আসামের একমাত্র বাঙালি সাংসদ রাজদীপ রায় শপথ নেবেন বাংলায়, অনুষ্ঠান ১৭ই জুন
আগামী ১৭ জুন নবনির্বাচিত সাংসদ হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন রাজদীপ রায়। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতির তরফে তার কাছে শপথ গ্রহণের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে। শাসক দলের এরাজ্যে একমাত্র বাঙালি সাংসদ রাজদীপই শপথ নেবেন বাংলায়। বৃহস্পতিবার বিজেপির জেলা কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে্য আয়োজন করে শপথ গ্রহণের ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়।
১৭জুন সকাল ১১টা থেকে সাংসদরা শপথ নেবেন, এটি চলবে ১৯ তারিখ পর্যন্ত। মোট ৫৪৩ জন নবনির্বাচিত সাংসদ এই তিনদিন শপথ গ্রহণ করবেন। ২০ তারিখে লোকসভার অধ্যক্ষের নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। শপথ গ্রহণের তালিকায় রাজদীপ রায়ের নম্বর ২৯, তাই তিনি ১৭ তারিখেই শপথ নেবেন। আসাম থেকে শাসক দলের ৯ জন সাংসদের মধ্যে রাজদীপ রায় একমাত্র বাঙালি। তাই তিনি বাংলা ভাষায় শপথ নেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার সিদ্ধান্তের কথা লিখিতভাবে সংসদে জানিয়েও দিয়েছেন রাজদীপ।
শপথ গ্রহণের পর যে তিনটি বিষয় তার কাছে প্রাধান্য পাবে সেগুলো নিয়ে রাজদীপ বলেন, আমি আগেও বলেছি আমাদের উপত্যকার জন্য পাঁচ ধরনের হাইওয়ে উন্নত করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে সড়ক, রেলপথ, জলপথ, বিমান পরিষেবা এবং উন্নত ইন্টারনেট পরিষেবা। এছাড়া উপত্যকার চিকিৎসা পরিষেবা এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করার দিকে লক্ষ্য থাকবে আমার। তবে প্রথমেই কোন্ কোন্ প্রশ্ন লোক সভায় উত্থাপন করবো এনিয়ে এখন পরিষ্কার বলা যাবে না। আগামী ২৬ জুলাই পর্যন্ত নতুন সরকারের প্রথম অধিবেশন চলবে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বাজেট পেশ করা হবে। এরমধ্যেই আমাদের প্রশ্ন করার সুযোগ গুলো দেওয়া হবে। লোকসভায় প্রশ্নগুলো লটারির মাধ্যমে হয়। আমরা আমাদের প্রশ্ন সেখানে দিয়ে দেব এবং বিষয়টি লটারির মাধ্যমে আমাদের হাতে উঠে আসবে। তাই প্রথমে কোন্ বিষয় উত্থাপন করবো এটা বলা যাবেনা। তবে লোকসভায় প্রশ্ন করার বাইরেও আমাদের অনেক কাজ করার জায়গা থাকে। বরাক উপত্যকার সার্বিক উন্নতির ক্ষেত্রে গত পাঁচ বছর নরেন্দ্র মোদি সরকার এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল অনেক ভালো পদক্ষেপ নিয়েছেন। সাধারণ জনগণ এর সুফল পেয়েছেন। আমি সাংসদ হিসেবে সড়ক, রেলপথ, বিমান পরিষেবা, জলপথ উন্নত করার পাশাপাশি ইন্টারনেট পরিষেবাকে উন্নত করতে চাই,এর জন্য প্রয়োজনীয় বিভাগ গুলোর সঙ্গে কথা বলব। আমি পেশায় একজন ডাক্তার, এই উপত্যকার চিকিৎসার উন্নতি করা অনেক পুরোনো স্বপ্ন। আমরা এখনো অত্যাধুনিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছি, আমি সেগুলো উন্নত করতে আগ্রহী। এবার সংসদে মোট ১১জন চিকিৎসক রয়েছেন, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বরাক উপত্যকায় চল্লিশ লক্ষ মানুষের বাইরেও ত্রিপুরা মনিপুর ইত্যাদি থেকে এখানে চিকিৎসার জন্য অনেকে আসেন। আমি এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব।
উপত্যাকার মানুষ আন্দোলন করে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় অর্জন করেছিলেন। শিলচরের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং তেজপুরের বিশ্ববিদ্যালয় একই দিনে শুরু হয়েছিল। কিন্তু তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় আজ দেশের অন্যতম সেরা, সেখানে আমরা দেশের প্রথম ৯০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও নেই। এসব নিয়ে এবার ভাবতে হবে এবং আগামী দিনের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। আমি চাই আগামী ছয় মাসের মধ্যে মানবসম্পদ মন্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসে একটি আলোচনার আয়োজন করতে। আমাদের ভেতরের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করতে হবে। সেগুলো শুধরে নিয়ে কিভাবে এই অঞ্চলের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায় এনিয়ে ভাবতে হবে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী স্বপ্নের মহাসড়ক শুধুমাত্র কংগ্রেস সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য এখনো বাস্তবে পরিণত হতে পারেনি। আমরা সব ধরনের বাধা বিপত্তি কাটিয়ে আবার কাজ শুরু করেছি এবং আশা রাখছি খুব তাড়াতাড়ি মহাসড়কের কাজটি সম্পন্ন হবে।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়ের সঙ্গে জেলা বিজেপির সভাপতি কৌশিক রাই, প্রাক্তন সভাপতি উদয় শংকর গোস্বামী, দলের বরিষ্ঠ নেতা নিত্যভূষণ দে সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। কৌশিক রাই জানান, ১৭ জুন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আগামীকাল শিলচর থেকে রওয়ানা হবেন রাজদীপ রায়। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান এবং সংসদের প্রথম অধিবেশনে অংশ নিয়ে ফিরে আসবেন তিনি।
Comments are closed.