
১৮ বছরের মেয়ের লেখনীতে শিলচর বিস্মিত: " ডাক্তার আমাকে অযথা স্পর্শ করেছেন, যা মোটেই স্বাভাবিক ছিলনা"
কথায় বলে, মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুব জাগ্রত হয়। এখন তো স্কুলে বাচ্চা মেয়েদেরকেও good touch, bad touch শেখানো হয়। কিন্তু তারও আগে যখন এতসব কিছু ছিল না তখনও খারাপ অভিসন্ধিতে কারোর স্পর্শ টের পেতে মেয়েদের অসুবিধে হতো না। তাই একটি ১৮ বছরের যুবতী যখন একজন ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এসে লিখতে বাধ্য হয় ” তিনি আমাকে বেঠিক ভাবে অযথা স্পর্শ করেছেন” তখন অবশ্যই এটি স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। সে তার লেখায় উল্লেখ করে যে, ডাক্তার সীমা লংঘন করে তার শরীরের একান্ত গোপন অংশেও স্পর্শ করেন।
১৮ বছর বয়সী একটি মেয়ে যদি সমাজকে সম্মোধন করে এধরনের লেখে তবে শিলচর কিংবা বিশ্বের যে কোন জায়গার জন্যই এটি অবশ্যই বিপদ সংকেত। রাঙ্গিরখাড়িতে অবস্থিত বিখ্যাত চেম্বারগুলোর একটিতে অসুস্থতার কারণে দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরতা এই মেয়েটি ডাক্তার দেখাতে যায়, সঙ্গে তার মাও ছিলেন। সেই মেয়েটির কথা মত, ডাক্তার এর আগেও তার সীমা অতিক্রম করেছেন এবং তার অন্তর্বাসের ভেতরে হাত রেখে তাকে চূড়ান্ত অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন।
তার লেখাতে সে উল্লেখ করে, প্রথম যখন এরকম ঘটেছিল তখন সে বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে যে, এটি নিয়মিত চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার অন্তর্গত না চূড়ান্ত অমানবিক কিছু! তার লেখনীতে উল্লেখ ছিল যে, গত ভিজিটেও ডাক্তার তাকে আরো একবার অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে ফেলে দেন। আর এবার সে নিশ্চিত হয় যে এ কোন চিকিৎসার অঙ্গ নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে অসৎ মনের পরিচয়ে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে । অথচ অসুস্থতার কারণে ৫০ বছর বয়সী এই ডাক্তারের কাছে ইদানিং তাকে নিয়মিত যেতে হচ্ছিল।
লেখাটি সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোড করা হয়েছিল এবং এটি সব বয়সের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। চিঠিতে সে যদিও ডাক্তারের পরিচয় কিংবা চেম্বারের নাম উল্লেখ করেনি। তবে তার এই লেখনীতে সে অবশ্যই উল্লেখ করেছে, ডাক্তারের কাছে ভিজিটের সময় ডাক্তারের ব্যবহারে তার অস্বস্তির কথা, যা মোটেই স্বাভাবিক ছিল না। সে আরও উল্লেখ করে যে, এভাবে এধরনের ঘটনার কোন প্রতিবাদ না করে চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসায় সে লজ্জিত। তবে এ ধরনের ঘটনায় তার অভিজ্ঞতার কথা সবার সঙ্গে শেয়ার করার জন্য অনেকেই তার সাহসের প্রশংসা করেন।
অভিজ্ঞ আইনজীবী বীথিকা আচার্য মনে করেন, মেয়েটির পুলিশ থানায় অভিযোগ দায়ের করা উচিত ছিল। আমাদের প্রতিবেদকর সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, ” এই ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপটি হওয়া উচিত পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো। যার ফলস্বরূপ তদন্ত শুরু হবে এবং সত্য বেরিয়ে আসবে।” আমাদের প্রতিবেদক আইনজীবী আচার্যকে জিজ্ঞাসা করেন যে, যদি এ ধরনের কোনো বিখ্যাত ডাক্তারের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে অভিযোগকারীর হাতে যথেষ্ট প্রমাণ না থাকে তাহলে কিভাবে সে লড়তে পারবে? অভিজ্ঞ আইনজীবী এ ব্যাপারে বলেন, “সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় লড়াই শুরু করার সময় প্রমাণ হাতে থাকে না। এটাই সত্য যে, একটি মেয়ে এ ধরনের অভিযোগ এনেছে এবং সেটার উপর ভিত্তি করেই তদন্ত শুরু হতে পারে। কিন্তু তার জন্য পুলিশ থানায় অভিযোগ করা জরুরি।”
আরেকজন অভিজ্ঞ আইনজীবী (যিনি নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক) বলেন, প্রথম পদক্ষেপটি অবশ্যই এফআইআর হওয়া উচিত। তিনি আরও যোগ করেন যে, “ফেসবুকে এ ধরনের লেখা আপলোড করাকে মোটেই এনকারেজ করা উচিত না, কারণ এর জন্য তদন্তের রাস্তা ভ্রষ্ট হতে পারে। এমনকি ভিকটিমও এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চিঠিতে সে যা বলেছে তা যদি সত্য হয় তবে এটি ভয়ানক এবং জঘন্য। চেম্বারের ভেতরে মেয়েটির মানসিক অবস্থা কি ছিল সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারছি এবং সে যে সেই মুহূর্তে নিজের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে পারেনি এটাও খুবই বাস্তবসম্মত। সাধারনত কারোর পক্ষেই চট করে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কিন্তু যখন সে তার সাহস সঞ্চয় করতে পেরেছে তখন পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর জন্য থানা প্ল্যাটফর্ম হওয়া উচিত ছিল, সোশ্যাল মিডিয়া নয়।” আইনজীবী যোগ করেন।
আমরা মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তবে তার পারিবারিক সূত্র থেকে জানা গেছে যে মেয়েটির যদিও পুলিশ থানায় অভিযোগ দাখিল করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু তার পরিবার এ ক্ষেত্রে তাকে সমর্থন করতে অস্বীকার করে।
Comments are closed.