
মানবতার জন্য সর্বশেষ দান, মরনোত্তর দেহদান করে গেলেন সাহসী নারী তপতী ভট্টাচার্য
জীবন থাকতে অনেকেরই সাহায্যের কারণ হয়েছেন,এবার কেউ হয়তোবা পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে শুধু তপতী ভট্টাচার্যের জন্য। শিলচর তারাপুর নিবাসী তপতী ভট্টাচার্য্য মরণোত্তর দেহদান ও অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছিলেন ২০১২ সালে। সেই অঙ্গীকার অনুযায়ী আজ দুপুর দুটো দশ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে আত্মীয় পরিজন তার শেষ ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার মরদেহ শিলচর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান।
হিউম্যান সাইন্স ফোরামের সদস্যা তপতী ভট্টাচার্যের মরদেহ তার মৃত্যুর পর আজ মেডিক্যাল কলেজের এ্যানাটমি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। চক্ষু বিভাগের ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন এবং দক্ষতার সঙ্গে চক্ষুদানের কাজটি সম্পন্ন করা হয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, কিছুদিন আগেই চক্ষু সংরক্ষনের কাজটি মেডিক্যাল কলেজের আই ব্যাংকে যথাযথভাবে শুরু হয়েছে। জানা যায়, তপতী ভট্টাচার্যের কর্নিয়া সংগ্রহ করে রাখা হয়। পরীক্ষার পর যদি দেখা হয় যে কর্নিয়া দুটো প্রতিস্থাপনযোগ্য, তবে অন্ধ দুজনের এই সুন্দর পৃথিবীটা দেখতে পাওয়ার কারণ হয়ে উঠতে পারেন তপতী ভট্টাচার্য।
তাছাড়াও তপতী ভট্টাচার্যের দেহ এনাটমি বিভাগে সংরক্ষিত করে রাখা হয়। শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে তার দেহ কাজে লাগানো হবে। তাছাড়াও অন্যান্য অঙ্গ অন্য কারো সাহায্যে আসতে পারে কিনা পরীক্ষা করে দেখা হবে।তবে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা শিলচর মেডিক্যাল কলেজে নেই।
এখানে আরো উল্লেখ করা যেতে পারে, তার আগেও আরো অনেক মহিলা মরণোত্তর দেহদান করে গেছেন।কিন্তু আজই প্রথম তপতী ভট্টাচার্যের কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের জন্য সংগ্রহ করে রাখা হয়।
হিউম্যান সাইন্স ফোরামের একজন সদস্য বিবেক আচার্য জানালেন, তার আগেও ২০১৬ সালে হাসি রানী চক্রবর্তী, ২০১৭ সালে মালুগ্রামের মীরা দেব , ২০১৭ সালে পাথারকান্দির নীলিমা গুপ্ত সহ অনেক মহিলাই মরণোত্তর দেহ দান করে গেছেন।
হিউম্যান সাইন্স ফোরামের পক্ষ থেকে শিলচরের এনাটমি ডিপার্টমেন্ট ও আই ডিপার্টমেন্টকে এ কাজের জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। তবে ফোরামের সদস্য বিবেক আচার্য্য বরাক বুলেটিনের সঙ্গে কথা বলার সময় আক্ষেপ করে বলেন, আমরা বর্তমানে উত্তর আধুনিক যুগে বাস করলেও শিলচরে আজ প্রথম কর্নিয়া সংগ্রহ করা সম্ভব হল।বর্তমানে যদিও কিছু মানুষ এক্ষেত্রে এগিয়ে এসে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করছেন, কিন্তু তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে আমাদের এখনও সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে।তাই আমরা খুব শীঘ্র এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার আশা রাখছি। সঙ্গে এক্ষেত্রে আরও অনেক সাধারন মানুষ এগিয়ে আসবেন বলেও আশা করছি।
তপতী ভট্টাচার্য বর্তমানে শিলচর তারাপুরের বাসিন্দা হলেও আগে মালুগ্রামে বাস করতেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি চাকরিসূত্রে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভাগে কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি সারদার সংঘের জয়েন্ট সেক্রেটারি তথা একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
।। তথ্য ও ছবি সৌজন্য : মৌপ্রিয়া চৌধুরী ।।
Comments are closed.