Also read in

কুম্ভ দর্শনের অনুভূতি নিয়ে উন্মোচিত সাংবাদিক প্রণবানন্দ দাশের বই 'কুম্ভ কোলাজ'

পুরকমিশনার বিজেন্দ্র প্রসাদ সিংহ, ক্রীড়াবিদ সুবিমল ধর এবং সংস্কৃতিপ্রেমী অজয় চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বের সবথেকে বড় জনসমাগম কুম্ভমেলায় পাড়ি দিয়েছিলেন সাংবাদিক প্রণবানন্দ দাশ। সাধারন ভ্রমণপিপাসুর ভ্রমণ বাসনা চরিতার্থ করতেই ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলায় যাওয়া। এতবড় উৎসব নিজের চোখে দেখার অনুভূতি নিয়ে একটি অত্যন্ত সারগর্ভ বই লিখেছেন প্রণবানন্দ দাশ। বইটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কুম্ভ কোলাজ’।

রবিবার সন্ধ্যায় শিলচরে বইটির আনুষ্ঠানিক উন্মোচন হয়। উন্মোচন করেন উধারবন্দ কাঁচাকান্তি বিদ্যামন্দিরের অধ্যক্ষ হরিহর চক্রবর্তী। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত গল্পকার শ্যামলেন্দু চক্রবর্তী এবং লেখক প্রণবানন্দের মাতা-পিতার উদ্দেশ্যে।

কুম্ভ দর্শণে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ যাত্রা এবং ফিরে আসার পরের অনুভূতি নিয়ে লেখা হয়েছে বইটি। সাংবাদিকের কলমে সহজ ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে কুম্ভমেলার প্রত্যেকটি দিক। প্রণবানন্দ তার সম্পাদকীয়তে নিজেই লিখেছেন, এই লেখায় আধ্যাত্বিক বা ধর্মীয় অনুষঙ্গ খুব একটা মুখ্য নয়। বরঞ্চ একটা সাদামাটা ভ্রমণ বৃত্তান্ত, একজন সাধারণ ভ্রমণপিপাসুর চোখে চারপাশ দেখে নেওয়া, তার মানুষ, দৈনন্দিন জীবন, রাজনীতি আর অর্থনীতির অন্দরমহলে ঢুঁ মারার চেষ্টা। বইটিকে তিনি এক ধরনের আত্মকথা হিসেবেও গণ্য করছেন এবং নিজেই পাঠকদের বলেছেন বইটির সাহিত্যগুণ বিচার না করতে। প্রয়াগ রাজে বিশ্বের সবথেকে বড় অনুষ্ঠানকে নিজের চোখে দেখার অনুভূতির পাশাপাশি কুম্ভ মেলার বিভিন্ন ধর্মীয় ইতিহাস, নাগা সন্ন্যাসীর রহস্য, এসব দিকও উঠে এসেছে তার লেখায়। তার ভ্রমণের অনুভূতির সুতোয় তিনি বেঁধে দিয়েছেন কুম্ভ মেলার আধ্যাত্বিক তথ্য এবং সাধারণ মানুষের দর্শনের অনুভূতি।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের শুরুতে অধ্যাপক জয়দীপ বিশ্বাস বইটির বিষয়ে বলেন, কুম্ভ মেলায় সাধারণত ধর্মের টানেই মানুষ গিয়ে থাকেন। তবে একজন তুখোড় সাংবাদিক তার সঙ্গে ক্রীড়াব্যক্তিত্ব এবং সংস্কৃতিপ্রেমী ব্যক্তিদের নিয়ে কুম্ভ দর্শনে যান, তাদের অভিজ্ঞতা শোনার মজাটাই আলাদা। তারা ধর্মের উৎসবের বাইরে বিভিন্ন দিক দেখতে জানেন, তাদের সেই অনুভূতিই হচ্ছে এই বইটি। লেখক নিজেই বইটির ব্যাপারে বলেছেন, এটি ভ্রমণ, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, পারিপার্শ্বিক সমাজের পাঁচমিশেলী আখ্যান। তাই বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং লেখক অরিজিৎ আদিত্য এর নাম দিয়েছেন ‘কুম্ভ কোলাজ’। “অতীতে ভ্রমণ বৃত্তান্ত নিয়ে লেখা বিভিন্ন সারগর্ভ বই তৈরি হলেও এটি সবার থেকে আলাদা। ভ্রমণ পিপাসু প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে বইটি পড়ার অনুভূতি হবে অন্যরকম। আমি লেখক প্রণবানন্দ দাশের ভ্রমণ পিপাসা এবং তার অনুভুতিকে বইয়ের আকারে প্রকাশ করার পদ্ধতিকে সাধুবাদ জানাতে বাধ্য হচ্ছি। যারা কুম্ভ মেলার মতো একটি উৎসবে সশরীরে গিয়ে এখনও দেখতে পারেননি, তাদের কাছে এই বইটি একটি মানস-ভ্রমণের সুযোগ করে দেবে।”

বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিলচরের তরুণ চিত্রশিল্পী সোহন শর্মা। তিনি নিজেও কুম্ভ দর্শনে গিয়েছিলেন এবং সেখানে ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পেয়েছেন। তার প্রচ্ছদে কুম্ভ মেলার এক বিশেষ মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছে। প্রণবানন্দ তার বইয়ে নাগা সন্ন্যাসীদের নিয়ে নিজেও অনেক কিছু তথ্য তুলে ধরেছেন। সাধারণ মানুষ থেকে নাগা সন্ন্যাসী হওয়া এবং তাদের জীবনযাত্রা এসব ব্যাপারে অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে বইটিতে। সেই আমেজ নিয়েই প্রচ্ছদ রাখা হয়েছে।

এদিনের অনুষ্ঠানে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকার সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী সহ শহরের বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন। উন্মোচন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকে এটি কিনে নেন। লেখক নিজে বইগুলো স্বাক্ষর দিয়ে পাঠকের হাতে তুলে দেন। বইটির দাম রাখা হয়েছে ১০০ টাকা।

উদ্বোধনের পর প্রণবানন্দ দাশ, বিজেন্দ্র প্রসাদ সিংহ, সুবিমল ধর এবং অজয় চক্রবর্তীকে নিয়ে সাংবাদিক অরিজিৎ আদিত্য একটি খোলামেলা আলোচনা করেন। আলোচনায় প্রত্যেকে নিজের অনুভূতি আলাদা করে ব্যক্ত করেন। পুরকমিশনার বিজেন্দ্র কুমার সিংহ কুম্ভমেলা দর্শন নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে প্রথমেই স্বচ্ছতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এত বড় একটি অনুষ্ঠান যেখানে সারা পৃথিবী থেকে লক্ষ লক্ষ আসছেন এবং থাকছেন সেখানে কোনও অপরিচ্ছন্নতা বা অব্যবস্থা নেই। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সরকার রয়েছে বলে এটা বলছিনা। তাদের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। এত সুন্দর ব্যবস্থা আমি কোনও অনুষ্ঠানে আগে দেখিনি। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখায় তাদের বিভিন্ন পদ্ধতি দেখে অনেক কিছু শিখেছি। আমার ইচ্ছা এসব আমার নিজের শহরেও প্রয়োগ করব। তবে সব থেকে বড় কথা হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা। কুম্ভ মেলায় যাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তি অনুষ্ঠানটিকে নিজের মনে করেন। তারা নিজেরাই পরিচ্ছন্নতার জন্য কাজ করেন, আমাদের এই শিক্ষা নিতে হবে।

Comments are closed.