Also read in

রোদ কিংবা বৃষ্টি- সাইকেল চেপে ৭-কিমি: মাধ্যমিকের চতুর্থ হওয়া কাছাড়ের সিনাম জাইফাবি চানুর উত্তরণের কাহিনী

২২শে মে সকালেই শিলচর তথা বরাক উপত্যকার জনগণ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে কারণ শিলচরের তিনজন এবং করিমগঞ্জের একজন ছাত্রী সেরা দশ-এর মেধা তালিকায় স্থান  পেয়েছে। আসামের মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (SEBA) উচ্চ বিদ্যালয় ত্যাগের শংসাপত্রের ফলাফল ঘোষণা করেছে। তবে বরাক উপত্যকার এই চারজনের মধ্যে শীর্ষস্থান পেয়েছে কাবুগঞ্জ হোলিক্রস স্কুলের সিনাম জাইফাবি চানু, সে ৬০০’র মধ্যে ৫৯১ নম্বর পেয়েছেন।

বরাক উপত্যকার বাসিন্দারা শিলচরের সোনাই রোডে অবস্থিত বিখ্যাত হোলিক্রস স্কুলের কথা উল্লেখ করে “হোলি ক্রস ও ইবার দুইটা স্ট্যান্ড” শেয়ার করেছেন। কিন্তু চানু একটি ভিন্ন হোলি ক্রসে পড়াশোনা করেছে- কাবুগঞ্জের কম পরিচিত হোলিক্রস স্কুলে। খ্রিস্টান মিশনারি এই স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রথমবারের মতো একজন র‌্যাঙ্কহোল্ডার পেলো।

চানু সোনাই বিধানসভা কেন্দ্রের চানপুর জিপির বাসিন্দা। এলাকাটি এতটাই অভ্যন্তরে, যে বরাক বুলেটিনের প্রতিবেদকের তার বাসভবনে পৌঁছাতে এক ঘণ্টার ও বেশি সময় লেগেছিল। নদীর ধারে কাঁচা রাস্তা দিয়ে ও নৌকা করে প্রতিবেদক যখন তার বাড়িতে পৌঁছায়, তখন সে বুঝতে পারে, চানুর কাহিনী শুধু ৫৯১ মার্কের নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি ।

তার ছোট ভাইও সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে স্কুলে যায়। তার মা একজন গৃহিণী এবং তার বাবা তার ট্রাক ভাড়া দিয়ে সংসার চালান। চানু প্রতিদিন সাত কিলোমিটার সাইকেলে চড়ে রোদ-বৃষ্টি- ঝড়ে স্কুলে পৌঁছায়।

চানু যোগ করেছে যে, সে কখনই প্রাইভেট টিউশনে ভর্তি হয়নি। বাড়িতে কঠোর অধ্যয়ন করেছে সে। সকালে সে মেডিটেশন (ধ্যান) করত এবং প্রতি সন্ধ্যায় নিয়ম করে দৌড়াতে যেতো।

“পরীক্ষার ঠিক আগে, আমি প্রায় ২০ দিনের জন্য কিছু নির্দেশনার জন্য একজন শিক্ষকের কাছে গিয়েছিলাম এবং এটাই একমাত্র প্রাইভেট টিউশন যা আমি অনুসরণ করেছি,” চানু বরাক বুলেটিনের সাথে কথা বলার সময় বলেছিল। এলাকার আনন্দিত প্রতিবেশীরা অবশ্য ভাগ করে নিয়েছে যে পরিবারটি আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং তারা আশঙ্কা করছে যে পরিবারটি উচ্চ শিক্ষার ব্যয় বহন করতে পারবে না।

তার এই খুব সাধারন অবস্থান তাকে প্রতিকূলতার মধ্যে সুযোগ দেখতে সাহায্য করেছিল এবং তাই, সাইকেলে স্কুলে যাওয়া তার কাছে কখনই বাধা ছিল না। ভবিষ্যতে, সে আরও কঠিন পড়াশোনা করতে চায় এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়।

“একবার আমার বাবা ফিরে এলে, আমি তার সাথে কথা বলব এবং ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করব। নিশ্চিতভাবেই আমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই কিন্তু আমি এখনও তা হওয়ার রাস্তাটা বের করতে পারিনি। যদিও এই চলার পথ খুব একটা মসৃণ হবে না তবুও এটা নিশ্চিত করার জন্য আমি প্রস্তুত,” বরাক বুলেটিনের সাথে কথা বলার সময় চানু শেষ করলো।

Comments are closed.