মেডিক্যালে ৫৭-দিনের শিশুর মৃত্যু নিয়ে রহস্য, পরিবারের অভিযোগ ডাক্তাররা মারধর করেছেন, "পুলিশের তদন্তে আসল সত্য বেরোবে", বললেন অধ্যক্ষ
শনিবার রাতে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক ৫৭-দিনের শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং একে ঘিরে এক রহস্যময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, প্রথমে অক্সিজেন পর্যাপ্ত পরিমাণে দেওয়া হয়নি এবং শিশুকে মরণাপন্ন অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতিবাদ করলে জুনিয়র ডাক্তাররা দলবেঁধে তাদের মারধর করেছেন। এমনকি তাদের হাসপাতালে আটকে রেখে লাগাতার হেনস্থা করা হয়েছে এবং সেটা ভিডিও বানানো হয়েছে। ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা শারীরিক এবং মানসিকভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া জানিয়েছেন, ঘটনার পর্যাপ্ত তদন্ত হবে এবং সব দিক বিবেচনা করেই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে মাঝরাতে হাসপাতালে দলবেঁধে পরিবারের সদস্যদের এভাবে চলে আসাটা ঠিক হয়নি। যদি ডাক্তাররা কোনও অন্যায় করে থাকেন তাহলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত ছিল পরিবারের। এই দুঃসময়ে এমন ঘটনা হলে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের ওপর প্রভাব পড়তে পারে, এতে অন্যান্য পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
হাসপাতালের তরফে যদিও বলা হচ্ছে রোগীর পরিবার শিশুকে মাঝরাতে ডিসচার্জ করিয়ে নিয়ে গেছিলেন, তবে ডিসচার্জ পেপারে পরিবারের কোনও সদস্যের স্বাক্ষর নেই। এর থেকে রহস্যজনক হচ্ছে, যে ব্যক্তি ডিসচার্জ ফিলআপ করেছেন তার হাতের লেখা একটি স্বাক্ষর রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ‘লিলি বেগম’ নামে এক মহিলা শিশুর মা এবং তিনি দায়িত্ব নিয়ে ডিসচার্জ নিচ্ছেন। পরিবারের তরফে বলা হয়েছে শিশুর মায়ের নাম মাসুমা বেগম, এবং তিনি ডিসচার্জ ফর্মে স্বাক্ষর করেননি।
মাসুমা বেগম জানিয়েছেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিল তার কন্যা। সেখানে তার অক্সিজেনের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু হাসপাতালে অক্সিজেন দেওয়ার মেশিন ঠিকঠাক কাজ করছিল না। প্রতি কুড়ি মিনিটে একবার সেটা বন্ধ হয়ে যেত এবং নার্সদের ডেকে আবার চালু করতে হতো। শনিবার রাতে অক্সিজেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বেশ কয়েকবার ডাকাডাকির পরেও নার্স বা কোনও চিকিৎসক আসেননি। নিজের শিশু মরণাপন্ন দেখে তার বাবা রেগে যান এবং কর্তব্যরত ডাক্তারদের জোর দিয়ে বলেন, তারা যাতে অক্সিজেন চালু করেন। এতে জুনিয়র ডাক্তাররা পাল্টা সরব হন এবং ধীরে ধীরে অন্যান্য বিভাগ থেকে ডাক্তাররা জমায়েত হতে শুরু করেন। এদিকে ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা তৎক্ষণাৎ একটি ডিসচার্জ ফর্ম বানিয়ে পরিবারের হাতে তুলে ধরেন এবং বলেন শিশুটিকে নিয়ে যাও। শিশুর মা বারবার বলছিলেন এভাবে নিয়ে গেলে তাকে বাচাঁনো যাবে না, কিন্তু ডাক্তাররা শোনেননি। জোর করে তারা চিকিৎসাধীন শিশুকে বের করে দেন এবং কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যু হয়। এতে পরিবারের সদস্যরা প্রতিবাদ করতে গেলে ডাক্তাররা দলবদ্ধভাবে তাদের মারধর করেন আটকে রাখেন এবং সেটা ভিডিও করেন।
শিশুর বাবা শরীফ আহমেদ লস্কর ঘটনার বৃত্তান্ত তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, “বারবার বলা সত্ত্বেও তারা আমার শিশুকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রদান করেননি। আমরা প্রতিবাদ করায় জোর করে বের করে দিয়েছেন এবং শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এরপর দলবদ্ধভাবে আমাদের মারধর করেছেন, আটকে রেখেছেন এবং সেটা ভিডিও করেছেন। আমাদের মারধর করলে আমরা ততটা আঘাত পেতাম না, যতটা জোর করে আমার সন্তানকে মেরে ফেলায় হয়েছে। চিকিৎসকরা এতটা অমানবিক কি করে হতে পারেন নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। তবে আমরা চাই ঘটনার তদন্ত হোক এবং যারা ভুল করেছেন তাদের খুঁজে বের করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো মা-বাবাকে এভাবে নিজের সন্তানকে হারাতে না হয়।”
রবিবার অতিরিক্ত পুলিশসুপার পার্থ প্রতিম শইকীয়া এবং সদর থানার ওসি দিতুমনি গোস্বামীর নেতৃত্বে একটি দল শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিদর্শন করেছে এবং সেখানে কর্মরত ডাক্তার স্বাস্থ্যকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। অতিরিক্ত পুলিশসুপার জানিয়েছেন দুই পক্ষের বয়ান নেওয়া হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্তের পর পুলিশের তরফে পর্যাপ্ত তথ্য জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে।
Comments are closed.