
শিলচর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন পঞ্চাশ শতাংশ করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন
বরাক উপত্যকার একমাত্র শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এতদিন করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছিল। সম্প্রতি হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জে স্থানীয় আক্রান্তদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজে এখন পর্যন্ত মোট ১৩৩ জন আক্রান্ত ব্যক্তি ভর্তি হয়েছেন। একজনের মৃত্যু হয়েছে, ৬৬ জন সুস্থ হয়ে মুক্তি পেয়েছেন এবং ৬৬ জন ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার মানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা পঞ্চাশ শতাংশ ব্যক্তিই সুস্থ হয়েছেন, এটি হাসপাতালের জন্য অনন্য নজির। এর মানে, যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের এবং তাদের পরিবারের বা আশেপাশের লোকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে, তবে অকারণে আতঙ্কিত হওয়া এবং আতঙ্ক ছড়ানোর প্রয়োজন পড়ছে না।
গত সোমবার ১০ এবং মঙ্গলবার ১৮ জন আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ ঘোষণা করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে আজমির শরিফ থেকে বাসে আসা এক যাত্রী ছিলেন। কন্টাক্ট ট্রেসিং ছাড়া আক্রান্ত হওয়া তারাপুরের ৬৫ বছরের অর্চনা নন্দী এবং বদরপুরের খলিলুর রহমানও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়া দুই বছর এবং সাত বছরের দুটি শিশু সুস্থ হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এগুলো অবশ্যই সুখবর।
মঙ্গলবার ১৮ জন রোগীকে সুস্থ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে, এগারো জন কাছাড় জেলার, ছয় জন করিমগঞ্জ জেলার এবং একজন ত্রিপুরার বাসিন্দা। মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন একরাম আলি (৭০), জাবির হোসেন (১৮), ফারুক আহমেদ লস্কর (২০), হেফজুর রহমান (২৯), আলী হায়দার (২২), আব্দুল রহমান (৬২), বাবলি আচার্য (৪০), মসরূর আহমেদ (১৮), তাহের আহমেদ লস্কর (২৪), মিটন দেবনাথ (৩০), দেবু দাস (২৩), সাজন সিং ছেত্রী (২৬), শাহজাহান কাদিন (১৯), পরম সিংহ (২৩), নাজির উদ্দিন (২৭), আলমগীর সুলতান (১৮), দীরজ কুমার জৈন (৩৬) এবং সাহিল আহমেদ বড়ভূইয়া (২০)।
বুধবারে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির নাম আফজল হোসেন, তার বাড়ি জিরিবামে। উত্তর-পূর্বের বাইরে থেকে ফিরে নিজের রাজ্যে না গিয়ে কাছাড়ে নেমে পড়েন তিনি। স্বাস্থ্য বিভাগ তাকে কোয়ারান্টিনে পাঠায় এবং তার সোয়াব স্যাম্পল পরীক্ষায় পজিটিভ ধরা পড়ে
হাসপাতালে সোয়াব স্যাম্পলের সংখ্যা মঙ্গলবারই দশ হাজারের মাত্রা ছাড়িয়েছিল, বুধবারে এটি দাঁড়িয়েছে ১১, ৩২৬য়ে। এর ফলে এটা বলা সম্ভব যে বরাক উপত্যকায় প্রত্যেক এক লক্ষ মানুষের মধ্যে ৪০০ জনের স্যাম্পল পরীক্ষা হয়েছে। যদিও ডিমা হাসাও, মিজোরাম এবং মনিপুর থেকেও অনেক স্যাম্পল শিলচর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছিল।
হাসপাতালের অধ্যক্ষ বাবুল বেজবরুয়া জানিয়েছেন, মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে হাসপাতালে স্যাম্পল পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। পুনের এনআইভির অনুমতি পাওয়ার পর এখানেই স্যাম্পল’র পরীক্ষা হয়েছে এবং যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তীতে উত্তর-পূর্বের বাইরে থেকে যাত্রীরা ফিরতে শুরু করেছেন, এতে স্যাম্পল সংগ্রহের মাত্রা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথমে একটি মেশিনের মাধ্যমে কাজটি হচ্ছিল, পরবর্তীতে অসম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেকটি মেশিন নিয়ে আসা হয়েছে। কোন কোন দিন প্রায় হাজারের কাছাকাছি স্যাম্পল সংগ্রহ হয়েছে। বুধবার ৪৪১টি স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়েছে যা হাসপাতালের কাছে একটি রেকর্ড। প্রায় দুই মাসে ১১ হাজার স্যাম্পল পরীক্ষা করেও নজির গড়েছে হাসপাতালটি। বুধবার ৫২৪টি স্যাম্পল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। একসময় দিনে প্রায় এক হাজারের কাছাকাছি স্যাম্পল এখানে এসেছে। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসকরা ২৪ ঘন্টা পরিশ্রম করে এত বিশাল কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছেন।
Comments are closed.