ডাকাতি নয়, ব্যাঙ্কের বেহাল পরিষেবায় বিরক্ত হয়েই এই হামলা
গতকাল শিলচর তারাপুরে ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার শাখায় হামলা চালানোর ঘটনা কোন ব্যাঙ্ক ডাকাতি বা টাকা লুঠ করার উদ্দেশ্যে নয়। দিন দুপুরে দা, শাবল নিয়ে ব্যাঙ্কে হামলার ঘটনা নিছকই দুর্বল গ্রাহক পরিষেবা, এমনটাই ব্যক্ত করল দয়াময় দাস। তার কথামতো দিনের পর দিন ব্যাঙ্ক কর্মীদের হয়রানিতে নিজের মাথা বিগড়ে যাওয়ায় এদিন সে এভাবে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে অভিযুক্ত দয়াময় জানিয়েছে, ব্যাঙ্কের হামলার ঘটনায় সে মোটেও অনুতপ্ত নয় । সামান্য ব্যাঙ্ক পাসবুক আপডেট করাতে গেলেও কাউন্টারে কাউন্টারে ঘুরতে হয়। ব্যাংক কর্মচারীরা গ্রাহকদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র তৎপর নন। গ্রাহকদের দাঁড় করিয়ে খুশ গল্প করতে ব্যস্ত থাকেন ব্যাঙ্কের কর্মচারীরা। দীর্ঘ তিন বছর ধরে ওই ব্যাঙ্কে অভিযুক্ত দয়াময় দাসের একাউন্ট থাকলেও দিনের পর দিন কর্মচারীদের দুর্ব্যবহারে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে তার।
এখানে উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকাল দশটা নাগাদ ব্যাঙ্ক খোলার পরই দয়াময় তাঁর পাসবুক আপডেট করাতে যায় । কাউন্টারে কথাবার্তা বলতে বলতে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়ে সে এবং দা, শাবল দিয়ে হামলা শুরু করে। মুহুর্তের মধ্যে এলোপাথাড়ি দায়ের কোপে ব্যাঙ্কের তিনটি কম্পিউটার, প্রিন্টার সহ কাউন্টারের কাঁচ ভেঙ্গে তছনছ হয়ে যায়। পুলিশ উন্মত্ত দয়াময়কে ধরতে গেলে সে পুলিশকের উপর ও পাল্টা হামলায় উদ্যত হয়। তবে পুলিশ কোনোক্রমে তাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। ব্যাঙ্ক কর্মীদের বক্তব্য অনুযায়ী, দয়াময় ব্যাঙ্কে ঢুকে পাসবুক আপডেট করে দিতে বলে তখন ব্যাঙ্ককর্মী তার হাতে থাকা দা ও শাবল দেখে প্রশ্ন করেন, এসব নিয়ে সে কেন ব্যাঙ্কে এসেছে। এতে ক্ষেপে গিয়ে দয়াময় উচ্চবাচ্য শুরু করে, তবে এসবের মধ্যেও ওই ব্যাঙ্ককর্মী আপডেট করতে গিয়ে দেখেন পাসবুকের কিছুটা অংশ ছেড়া – প্রিন্টারে এই পাসবুক ঢুকালে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই দয়াময়কে ছেঁড়া অংশে সেলোটেপ লাগিয়ে আনতে বলা হয়, এতে আরো ক্ষেপে যায় সে। পরিস্থিতি বুঝে ঝামেলা মেটানোর জন্য চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মী নিজেই পাসবুকে সেলোটেপ লাগাতে গেলে দয়াময় কাউন্টারে থাকা ব্যাঙ্ক কর্মীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আঘাতের চেষ্টা করে। কোনক্রমে নিজেকে বাঁচিয়ে বাইরে গিয়ে পুলিশে খবর পাঠান তিনি।
খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ বাহিনী, দয়াময় দাসকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বিকাল চারটা নাগাদ অভিযুক্ত দয়াময় দাসকে আদালতে তোলা হলে আদালতের নির্দেশে তাকে হাজতে পাঠানো হয়। তবে, তার সঠিক ঠিকানা সম্বন্ধে এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। মালিনী বিল অঞ্চলের এক বিশিষ্ট ব্যক্তি আমাদের জানিয়েছেন যে, সে নিশ্চিতভাবেই মালিনী বিল অঞ্চলের বাসিন্দা নয়। পাসবুকে মেহেরপুর অঞ্চলের একটা ঠিকানার উল্লেখ আছে। এই ঘটনার পর দয়াময়ের মানসিক ভারসাম্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনার পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা পুলিশ তদন্ত করছে।
Comments are closed.