Also read in

ভাষা নয়, হিন্দুধর্ম আমাদের আসল পরিচয়, অখিল গগৈর মতো বিভেদকামীদের জেলে পুরে দেওয়া উচিত: বৈশ‍্য

ভাষা আমাদের ভাব বিনিময়ের মাধ্যম মাত্র, এটি আমাদের জাতিগত পরিচয় হতে পারেনা। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের পরিচয় হচ্ছে হিন্দুধর্ম, এবার সময় এসেছে এই কথাটি জোর গলায় বলার। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রত্যেক ভাষাভাষীরা যদি নিজেকে আলাদা করে ভাবতে শুরু করেন, তাহলে আমরা অনেকগুলো ছোট ছোট রাষ্ট্রে পরিণত হবো। অখিল গগৈর মত লোকেরা ভাষাকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছে, তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে জেলে পুরে দেওয়া উচিত। এতে বিভেদকামী শক্তিগুলো প্রতিহত হবে। হিন্দু রাষ্ট্রে বসবাস করি আমরা, আমাদের সব থেকে বড় পরিচয় হিন্দু, এই পরিচয়কে নিয়েই এখন আমাদের চলার সময় এসেছে, এমনটাই বললেন সারা আসাম হিন্দু যুব ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বলেন বৈশ‍্য। সারা আসাম হিন্দু বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন (আভা) ‘পৌষ ভোগালী মিলন মেলা’ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শিলচরে এসে তিনি কথাগুলো সোমবার বলেন।

তার কথায়, ভাষায় যদি মানুষের পরিচয় হত তাহলে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের এভাবে বিতাড়িত হয়ে ভারতে আসতে হতো না। ভাষা একমাত্র আমাদের ভাব বিনিময়ের মাধ্যম এর বেশি কিছু নয়। আমাদের সংস্কৃতি আমাদের ধর্মের উপর ভিত্তি করেই দেশ ভাগ হয়েছিল। এর উপর ভিত্তি করে হিন্দুদের বারবার নির্যাতন করা হয়েছে। আজ সময় এসেছে এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর, বিভেদকামী শক্তিগুলো আমাদের ভাষার নামে আলাদা করে দিতে চাইছে। এসব চক্রান্ত আমাদের বুঝে নিতে হবে এবং এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজেকে হিন্দু বলে প্রমাণ দিতে হবে। এতেই আমাদের সংস্কৃতি বাঁচবে, নাহলে ভবিষ্যতে আমাদেরও আসাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে এবং অন্য কোথাও আমাদের আশ্রয় খুঁজতে হবে।

নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে সম্প্রতি বরাক এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার একাংশ মানুষের মধ্যে যে বিভাজন দেখা দিচ্ছে, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের মাধ্যমেই সেটা কমে আসতে পারে। এই বিশ্বাস নিয়ে সারা আসাম হিন্দু বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন (আভা) ‘পৌষ ভোগালী মিলন মেলা’ নামের দু’দিন ব্যাপী একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাঙালি এবং অসমিয়া সংস্কৃতির খাদ্য, গান এবং বিভিন্ন আচার-আচরণ সব কিছু নিয়ে গান্ধীবাগ প্রাঙ্গণে রবিবার থেকে দুদিনের অনুষ্ঠান হয়।

অনুষ্ঠানে মঞ্চের নাম রাখা হয় ‘হেমাঙ্গ-জ্যোতিপ্রসাদ-কালিকা-ভুপেন’ মঞ্চ। এর মাধ্যমে দুই সংস্কৃতিকে সমানভাবে সম্মান দিয়ে অনুষ্ঠানটি উদযাপন করার চেষ্টা করে সংস্থাটি। এই ধারাকে সামনে রেখেই একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাও রাখা হয়। এতে এই অঞ্চলের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেয়। রবিবার বিকাল তিনটায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। রবিবার ও সোমবার সন্ধ্যায় সামরিক বিষয়গুলো নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনার আয়োজন করা হয়।

সংস্থার সদস্য বাসুদেব শর্মা তাদের উদ্যোগটি নিয়ে বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা এনআরসি ইত্যাদি ইস্যুতে দুই উপত্যকার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে কিছুটা হল মতভেদ দেখা দিয়েছে। আমরা চাইনা এই মতভেদ আরো এগিয়ে যাক। বাঙালি এবং অসমীয়া দুই সংস্কৃতির মধ্যে যে সামঞ্জস্য রয়েছে তাকে তুলে ধরতে আমাদের এই দুদিনের অনুষ্ঠান। এতে থাকবে অসমীয়া ও বাঙালি গান সহ বিভিন্ন খাদ্য এবং আচার-আচরণে আদান-প্রদান। বরাক উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পিঠে পুলি ইত্যাদি আসবে, পাশাপাশি আসবেন মাটির গান গাওয়া শিল্পীরা। একইভাবে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে অনেক শিল্পীকে আমরা আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমরা আশা করছি এই পদক্ষেপটি আগামীতে বাঙালি এবং অসমীয়া সমাজের মধ্যে মেলবন্ধনকে আরো দৃঢ় করতে বিশেষ ভূমিকা নেবে।

Comments are closed.