"বিশ্বমানের ছবি বানানোর মতো প্রতিভা বরাকে রয়েছে," বললেন চিত্রভানু ভৌমিক; শিলচরে শুরু হলো বীক্ষণের চলচ্চিত্র উৎসব
১১ দেশের ২২টি ভাষার ছবি নিয়ে শিলচরে শুরু হয়েছে বীক্ষণ সিনে কমিউনের ২২তম চলচ্চিত্র উৎসব। সম্ভবত লকডাউন পরবর্তী সময়ে রাজ্যে এটিই প্রথম চলচ্চিত্র উৎসব। অবশ্যই কোভিড প্রটোকল মেনে অন্যান্য বছর থেকে একটু সীমিতভাবেই আয়োজিত হচ্ছে অনুষ্ঠানটি। তবে পাঁচদিনব্যাপী উৎসবে যেসব সিনেমা প্রদর্শিত হবে সেই তালিকা দেখলে যেকোনও সিনেমাপ্রেমী লোভ সামলাতে পারবেন না।
সত্যজিৎ রায়ের অভিযান থেকে শুরু করে মনোজ বাজপেয়ীর গলি গুলাইয়া, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ছবি থাকছে এবারের প্রদর্শনীতে। গত বছর যেসব অভিনেতা বা নির্দেশক পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা জানাতে বিশেষ কিছু সিনেমা দেখানো হবে। একইসঙ্গে উৎসবের ওপেন ফোরামে আয়োজিত হবে চলচ্চিত্র বিষয়ক আলোচনা সভাও।
বীক্ষণ সিনে কমিউনের উদ্যোগে এবং দ্বিজেন্দ্র-ডলি মেমোরিয়াল লাইব্রেরির সহযোগিতায় আয়োজিত হচ্ছে এবছরের চলচ্চিত্র উৎসবটি। মঙ্গলবার সন্ধ্যেবেলা শিলচরে দ্বিজেন্দ্র-ডলি মেমোরিয়াল লাইব্রেরির উপরতলায় আনুষ্ঠানিকভাবে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হয়। এতে মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্যকর্মী চিত্রভানু ভৌমিক। সঙ্গে ছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ বিশ্বতোষ চৌধুরী, অধ্যাপক পরিতোষ চন্দ্র দত্ত সহ বিভিন্ন সিনেমাপ্রেমীরা।
যে স্ক্রিনে সিনেমা দেখানো হবে সেটা ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন মুখ্য অতিথি চিত্রভানু ভৌমিক। তিনি বলেন, “লকডাউনে সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ সিনেমার মাধ্যমে নিজেদের মানসিক শান্তি খুঁজে পেয়েছেন। এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সিনেমা দেখা আগের থেকে অনেক বেশি সহজ হয়েছে, এমনকি কিছু কিছু সিনেমা সরাসরি অনলাইন প্লাটফর্মে রিলিজ হয়েছে। আমি একটি লেবানিজ ভাষার সিনেমা দেখছিলাম যেখানে একটি রিফিউজি ছেলের গল্প বলা হচ্ছে, একসময় মনে হয়েছিল এটা তো বরাক উপত্যকার বাঙালিরই গল্প। এমন আরও অনেক দেশের অনেক ভাষার সিনেমা দেখেছি যার সঙ্গে নিজের অস্তিত্বের টান খুজে পেয়েছি। আমরা পরিকাঠামোগত ভাবে এতটাই পিছিয়ে রয়েছি যেখান থেকে সিনেমা বানানোর কথা ভাবাও বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের অঞ্চলে প্রতিভার অভাব নেই, আমি বিশ্বাস করি সুযোগ পেলে বরাক উপত্যকার কোনও যুবক বা যুবতী এমন সিনেমা বানাতে পারে যা দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবে স্থান পাওয়ার যোগ্য। আমাদের গল্প হয়তো বিদেশের কোনও মানুষ দেখে তার সঙ্গে নিজের অবস্থার মিল খুঁজে পেতে পারেন, কারণ সিনেমার ভাষা ইউনিভার্সেল।”
তিনি আয়োজকদের সাধুবাদ জানান দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে শিলচর শহরে দাঁড়িয়ে চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করার জন্য।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে রত্নদ্বীপ বলেন, “লকডাউনের পর যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, আমরা পরিকল্পনা করছিলাম এইবছর ছোট করে হলেও চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন করব। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আজ আমরা এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি যেখানে সিনেমা দেখানো সম্ভব হচ্ছে। হয়তো লকডাউন এরপর রাজ্যে এটি প্রথম চলচ্চিত্র উৎসব।”
পাঁচদিনের ছবির তালিকা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিন সন্ধ্যা ৬ টায় সত্যজিৎ রায়ের অভিযান দেখানো হবে, এরপর পর্তুগিজ ভাষার সিনেমা ‘এয়ারকন্ডিশনার’ প্রদর্শিত হবে। ৬ জানুয়ারি বুধবার দুপুর দুটোয় রয়েছে কন্নড় সিনেমা ‘নয়ী নরেলু’, ৪টে ২০ মিনিটে রয়েছে প্রয়াত কোরিয়ান নির্দেশক কিম কি দুকের ‘স্প্রিং, সামার, ফল, উইন্টার অ্যান্ড স্প্রিং’, ৬ টা ১০ মিনিটে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের তোপ, ৭ টা ৪৫ মিনিটে হাঙ্গেরীয়ান সিনেমা দ্যা বডি অন্ড সৌল’ দেখানো হবে।
৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর দুটোয় রয়েছে পাঞ্জাবি সিনেমা ‘চৌথি কুট’, ৪টা ৫মিনিটে ‘কিম কি দুক রেট্রো’পর্যায়ে দেখানো হবে ‘থ্রী আয়রন’, ৫টা ৪৫মিনিটে ‘সত্যজিৎ রায় রেট্রো’ পর্যায়ে দেখানো হবে চারুলতা, ৭টা ৫০মিনিটে মেক্সিকোর স্প্যানিশ ভাষার সিনেমা ‘বিয়ন্ড দ্য মাউন্টেন’ দেখানো হবে।
৮ জানুয়ারী শুক্রবার দুপুর ১২ টায় দেখানো হবে মালায়ালাম সিনেমা ‘ডার্কনেস’, ১টা ২৫ মিনিটে কোরিয়ান সিনেমা ‘আরিরাং’, বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা, বিষয় হচ্ছে ‘জার্নি অফ ইস্ট এসিয়ান নিউ ওয়েভ সিনেমা’, সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় দেখানো হবে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের হিন্দি সিনেমা ‘আনোয়ার কা আজব কিসসা’, ৭টা ৪৬ মিনিটে সার্বিয়ান ভাষার সিনেমা ‘দা লোড’ দেখানো হবে।
৯ জানুয়ারী শনিবার দুপুর ১২ টায় রয়েছে ফিলিপিন্সের ‘উওমেন অফ দ্য উইপিং ওয়াটার’, দুপুর দুটোয় মনোজ বাজপেয়ীর ‘গলি গুলাইয়া’, বিকেল ৪টায় আলোচনা সভা, বিষয় হচ্ছে ‘চেঞ্জিং ফেইসেস অব ইন্ডিয়ান প্যারালাল সিনেমা’। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় সত্যজিৎ রায়ের ‘ঘরে বাইরে’ এবং ৭ টা ৪৫ মিনিটে ইটালিয়ান সিনেমা ‘শোসাইন’ দেখানো হবে।
শেষের দিন অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি রবিবার দুপুর ১২টায় রয়েছে অস্কার পুরস্কার প্রাপ্ত ফ্রান্সের ‘দা সেলসম্যান’, দুপুর ২টো ১০ মিনিটে রয়েছে বাংলাদেশের ছবি ‘আলফা’, বিকেল চারটায় ক্যুইজ কম্পিটিশন, বিষয় হচ্ছে ‘সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে নারী-পুরুষের আন্তঃসম্পর্ক’, সন্ধ্যা ৬টায় আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্তের ‘আসা যাওয়ার মাঝে’ এবং সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ মিনিটে সুইডেনের সিনেমা ‘ম্যাজিশিয়ান’ দেখানোর মাধ্যমে চলচ্চিত্র উৎসব সমাপ্ত হবে।
Comments are closed.