Also read in

২৭ বছরের মিউনিসিপাল কর্মী সায়ন দাসের আকস্মিক মৃত্যু; পরিবার বলছে, "মাঝরাতে মেডিক্যালের এক গেট থেকে আরেক গেটে ঘুরেও বাঁচানো যায়নি"

বৃহস্পতিবার মাঝরাতে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় বিলপাড়ের ২৭ বছর বয়সের সায়ন দাস (সানি)-র। পরিবারের তরফে বলা হয়েছে, হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় তাকে প্রথমে সিভিল হাসপাতালে এবং পরে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মেডিক্যালে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয় এবং বলা হয় তিনি কোভিড পজিটিভ। পরিবারের সদস্যদের সোয়াব স্যাম্পল সংগ্রহ করা হবে বলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়। এদিকে মৃতদেহ পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

তার ভাই সম্রাট দাস জানিয়েছেন, “বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তার খানিকটা জ্বর ছিল, তবু স্বাভাবিক দিন কাটিয়েছে। রাত নয়টা নাগাদ হঠাৎ শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং মাথা ঘোরায়। প্রাথমিকভাবে ঘরে কিছুটা চিকিৎসার চেষ্টা করার পর সাড়ে দশটা নাগাদ আমরা সিদ্ধান্ত নিই, তাকে সিভিল হাসপাতাল নিয়ে যাব। সে নিজে থেকে তৈরি হয় এবং অটোতে উঠে হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রাস্তায় তার স্বাস্থ্যের অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকে। সিভিলে আধঘন্টা পর্যন্ত আমাদের বসিয়ে রেখে বলা হয় আমরা যেন তাকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চলে যাই। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাকে যখন নিয়ে যাই, ততক্ষনে সে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। সেখানে ইমারজেন্সি ওয়ার্ডে নিয়ে যেতেই স্বাস্থ্যকর্মীরা চিৎকার করে বললেন, কোভিড জোনে পরীক্ষা করিয়ে তাকে নিয়ে আসতে। কোভিড জোনে যেতেই বলা হলো, আপনারা ওপিডির দিকে যান। সেদিকে যাওয়ার পর গেট রক্ষকরা বললেন এদিকে কেন এসেছেন? অনেক ঘুরাঘুরির পর চিকিৎসকদের দেখা মিললেও তারা চিকিৎসা করলেন না। একটা ঘরে আমার দাদার অচেতন দেহটি রেখে দিয়ে আমাদের বললেন তার কাছাকাছি না যেতে। একজন শাসিয়ে বললেন, যদি আপনারা তার কাছাকাছি যান এবং আপনাদের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়, তার দায় কিন্তু আমরা নেব না। তখন আমরা জানলাম সায়নের শরীরে করোনা সংক্রমণ ছিল। এর কিছুক্ষণ পরই বলা হল, সায়ন দাস আর বেঁচে নেই এবং তার শরীরে করোনা সংক্রমণ রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের পরীক্ষা করতে হবে। আরও কয়েক ঘন্টা আমরা পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকলাম। সঙ্গে মা রয়েছেন, এদিকে ভোর হয়ে আসছে, তার শরীরের অবস্থা ভালো নয়। আর মৃতদেহ এত সহজে আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে। ফলে মাকে নিয়ে বাড়ি চলে এলাম। মামা সেখানে ছিলেন, তার স্যাম্পল সংগ্রহ করা হলো এবং পরে জানানো হলো তিনি নিগেটিভ। পাশাপাশি এটাও বলা হয় তার নাকি পোস্টমর্টেম করা হবে।”

এলাকার প্রাক্তন পুরো কমিশনার রঞ্জন রায় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পুরো স্বাস্থ্য বিভাগের দিকে এব্যাপারে আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, “মাঝরাতে এক অচেতন রোগীকে সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর আধঘন্টা ফেলে রেখে বলা হলো আপনারা শিলচর মেডিক্যাল কলেজে চলে যান। মেডিক্যাল কলেজে তার চিকিৎসা করলেন না ডাক্তাররা এবং অসময়ে এক তরুণ প্রতিভাকে আমরা হারালাম। এর দায় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিতে হবে। এরকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে যে ব্যবহার করছেন সেটা আমরা কিছুতেই মেনে নেবো না।”

তিনি জানান, এলাকায় শিলচর পুরসভার টেক্স কালেক্টর হিসেবে কাজ করতো সায়ন দাস। তিনি বলেন, “যদিও কন্ট্রাকচুয়াল কাজ, কিন্তু অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে তার দায়িত্ব পালন করেছে। এরকম একটি তরুণ চিকিৎসা বিভাগের দোষে প্রাণ হারাবে, এটা দুঃখজনক। অতীতে সায়ন্তন চক্রবর্তীর মত তরুণকে আমরা হারিয়েছি। মনে হচ্ছে এই ধারা বন্ধ হওয়ার নয়।”

শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সায়ন দাসকে মৃত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। একই কথা বলেন সিভিল হাসপাতালে সুপার জিতেন সিং। তবে এখানে কথা হচ্ছে, যদি সিভিল হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়ে থাকে, তবে কেন এম্বুলেন্সে করে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলো? এর উত্তরে জিতেন সিং বলেন, “তাঁর মৃত্যুর পর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার অধিকার শুধুমাত্র শিলচর মেডিক্যাল কলেজের রয়েছে, তাই তাকে সেখানেই পাঠানো হয়েছে।”

মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখন সায়ন দাসের মৃতদেহের পোস্টমর্টেম প্রক্রিয়া চলছে। তবে এর আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত কোনও ব্যক্তির পোস্টমর্টেম করা হয়নি। এব্যাপারে হাসপাতালের বয়ান, “তাকে যেহেতু মৃত অবস্থায় বাইরে থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে এক্ষেত্রে পোস্টমর্টেম করাটাই স্বাভাবিক। তার সোয়াব স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে এবং পরিবারকে যথারীতি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলেই তার মৃত্যুর কারণ জনসমক্ষে আসবে।”

পরিবারের সদস্যদের এখন সোয়াব স্যাম্পল সংগ্রহ এবং পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলছে। জানানো হয়েছে কোভিড নিয়ম মেনে শিলচর শ্মশানঘাটেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তবে পরিবারের লোকেরা মনে করেন, সময়মতো তার চিকিৎসা হলে হয়তো এভাবে অকালে চলে যেতে হতো না বছর ২৭-য়ের সায়ন দাসকে।

Comments are closed.

error: Content is protected !!