Also read in

রাজ্য বাজেট : চা জনজাতি, নিম্নবিত্ত এবং পড়ুয়াদের প্রতি বিশেষ নজর

 

আর তিন মাসের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন তাই প্রত্যাশা অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য এক জনমুখী বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। রাজ্যের বৃহৎ সংখ্যক ভোটারদের কথা মাথায় রেখেই পেশ করা হল এই বাজেট। এই বাজেটে চা জনজাতি, নিম্নমধ্যবিত্ত, গরিব জনগণ, কৃষক এবং পড়ুয়াদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ। উপনিষদ থেকে উদ্ধৃত এই মন্ত্রোচ্চারণের মধ্য দিয়ে শুরু করলেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ২০১৯-২০ অর্থ বর্ষের বাজেট। বাজেটের সূচনাতেই অর্থমন্ত্রী জাতি, মাটি, ভেটি’র সুরক্ষার কথা উল্লেখ করেন ‌। ১১৯৩.০৪ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিন কোটি কুড়ি লক্ষ জনতার উন্নয়নের জন্যই এই বাজেট। বাজেটে ১৮টি নতুন প্রকল্পের কথা ঘোষিত হয়েছে এবং পুরনো প্রকল্পগুলোতে সুবিধা আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই ১৮টি প্রকল্পকে মুক্তার মালা হিসেবে আখ্যায়িত করেন অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা।

সুলভ পুষ্টি এবং প্রাপ্তি যোজনা নামের প্রকল্পে বর্তমানে ৩ টাকা প্রতি কিলোগ্রামে দরে যে চাল দেওয়া হচ্ছে তা ১ টাকায় দেওয়া হবে। এক টাকা দরে এই চালের সুবিধা অসমের ৫৭ লাখ লোক আগামী ১লা মার্চ পাবেন

অসমের চা বাগানগুলোতে বিনা মূল্যে চাল সরবরাহ করা হবে, প্রায় ২০ লাখ শ্রমিক এই প্রকল্পে উপকৃত হবে। তাছাড়া প্রতি পরিবারকে প্রতিটি মাসে ২ কেজি চিনি ও দেওয়া হবে। ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে ১০০০০ চা শ্রমিক পরিবারের যুবকদের। চা শ্রমিক পরিবারের কেউ যদি মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে পড়াশোনা করে তবে প্রত্যেক বছরে তাদেরকে ১০,০০০ টাকা দেওয়া হবে। চা বাগানের স্কুলগুলোতেও ইউনিফর্ম সরবরাহ করা হবে। তদুপরি মিড ডে মিলের সাথে সাথে সকালে বিকেলে ও টিফিনের ব্যবস্থা করা হবে।

‘অরুন্ধতী’ নামের এক নতুন প্রকল্প ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী, এর ফলে যাদের বাৎসরিক আয় ৫ লাখ টাকার নিচে তাদের কন্যা সন্তানের বিবাহ উপলক্ষে এক তোলা সোনা দেওয়া হবে, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৩৪ হাজার টাকা। দুটি সন্তানের ক্ষেত্রে এই প্রকল্প প্রযোজ্য হবে। বিবাহ (রেজিস্ট্রি) নথিভুক্ত করার পর এই সোনা দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, বশিষ্ঠ মুনির পত্নী অরুন্ধতীর নামে এই প্রকল্পটি ঘোষণা করা হয়েছে।

শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য প্রকল্প ‘জ্ঞান দীপিকা’ অনুযায়ী দুই লাখ টাকার কম আয় সম্পন্ন পরিবারের সন্তানদের স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের ইউনিফর্ম বাবদ ৬০০ টাকা দেওয়া হবে, নবম ও দশম শ্রেণীর জন্য ৭০০ টাকা দেওয়া হবে।

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্রীদেরকে ব্যাটারী চালিত ইলেকট্রনিক মোটরসাইকেল দেওয়া হবে।

যারা ইতিমধ্যে শিক্ষার জন্য ঋণ (এডুকেশন লোন)গ্রহণ করেছে বা আগামীতে যারা ঋণ গ্রহণ করবে, তাদের জন্য ঐ লোন অ্যাকাউন্টে সরকারের তরফ থেকে ৫০ হাজার টাকা জমা দেওয়া হবে ।

দিনদয়াল দিব‍্যাঙ্গ প্রকল্প অনুযায়ী কামরূপ জেলার বকোতে দিব্যাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।

অনূর্ধ্ব ৪৫ বৎসর বয়সে বিধবা হওয়া মহিলাদের ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। বিধবা মহিলাদের ৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত ২৫০ টাকা করে প্রতি মাসে দেওয়া হবে। দিব‍্যাঙ্গ মহিলাদের প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে দেওয়া হবে।

এরকম বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী। তাছাড়া চলতি প্রকল্পগুলোর সুবিধা ও বৃদ্ধি করার ঘোষণা করেন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।

উল্লেখ্য, এবারের বাজেট পেশ করা হয়েছে ডিজিটাল ফরম‍্যাটে। এর জন্য গতকাল অসম বিধানসভায় বিধায়কদের জন্য একটি বিশেষ প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

Comments are closed.