Also read in

সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯১ বছরের সিন্ধু রানী মিত্র, এখনও খুঁজে ফেরেন তার ছেলে 'নাড়ু'কে

প্রায় দুই সপ্তাহ আগে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জানিগঞ্জের ব্যবসায়ী নারায়ন মিত্রকে। সেখানে তার মৃত্যু হয় এবং মৃত্যুর পর শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর পরিবারের বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হন, এরমধ্যে ছিলেন তার ৯১ বছর বয়সের মা সিন্ধু রানী মিত্র। তাকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। এই বয়সেও করোনা ভাইরাসকে পরাজিত করে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। তবে এখনও ছেলের মৃত্যু সংবাদ তাকে দেওয়া হয়নি। মারণ ভাইরাসকে হারাতে পারলেও ছেলের মৃত্যু সংবাদ কতটুকু সহ্য করতে পারবেন, এটাই পরিবারের কাছে এখন সবথেকে বড় চিন্তা। বাড়িতে ফিরে তার ছেলে ‘নাড়ু’ অর্থাৎ নারায়ন মিত্রকে চারিদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি।

সিপিআই(এম) নেতা দুলাল মিত্রের মা সিন্ধু রানী মিত্র বরাক উপত্যকার সব থেকে বয়স্ক করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি। তিনি ছাড়াও পরিবারের আরও কয়েকজন পজিটিভ হয়েছিলেন। প্রায় প্রত্যেকেই শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর মধ্যে ছিল তাদের পরিবারের চার বছরের একটি শিশু। পরিবারের দুই মহিলা সদস্যকে সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এমন দুর্দিনেও ভেঙে পড়েননি ৯১ বছর বয়সের সিন্ধু রানী।

তাকে ছেলের মৃত্যু সংবাদ দেওয়া না হলেও মাঝেমাঝেই ছেলের নাম করে তিনি কাঁদছেন, এমনটাই জানিয়েছেন নারায়ন মিত্রের ছোট ভাই দুলাল মিত্র। তিনি বলেন, “মা বরাবরই খুব শক্ত মনের মহিলা। এই বয়সে যখন শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার কথা জানানো হলো তিনি কিন্তু ঘাবড়ে যান নি। নিজে পায়ে হেঁটে এসে এম্বুলেন্সে উঠলেন, হাসপাতালে গেলেন, চিকিৎসাধীন থাকলেন, সুস্থ হলেন এবং বাড়ি ফিরলেন। আমাদের সাহস হয়নি তার কাছে ছেলের মৃত্যু সংবাদ তুলে ধরার। তবে লক্ষ্য করি, মাঝে মাঝে ছেলের নাম ধরে কাঁদতে থাকেন, সেটা শুধু নীরব কান্না, চোখ দিয়ে জল ঝরে।

“আমার দাদাকে তিনি আদর করে নাড়ু ডাকতেন। ১৬ জুলাই দাদার মৃত্যু হয়, এরপর জানা যায় তিনি করোনা ভাইরাসে
আক্রান্ত ছিলেন। তার মৃতদেহ প্লাস্টিকে মুড়ে ডিমাহাছাও সীমান্তসংলগ্ন কোনও একটা জঙ্গলে শেষকৃত্যের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের পরিবারের প্রত্যেকের সোয়াব স্যাম্পল সংগ্রহ করে পরীক্ষা হয়। কয়েকজনের পজিটিভ আসে এবং তাদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। দাদার শেষকৃত্যে আমরা কেউই যোগ দিতে পারিনি। পরিবারের সদস্যরা প্রায় ১০-১২ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন, ফলে পারিবারিক নিয়মে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানও পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে তার শেষ কাজের কোনও কিছুই মায়ের সামনে করা হয়নি। মা এখনও মনে করছেন তার ছেলে কোথাও গেছে এবং ফিরে আসবে। অপেক্ষা করেন, মাঝে মাঝে নাড়ু বলে ডাকেন, আমাদের জিজ্ঞেস করেন তার ছেলে কোথায়।”

Comments are closed.