৌহাটি থাকলেও এখন আর ভাইফোঁটার দিন মেলা হয়ে উঠে না, নানান ঝামেলায়। অনেক বছর হয়েছে বোনের হাতে ফোঁটা পাইনি। অথচ ছোটবেলায় এই দিনটির জন্য কত অপেক্ষা থাকতো। এখন আমরা তিন ভাইই এই দিনটিতে ওকে খুব মিস করি, সঙ্গে দুঃখ হয়।” বিভিন্ন কারণে বাইরে থাকার ফলে যারা ফোঁটা দিতে কিংবা নিতে পারেন না তাদের দলের একজন হয়ে তাদের সঙ্গে একাত্ম বোধ করছি। অনুভূতিটার সঙ্গে ভীষণ ভাবে পরিচিত। আগের দিনের মতো ঘরের খুটিতে কিংবা দেওয়ালে ফোঁটা দেই না। কিন্তু এই দিনটাতে মনের ভেতরের মনে চলে ভাইফোঁটার আয়োজন। সে আয়োজনে ধান, দূর্বা, প্রদীপ, চন্দন, মিষ্টি মণ্ডা কিছুরই অভাব থাকে না! মন্ত্র উচ্চারণে মনে মনে ভাইকে ফোঁটা দিই ,আশীর্বাদও চেয়ে নেই মনের গভীরে। তাই যারা বাইরে থাকেন, তাদের এভাবেই চলবে ভাইফোঁটা দেওয়ার পালা। কারণ দূরত্ব কখনোই বাধ সাধতে পারে না ভাইয়ের মঙ্গল কামনায়। তাই পৃথিবীর যেখানেই বোন থাকুক, ভাইয়ের মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনার প্রার্থনা চলবে অনন্ত কাল ধরে।সামনে কিংবা দূরে, মনে মনে কিংবা উচ্চস্বরে বারবার উচ্চারিত হবে,
“ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা
আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা।।
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে
যম হলো অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে
আমার ভাই হোক অমর।।”
এই মন্ত্র উচ্চারণে ভাইয়ের আয়ু বাড়ে কি না তা নিশ্চিত না হলেও, ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে বোনের মঙ্গল কামনায় অবশ্যই ভাইয়ের জীবনপথ মসৃণ হয়ে উঠে, মঙ্গলময় হয়ে ওঠে। এই উৎসবের মাধ্যমে ভাই বোনের ভালবাসার বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়ে ওঠে। সম্পর্ক কেন্দ্রিক যেসব উৎসব ভারতবর্ষে পালন করা হয় তার মধ্যে বলা যায় ভাই বোনের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতীক এই ভাইফোঁটা অন্যতম।
ভাই ফোঁটা হিন্দু বাঙালির একটি অন্যতম আনন্দের উৎসব। পোশাকি নাম হচ্ছে ভাতৃদ্বিতীয়া। কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। পশ্চিম ভারত ও বিহারে এই উৎসব ভাইদুজ নামেও পালিত হয়ে থাকে। যদিও মহারাষ্ট্র গোয়া কর্নাটকে এই উৎসব ভাইবিজ নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের পার্বত্য অঞ্চল ও নেপালে এই উৎসব ভাইটিকা নামে পরিচিত। এই উৎসবকে দক্ষিণ ভারতে যমদ্বিতীয়া বলেও অনেকে জানেন।
এই ভাইফোঁটা নিয়ে অনেক পৌরানিক ব্যাখ্যা বা কাহিনী কথিত আছে, মৃত্যুর দেবতা যম তার বোন যমুনার কাছ থেকে শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়াতে ফোঁটা নিয়েছিলেন।। কথিত আছে, সূর্যদেব ও তার পত্নী সংজ্ঞার যমুনা নামে কন্যা সন্তান ও যম নামে পুত্রসন্তান ছিল। পুত্র ও কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর সূর্যের উত্তাপ তাঁর স্ত্রীর কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠায় তিনি কাউকে কিছু না বলে মর্তে চলে যান। নিজের প্রতিলিপি ছায়াকে স্বর্গে রেখে যান। জানা যায়, ছায়া যম এবং যমুনার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন না। অনেক অত্যাচার সহ্য করার পর যমুনা ছায়া কর্তৃক স্বর্গ রাজ্য থেকে বিতাড়িত হন। যদিও সমস্ত নিয়ম মেনে যমুনার বিবাহ দেওয়া হয়। দিদির জন্য যমের ভীষণ ভাবে মন খারাপ করত। তাই একদিন যম রাজদূত মারফত যমুনার কাছে বার্তা পাঠালেন। সে খবর পেয়ে আর আনন্দের শেষ ছিল না যমুনার। কালী পূজার দুদিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয়াতে যম যমুনার বাড়ি পৌঁছান। বোন যমুনা আগে থেকেই অনেক ধরনের সুস্বাদু খাবার বানিয়ে রেখেছিলেন। যমুনার আতিথেয়তায় যম প্রসন্ন হয়ে বোনকে বর প্রার্থনা করতে বলেন। যমুনা তখন যমকে বলেছিলেন, ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন প্রত্যেক ভাই যেন বোনকে স্মরণ করে এবং প্রত্যেক বোন যেন ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গলময় জীবন কামনা করে। যমুনা তার ভাই যমের মঙ্গল কামনায় আরাধনা করেন। আর তারই ফলে অমরত্ব লাভ করেন যম।
অন্য এক কাহিনী অনুসারে, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তাঁর কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উত্সবের প্রচলন হয়।
অন্য আর এক কাহিনী বলছে, একদা প্রবল পরাক্রমশালী বলি বিষ্ণুকে পাতালে বন্দী করে নিয়ে যায়। সব দেবতারা মহা বিপদে পড়েন, কারণ বলির পরাক্রম থেকে কোনোভাবেই তারা নারায়ণকে উদ্ধার করতে পারছিলেন না। তখন লক্ষ্মী নারায়নকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন। লক্ষী বলিকে ভাই স্বীকার করে তার কপালে তিলক পড়িয়ে দিলেন। বলি খুশি হয়ে ভাতৃত্বের বন্ধন স্বীকার করে লক্ষ্মীকে উপহার চাইতে বললেন। লক্ষ্মী তখন উপহার হিসেবে নারায়ণকে চাইলেন। সেই থেকেই ভাইফোঁটার সূচনা।
সূচনা যেভাবেই হোক এই দিনটির প্রতীক্ষায় থাকে ভাই বোন দুজনই।যাঁরা কোনও কারণে ভাইফোঁটা দিতে পারছেন না তাঁরা দেওয়ালে তিলক বা ফোঁটা দেন। অনেক জায়গায় আবার আকাশের চাঁদের উদ্দেশেও ফোঁটা উত্সর্গ করার রীতি আছে। আগেকার সময়ে ঘরের খুটিতে ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় ফোঁটা দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। মহারাষ্ট্রে মেয়েদের ভাইবিজ পালন বিশেষ কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এমনকি যেসব মেয়েদের ভাই নেই, তাঁদেরও চন্দ্র দেবতাকে ভাই মনে করে ভাইবিজ পালন করতে হয়।
অনেক জায়গায় ঘাসের ডগায় যে ভোরের শিশির থাকে তা দিয়েই বাটতে হয় চন্দন। মূলত এটাই ফোঁটার প্রধান উপকরণ। অনেকে আবার ফোঁটা হিসেবে চন্দন, তুলসী তলার মাটি, আবির, হলুদ, দই এগুলোও ব্যবহার করে থাকেন। স্থান ভেদে উপকরণগুলোও ভিন্ন হয়।
স্থান ভেদে উপকরণ ভিন্ন হতে পারে, ভিন্ন হতে পারে মন্ত্র। কিন্তু মন্ত্র উচ্চারণ কিংবা ফোঁটা দেওয়ার উদ্দেশ্য এক। পৃথিবীর সব বোনেদের মনের প্রার্থনা এক।ভাইয়ের মঙ্গল কামনা।।
Comments are closed.