কোভিড পরীক্ষা এড়াতে বিমানবন্দর থেকে পালিয়ে গেলেন ৩০০ যাত্রী, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করছে প্রশাসন, প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হবে
গতকাল কাছাড় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল বিমানবন্দরে আসা প্রত্যেক যাত্রীকে কোভিড পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং তার জন্য তাদের অতিরিক্ত ৫০০ টাকা মাশুল দিতে হবে। যেহেতু শিলচর বিমানবন্দর আকারে ছোট এবং সেখানে ঘনঘন বিমান অবতরণ করে, স্বাস্থ্য বিভাগ সিদ্ধান্ত নেয়, পার্শ্ববর্তী টিকল চা বাগানের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রত্যেক যাত্রীকে নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানেই তাদের প্রথমে রেপিড এন্টিজেন টেস্ট হবে এবং পরে আরটিপিসিআর পরীক্ষা হবে। তবে শুধুমাত্র উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর বাইরে থেকে আসা যাত্রীদের জন্য এই নিয়ম রয়েছে। দিল্লি, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর এবং কলকাতা মিলিয়ে বাইরে থেকে প্রায় ছয়শোর বেশি যাত্রী বুধবার শিলচর আসেন এবং কথা অনুযায়ী তাদের নির্ধারিত বাসে বসিয়ে টিকল চা-বাগানের সরকারি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। তবে এতে প্রতিবাদ করেন অনেক যাত্রী এবং ধীরে ধীরে তারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না ঢুকেই বাড়ি চলে যান। বেশ কয়েকটি বিমানের যাত্রী একই ব্যবহার করেন এবং শেষমেষ দেখা যায় প্রায় ৩০০ জন পরীক্ষা না করিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকিদের পরীক্ষা হয় এবং এতে ছয় জন করোনা আক্রান্ত সনাক্ত হন।
এটা অবশ্যই বড় চিন্তার কারণ, কেননা বুধবার শিলচরে আসা অর্ধেকের কম বিমানযাত্রীর পরীক্ষায় যদি ৬ জন পজিটিভ হয়ে থাকেন, তাহলে পালিয়ে যাওয়া ৩০০ মধ্যে অনেকেই পজিটিভ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া এভাবে পরীক্ষা না করিয়ে বিমানবন্দর থেকে চলে যাওয়া সরাসরি কোভিড প্রটোকল লঙ্ঘন, তাই তাদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাব নিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রত্যেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইপিসি ১৮০ ধারা এবং ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের একটি মামলা দায়ের করা হবে। তাদের খুঁজে বের করা হবে এবং প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হতে পারে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সত্যওয়ান বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে কথাগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের জারি করা নির্দেশ অনুযায়ী আমরা প্রত্যেক ব্যক্তির পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা করেছি। বিমানবন্দর থেকে বেরোনোর পর তাদের সুরক্ষিত ভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য এএসটিসি বাস রাখা হয়েছিল। প্রথমে অনেকেই বাসে উঠতে রাজি হননি এবং আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তবে বিমানবন্দরে চারজন পুলিশ আধিকারিক ছিলেন তাদের সাহায্যে যাত্রীদের বাসে উঠানো হয়। বাস যখন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছাকাছি পৌঁছে যাত্রীরা আবার গোলমাল শুরু করেন এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গেটের সামনেই বাস থেকে নেমে চলে যেতে শুরু করেন। কেউ কেউ আমাদের স্বাস্থ্য কর্মীদের উপর হাত তুলেছেন। তারা অনেক বাধা দিলেও এর থেকে বেশি কিছু করার ছিল না। তবে বিমানযাত্রীর এক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে তারা টিকিট নেওয়ার সময় নিজেদের সম্পূর্ণ তথ্য দিতে বাধ্য থাকেন। আমরা বিমানবন্দরের কাছ থেকে সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে নিয়েছি, তার উপর ভিত্তি করে প্রত্যেক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা হবে এবং তাদের নামে এজাহার দায়ের করা হবে। কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমাদের শত্রুতা নেই, তবে কোভিড নিয়ম লঙ্ঘন করার বিরুদ্ধে একটা কঠোর পদক্ষেপ না নিলে আগামীতে অন্য যাত্রীরা একই পথ অবলম্বন করতে পারেন। এই কথা ভেবেই আমরা এতটা কঠোর হচ্ছি।”
সুমিত সত্যওয়ান আরও বলেন, “বুধবার ৭টি বিমানে ৬৯০ জন যাত্রী শিলচরে ফিরেছেন। এরমধ্যে ১৮৯ জন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছেন এবং ৪৬ জনের পরীক্ষার রুটিন হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী যাত্রীদের প্রথমে রেপিড এন্টিজেন টেস্ট পরীক্ষা করা হবে, এতে পজিটিভ হলে হাসপাতালে বা বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যাদের রেজাল্ট নেগেটিভ হবে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে আরটিপিসিআর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং সে ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা দিতে হবে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন হঠাৎ করে এই নিয়ম কেন? আমাদের আধিকারিকরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন রাজ্য সরকার নতুন করে নিয়ম জারি করেছেন, এতে আমাদের কিছু করার নেই। তারা বিমানে যাত্রা করার আগে এসব ব্যাপারে একটু খবর নিতে পারতেন।”
Comments are closed.