Also read in

"আমার বাবা রণধীর পালকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে মিডিয়া": পূজা পাল

চলে গেলেন ব্লাড ব্যাংকের কর্মচারি রনধীর পাল। এ সংবাদ আজ শিলচরের সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। সবার মুখে মুখে আলোচিত। তাঁর এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তিনি তার বাসার একটি কক্ষে ফ্যানের সাথে নিজেকে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করলেন। আজ ভোর বেলায়। এটা ছিল তার নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য দ্বিতীয়বারের প্রচেষ্টা। প্রথমবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করলেও বেঁচে গেছিলেন চিকিৎসকদের চিকিৎসা এবং পরিজনদের শুশ্রূষায়। কিন্তু এবার আর কোন কিছুই আটকে রাখতে পারল না মানসিকভাবে বিপর্যস্ত রনধীর পালকে। গতরাতে রনধীর পালের মন খুব খারাপ ছিল, জানা গেল তাঁর শোকবিহ্বল কন্যা পূজা পালের কাছ থেকে।

 

পূজা পাল আরও জানালেন, “তার বাবা বারবার উল্লেখ করতেন যে আত্মসম্মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর আর জীবিত থাকার কোন মানে হয় না।” কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে কীটনাশক ওষুধ খেয়ে তিনি যখন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এবং ডাক্তারদের চিকিৎসার ফলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তখন কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছিল। পূজা পাল সে ব্যাপারে বলেন, ” তিনি ভালভাবেই রিকভারি করছিলেন। সবকিছু যেন স্বাভাবিক হচ্ছিল ধীরে ধীরে। কিন্তু এক দৈনিক পত্রিকার একটি নিবন্ধ পড়ার পর তিনি আবার বিষন্নতায় ডুবে যান। বারবার আমাদের বলতে থাকেন যে তিনি আর বাঁচতে চান না, তার আর বাঁচার কোনও অভিলাষা নেই।”

শোককাতর পূজা বলতেই থাকেন, ” শুধু তারা তাদের সংবাদপত্র বিক্রি করতে চায় বলে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানগুলো যা ইচ্ছে তাই প্রকাশ করে। সব সংবাদপত্রগুলো নামহীন সূত্র ধরে উদ্ধৃতি দিতে থাকে এবং এটা ওটা অভিযোগ করতেই থাকে। মিডিয়ার রিপোর্ট এবং ব্লাড ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজীব বিশ্বাসের জন্যই আমার বাবা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।”

ঘটনার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পূজা পাল উল্লেখ করেন যে গতকাল নিবন্ধটি পড়ার পর রনধীর পাল এক মানসিক ভাঙ্গনের শিকার হন। ” তিনি প্রায়ই বলতেন যে তিনি সবকিছু হারিয়ে ফেলেছেন এবং জীবিত থাকার উনার আর কোনও কারণই নেই। আমরা উনাকে বোঝাই যে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে এবং কিছুই শেষ হয়নি। আমরা চারটা পর্যন্ত উনার সাথেই বসে ছিলাম এবং তারপর উনি একটু ভালো বোধ করেন, তিনি এক কাপ চাও চেয়ে খান এবং তারপর আমরা ঘুমিয়ে পড়ি।” পূজা জানালেন।

পূজা পাল আমাদের জানালেন যে, রনধীর পাল তার বাড়িতে ফ্যানের সঙ্গে নিজেকে ঝুলানোর জন্য একটি বিছানার চাদর ব্যবহার করেছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি তার স্ত্রী, তার বৃদ্ধ বাবা, দুই কন্যা এবং দুই পুত্র রেখে গেছেন।

জানা গেছে, ব্লাড ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজীব বিশ্বাস বারবার রনধীর পালের কাজ করার ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, পাল ব্লাড ব্যাংকে একটি বিছানা রেখেছিলেন এবং চব্বিশ ঘন্টা সেখানে থাকতেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বাস রনধীর পালকে প্রশ্ন করেন, আট ঘন্টার জায়গায় তিনি কেন সব সময় ব্লাড ব্যাংকে পড়ে থাকেন? রনধীর পালের স্ত্রী তার স্বামীকে মানসিকভাবে অত্যাচার করার অভিযোগে রাজীব বিশ্বাসকে অভিযুক্ত করে একটি এফআইআর দায়ের করেছেন।

Comments are closed.