Also read in

হাইলাকান্দিতে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় শেষমেষ আটক দুই অভিযুক্ত, এদের একজন করোনা আক্রান্ত

প্রায় এক সপ্তাহ আগে হাইলাকান্দি সিভিল হাসপাতালে এক করোনা রোগীর মৃত্যুর পর কর্তব্যরত ডাক্তারকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করেছিলেন রোগীর পরিবার। প্রথমে পুলিশ এজাহার দিতে ভয় পাচ্ছিলেন ডাক্তার, শেষমেষ পরিবারের সঙ্গে মিলে পুলিশের দ্বারস্থ হন। ডাঃ গৌরব ভট্টাচার্যের মা হাইলাকান্দি থানায় এজাহার দায়ের করেন। এক সপ্তাহ পর শুক্রবার সকালে দুই অভিযুক্তকে আটক করেছে পুলিশ। এদের বাড়ি হাইলাকান্দির শহরেই এবং ঘটনার পর তারা নিশ্চিন্তে বাড়িতেই ছিলেন।

হাইলাকান্দি থানার ওসি প্রণব কুমার শইকীয়া জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে রুম্পি মালাকার এবং হিমাংশু মালাকার নামের দুই অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আইপিসি ২৯৪, ৩২৩, ৫০৬ এবং ৩৪ ধারায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে আটক হওয়ার পর জানা গেছে রুম্পি মালাকার করুনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাকে থানায় একটি আলাদা কক্ষে আইসোলেশন রাখা হয়েছে। তার জিজ্ঞাসাবাদ সম্পূর্ণ কোভিড প্রটোকল মেনে হবে।

তিনি বলেন, “এই দুঃসময়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা যে সেবা দিচ্ছেন সেটা অত্যন্ত জরুরী এবং তাদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। চিকিৎসককে হেনস্থা করায় দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে, এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া জেলার প্রত্যেক হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও কঠোর করার পরিকল্পনা রয়েছে পুলিশের।”

আক্রান্ত চিকিৎসকের পরিবার সূত্রে খবর অনুযায়ী, হাইলাকান্দি সিভিল হাসপাতালে ২৭ মে এক করোনা আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে আসেন স্থানীয় এক পরিবার। রোগীর অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল ছিল এবং হাসপাতালের আসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। দ্রুত চিকিৎসার জন্য আসায় ডাক্তাররা রোগীকে কোনও সাহায্য করতে পারেননি। সেদিন আউটডোরে কর্মরত ছিলেন ডাক্তার ডাঃ গৌরব ভট্টাচার্য। নিয়ম অনুযায়ী তিনি রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে ঘোষণা করেন এবং পরিবারকে সেটা বলেন। এতে পরিবারের লোকেরা অত্যন্ত রেগে যান এবং প্রথমে গালাগাল দেন, এরপর ডাক্তারকে মারধর করেন। পরিস্থিতি দেখে অন্যান্য ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা এগিয়ে আসেন এবং গৌরব ভট্টাচার্যকে বাঁচান। রোগীর পরিবারের লোকেরা যাবার সময় বারবার হুমকি দিয়ে গেছেন, এতে স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেকটাই ভয় পেয়ে যান। বাড়ি ফিরে সব কথা নিজের মায়ের কাছে জানান চিকিৎসক গৌরব ভট্টাচার্য, তবে তিনি পুলিশে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। পরের দিন তারা স্থানীয় থানায় এজাহার দায়ের করেন।

গৌরব ভট্টাচার্যের মা একজন প্রাক্তন সরকারি কর্মচারী। তিনি বলেন, “এধরনের ঘটনায় শুধু ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীরা আতঙ্কিত হচ্ছেন এমনটা নয়, পুরোটা সমাজের ক্ষতি হচ্ছে। রোগীর পরিবারের মানসিক অবস্থা আমরা আঁচ করতে পারি, তবে এর মানে এই নয় তারা ডাক্তারদের শারীরিক নিগ্রহ করবে। আমার ছেলে তার দায়িত্ব পালন করছে কিন্তু এখন তাকে হাসপাতালে পাঠাতে আমার ভয় হয়। আমরা প্রশাসন এবং রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন রাখছি, হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন।”

সিভিল হাসপাতালে সুপারেন্টেন্ড ডাঃ সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, “অন্তত হাসপাতাল চত্বরে যাতে কোনও চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী হেনস্তার শিকার না হন তার জন্য পাকাপাকি ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এই বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা আশ্বাস দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্রদান করা হবে। আমরা চাইছি আগামীতে হাসপাতাল চত্বরে প্রত্যেক এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে।”

হাইলাকান্দির পুলিশ সুপার রমণদীপ কৌর জানিয়েছেন তাঁরা ঘটনার তদন্ত করছেন। তিনি বলেন, “ডাক্তারের পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে যে আবেদন রাখা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। শুধুমাত্র একজন চিকিৎসক নয় জেলায় কর্মরত প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীর সুরক্ষা নিয়ে আমরা চিন্তিত। আগামীতে সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা হবে।”

Comments are closed.