গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা ১৯-বছরের হকি খেলোয়াড়ের, কারণ এখনও অজ্ঞাত
রবিবার দুপুরে এক পূজোর অনুষ্ঠানে তার স্ত্রীর সঙ্গে গেছিলেন তারাপুরের উকিল বাজার এলাকার বাসিন্দা তাপস পাল। তার দুই ছেলে বাড়িতেই ছিল, কিছুক্ষণ পর বড় ছেলেও কোনও একটা কাজে বেরিয়ে গেছিল। ছোট ছেলে ঘরে একাই ছিল। বড় ছেলে সানি ফিরে আসার পর দেখে ভেতর থেকে দরজা লাগানো। এরপর অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি, শেষমেষ পেছনের দরজা ভেঙে দেখা যায় ঘরের উপর দিকে একটি কাঠে দড়ি বেঁধে গলায় ফাঁসি লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে ১৯-বছর বয়সের তন্ময় পাল। এতে পরিবারের লোকেরা একেবারেই ভেঙে পড়েছেন, তবে এই আত্মহত্যার পেছনের কারণ তারা এখনও খুঁজে পাননি।
তন্ময় পালের বাবা তাপস পাল বলেন, “আমার ছোট ছেলে বরাবরই একটু চাপা স্বভাবের, সে খুব একটা বেশি কথা বলতে পছন্দ করে না। সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে বলে আমরা অনেক সময় তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এই বছর মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল তার, তবে পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাওয়ায় অনেকটা মন খারাপ হয় তার। তবে এটা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো কথা বলত না সে। রবিবার আমরা এক অনুষ্ঠানে গেছিলাম এবং তাকেও বলেছিলাম যাওয়ার জন্য, সে স্বাভাবিকভাবে মানা করে দেয়। তবে ফিরে এসে তাঁর মৃতদেহ দেখতে হবে এটা কল্পনা করতে পারিনি। আমার অনুভূতি হয়তো ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না, তবে নিজের হাতে নিজের ছেলের ঝুলন্ত মৃতদেহ নামাতে গিয়ে মনে হয়েছে এর থেকে কঠিন মুহূর্ত জীবনে দেখিনি। যে চলে গেছে তার যেন আত্মার শান্তি হয়, বাবা হিসেবে এটুকুই প্রার্থনা করছি।
পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন একসময় খুব ভালো হকি খেলত তন্ময় পাল। তারাপুর এসি, শিলচর জুনিয়র এবং সিনিয়র হকি টিমের সদস্য ছিল। তবে লকডাউনে প্রায় সবকিছুই বন্ধ হয়ে যায়। তার মনের কথা খুব বেশি প্রকাশ করত না তন্ময়, তবে তার অস্বস্তি অনুভব করতে পারতেন পরিবারের লোকেরা।
তারাপুর থানার ইনচার্জ আনন্দ মেধী জানিয়েছেন, রবিবার বিকেল চারটে নাগাদ তারা খবর পান, একজন যুবক আত্মহত্যা করেছে। পরিবারের সদস্যদের সাহায্যে ঝুলন্ত মৃতদেহ নামিয়ে আনেন পুলিশের আধিকারিকরা। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতালে কিছু সমস্যার দরুন এদিন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি, ফলে সোমবার সকালে ময়না তদন্ত শেষ হবে। এরপর মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট সংকেত পাওয়া যায়নি। তবে পরিবারের লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তাদের বয়ানের উপর ভিত্তি করে পর্যালোচনা করা হচ্ছে আসলে কেন যুবকটি এই সিদ্ধান্ত নিল। যেহেতু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল এবং মৃতদেহটি ঘরের ভেতরেই ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে, ফলে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যাই।
Comments are closed.