Also read in

৯ মাসের শিশুর মৃত্যুর জন্য মেডিক্যালকে দোষারোপ পরিবারের; "দেরিতে আনা হয়েছে তাই বাঁচানো যায়নি", জানালেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

উধারবন্দের একটি নয় মাসের শিশু ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাকে সোমবার শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছিল। প্রথমে রেপিড এন্টিজেন টেস্ট করে তার নেগেটিভ রিপোর্ট এলে হাসপাতালের শিশু বিভাগে চিকিৎসা শুরু হয়। তবে তার শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছিল, ফলে আইসিইউতে পাঠানো জরুরি হয়ে পড়ে। আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ হওয়ার পর আইসিউতে শিফট করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুর বারোটা নাগাদ স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় কিছুক্ষণ অক্সিজেন খোলা হয়। তবে আইসিইউতে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়।

মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন হাসপাতালে চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীদের ভুলেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তারা সরাসরি দায়িত্বে থাকা নার্সকে জিজ্ঞেস করেন, আপনারা অক্সিজেন খুলে কেন তাকে সিফট্ করাতে গেলেন? এদিকে তাদের কথাবার্তার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, এতে চাঞ্চল্য দেখা দেয়।

শিশুর বাবা অনুপ কুমার দেব আমাদের বলেন, “এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তর করার সময় বেশ কিছুক্ষণ অক্সিজেন খোলা ছিল, এতেই আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। শ্বাসকষ্টৈ ভোগা একটি নয়মাসের শিশুকে এভাবে অক্সিজেন ছাড়া কেন রাখলেন কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মীরা, এটাই আমাদের প্রশ্ন। এতে হাসপাতালের তরফে রোগীদের প্রতি অবহেলার চিত্র আবার প্রকাশ পেয়েছে। আমরা এব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পরিষ্কার জবাব চাইছি। তা না হলে শিশুর মৃত্যুর জন্য তাদেরকেই সরাসরি দায়ী করবো আমরা।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, শিশুটির ফুসফুসের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। হাসপাতালের এক্স-রে রিপোর্টে দেখা গেছে দুটো ফুসফুস প্রায় একশো শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এত ছোট শিশুর শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। তবে অন্যান্য রোগীর পরিবারের মতই এই শিশুটির পরিবারও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে দেরি করেছেন। যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে, তখন তাকে সুস্থ করার খুব একটা রাস্তা ছিল না। তবু সব ধরনের পরীক্ষা করিয়ে তাকে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। আমাদের চিকিৎসকরা যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন, যেকোনও ব্যক্তির মৃত্যু আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। হাসপাতালের প্রত্যেক ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেন, যাতে রোগীকে সুস্থ করা যায়। সাধারন ওয়ার্ড থেকে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়ায় হয়তো দু-তিন মিনিট সময় লেগেছে, এই সময় অক্সিজেন খোলায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে, এটা বলা ভুল। আমরা রিপোর্টে দেখেছি পুরো ফুসফুস সাদা হয়ে গেছিল। তাই অযথা দোষারোপ করার কোন মানে হয় না।”

অতীতে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগে মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের নানান অভিযোগ শোনা গেছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে হাসপাতালের দোষ ছিল, আবার কিছু ক্ষেত্রে অনেক চেষ্টার পরও রোগীকে বাঁচানো যায়নি। এই দুঃসময়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। অবশ্যই তাদের ত্রুটিগুলো নিয়ে সাধারন মানুষ সোচ্চার হয়েছেন এবং কর্তৃপক্ষ সেগুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই ঘটনার ক্ষেত্রেও দুই পক্ষের অভিযোগ এবং সাফাই বিচারযোগ্য। এবার সময় বলে দেবে আদৌ চিকিৎসকদের গাফিলতিতে শিশুর মৃত্যু হয়েছিল কিনা।

Comments are closed.

error: Content is protected !!