Also read in

স্বাধীনতার ৭২ বছর পরও বন্দীত্বের জীবন গোবিন্দপুর গ্রামবাসীর

গ্রামটি ভারতের, গ্রামবাসীরা ভারতীয়, কিন্তু তবুও ভারত বাংলা সীমান্তের উত্তর করিমগঞ্জ কুড়িখালা পঞ্চায়েতের অধীনস্থ গোবিন্দপুর গ্রামের মানুষের জীবন অন্যান্য সাধারণ মানুষের জীবন থেকে ভিন্ন এবং বলা বাহুল্য আর পাঁচটা মানুষের মত সহজ নয়। ভারত বর্ষের স্বাধীনতা লাভের অনেক বছর হয়ে গেলেও এই গ্রামের বসবাসকারী সাধারন জনগণ আজ পর্যন্ত স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্ধি করতে পারেননি। কাঁটাতারের ভিতর ওদের জীবনধারা নারকীয় যন্ত্রণার মধ্যেই কাটছে। বলা যায় স্বাধীনতার ৭২ বছর পরও বন্দীত্বের জীবনযাপন করছেন তারা।

দেশভাগের বলির শিকার হয়ে যন্ত্রণা ভোগ করছেন। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে ছিটকে গিয়ে সম্পূর্ণ গ্রামটাই কাঁটাতারের বাইরের অংশে চলে যায়। ফলে নায্য পাওনা থেকেও ওরা বঞ্চিত। ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে সরে গিয়ে নো ম্যান্স ল্যান্ডে রয়েছে সারা গ্রাম। গ্রামে ৪১টির বেশি হিন্দু পরিবার এবং চারটি মুসলমান পরিবার রয়েছে। সব ধরনের ন্যায্য পাওনা থেকে ওরা বঞ্চিত হচ্ছে। গ্রামে এখনো আলো পৌঁছেনি, নেই কোনও সরকারি স্কুল।একইভাবে নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। সরকারি বা পঞ্চায়েত স্তরের কোন প্রকল্প এখন পর্যন্ত রূপায়িত হয়নি এখানে।

এরই মধ্যে কঠোর নিয়মের বাঁধনে বাধা গ্রামবাসীর জীবন। গ্রামবাসীদের জন্য বিএসএফের গেট সকাল সাতটা থেকে তিন ঘন্টার জন্য খুলে দেওয়া হয়। দশটার সময় বন্ধ করে দিয়ে সেই গেট কিছুটা সময়ের জন্য আবার বারোটার দিকে খুলে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা সাতটায় গেট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে কঠোর নিয়মে জর্জরিত গ্রামবাসী।কোন কাজে আটকে গিয়ে গেটে পৌঁছাতে সন্ধ্যে সাতটা হয়ে গেলে তাদেরকে বাইরেই রাত কাটাতে হয়। শুধু তাই নয় গ্রামের বাসিন্দা ছাড়া অন্য কোন লোকের কিংবা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের গোবিন্দপুর গ্রামে প্রবেশ করার অধিকার নেই। এই গ্রামে পৌঁছতে হলে বিএসএফ, আইজি, ডিআইজি এবং দিল্লির মুখ্য কার্যালয়ের অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, করিমগঞ্জ জেলার ৯৩ কিলোমিটার সীমান্তের কাঁটাতারের বাইরে রয়েছে গোবিন্দপুর, জারাপাতা, লাভসাইল, কোয়রবাগ,দেওতলি এবং জবলপুর গ্রামের ১৮০ টি পরিবারের ২০০০ লোক। গ্রামের লোকের নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। নাম আছে এনআরসি’র চূড়ান্ত খসড়া তালিকায়।সরকারের প্রতিশ্রুতি ও আস্বাস সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এই গ্রামের জনগণ কোনও সাহায্য পাননি।

গোবিন্দপুর গ্রামের ৪১টি হিন্দু পরিবারের সাহায্যার্থে কোনও হিন্দু সংগঠন এগিয়ে আসেনি। যাদের জন্য বিএসএফের কড়া নিয়ম নীতি রয়েছে, রয়েছে নারকীয় জীবন-যন্ত্রণা, সেই গ্রামবাসীরা কবে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতার স্বাদ পাবেন তা এখনো প্রশ্নচিহ্ন হয়েই আছে। কবে তাদের বন্দিত্বের জীবন ঘুচবে তা বলা কঠিন। যদিও বন্দিত্বের জীবনের ওপারে সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখছেন এই গ্রামবাসীরা। তাদের স্বপ্ন কবে সফল হবে তাও আর এক প্রশ্ন চিহ্ন!

Comments are closed.