নির্বাচন জিতে কাছাড় এবং জাগীরোড কাগজ কল পুনরুজ্জীবিত করব: রাহুল গান্ধী
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী আসামে তার নির্বাচনী প্রচার শুরু করলেন। গতকাল গুয়াহাটি খানাপাড়া ভেটেরেনারি স্টেডিয়ামে ভাষণ প্রদানকালে তিনি জানান, তিনি খুবই কনফিডেন্ট যে কংগ্রেস দল আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ওই জনসভায় কংগ্রেস সভাপতির ভাষণ শুনতে লক্ষাধিক লোক হাজির হয়েছিলেন। কংগ্রেস সভাপতি আশা প্রকাশ করেন যে আগামী লোকসভা নির্বাচনে আসামের সবগুলো কেন্দ্রে কংগ্রেস বিজয়ী হবে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুল গান্ধী আরএসএসকে এক হাত নিয়ে বলেন “আরএসএস’য়ের আদর্শ সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলে আগুন জ্বালাচ্ছে”।
তার ভাষণ বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতিতে ভরপুর ছিল, যা শুনে জনগণ হাততালি দিয়ে উঠেছেন বারবার। গান্ধী আরও বলেন “বিজেপি আপনাদের ভাষা সংস্কৃতি জীবন শৈলী এবং ইতিহাসকে আক্রমণ করছে”। সাথে সাথে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন কংগ্রেস দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরলে এই বিষয়টা মাথায় রাখবে এবং এতদঞ্চলের জনতার অস্তিত্ব এবং ঐতিহ্য রক্ষা করবে।
রাহুল গান্ধী তাঁর ভাষণে অভিযোগ করেন, বিজেপি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুবকদের চাকরি এবং অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে । তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাকরি ফিরিয়ে দেবো এবং নর্থ ইস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন পলিসি ফিরিয়ে দেব(NEIIPP)”
গান্ধী বলেন, আসামের শিল্প পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর ব্যাপারটা অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং কংগ্রেস এটা নিয়ে কাজ করছে। লোকসভা নির্বাচনে জেতার পরে পরেই আমরা জাগিরোড এবং কাছাড় কাগজ কল দুটো পুনরুজ্জীবিত করব” আশ্বাস দেন তিনি।
কাগজ কল কর্মচারিরা রাহুল গান্ধীর এই আশ্বাসে খুশি ব্যক্ত করেন। পেপার মিল রিভেল অ্যাকশন কমিটির আহ্বায়ক মানবেন্দ্র চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা আশাবাদী এবং আস্থাভাজন, যেহেতু রাহুল গান্ধী এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছেন তাই সরকার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে এবং আসামের জনগণ আগামী নির্বাচনে এই ব্যাপারে যথোচিত প্রত্যুত্তর” দেবে। আমাদের সংগ্রাম চলবে ততদিন, যতদিন পর্যন্ত কাগজ কল পুনরুজ্জীবিত না হচ্ছে এবং আগামী প্রজন্মের চাকরি সুনিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
চক্রবর্তী আরো বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কাগজ কল পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে কালীনগরে এক বিশাল জনসভায় কাগজ কল পুনরুজ্জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে গিয়ে এখন এই জাতীয় সম্পত্তি ব্যক্তিগত সংস্থায় হস্তান্তর করার প্রয়াস করছেন, যা আসাম এবং বরাক তথা আসামের জনগণকে একভাবে প্রতারণা করা, যা একজন প্রধানমন্ত্রী সাংবিধানিক পদে বসে করতে পারেন না।
রাহুল গান্ধী রাজ্য সরকারকে দায়ী করে বলেন যে গোলাঘাট এবং জোরহাট চোলাইমদ কাণ্ডে ১২০ জনের অধিক গরিব শ্রেণীর মানুষ বিশেষত জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ জীবন হারিয়েছে এবং ৪০০ জনেরও অধিক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছে। রাহুল গান্ধী বিশেষত চা শ্রমিক ভোটারদের মাথায় রেখে বলেন, নরেন্দ্র মোদি চা বাগানগুলোর জন্য অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু বাস্তবে কিছুই করেননি। কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে ক্ষমতায় এলে চা বাগান কর্মচারিদের নিম্নতম মজুরি সুনিশ্চিত করা হবে।
বিজেপি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সাতটি আসন দখল করেছিল এবং কংগ্রেস মাত্র তিনটি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি দল ১২৬টি আসনের মধ্যে ৬০টি আসন জয়লাভ করে কংগ্রেসকে উৎখাত করে। নাগরিকত্ব বিল নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কংগ্রেস আবার ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে এবং রাহুল গান্ধীর বক্তব্য থেকে তা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান।
Comments are closed.