বিমলাংশু রায় কিংবা সন্তোষ মোহন দেব বেঁচে থাকলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো, এরকম অনেক কথাই উঠে এলো এই জীবনী গ্রন্থের আলাপচারিতায়
বিমলাংশু রায়। বিধায়ক, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, লেখক, ভারতীয় জনতা পার্টি ও জনসংঘের একনিষ্ঠ কর্মী, এমন অনেক বিশেষণে সমৃদ্ধ এক নাম! বরাক উপত্যকার রাজনীতির ইতিহাসে রাজনৈতিক নেতার বায়োগ্রাফি বা জীবনীগ্রন্থ লেখার রেওয়াজ তেমন নেই। তাই বিমলাংশু রায়ের বায়োগ্রাফি বা জীবনীগ্রন্থ প্রকাশে বরাক উপত্যকার মানুষের কৌতুহলের পারদ ঊর্ধ্বমুখী হওয়াই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক ছন্দেই জানার আগ্রহ বাড়ে গ্রন্থের বিষয়বস্তু।লেখক কিভাবে উদ্বুদ্ধ হলেন, সময়ের ক্যানভাসে এই রাজনীতিবিদকে চিত্রিত করতে? মূল শেকড় থেকে ছিটকে উদ্বাস্তু হওয়ার যন্ত্রণা থেকে শুরু করে অন্যের জীবনে অনুপ্রেরণা হওয়ার যাত্রাপথ কিভাবে বর্ণনা করলেন লেখক? অন্তর্মুখী এক কিশোর কিভাবে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠলেন? রাজনীতির বাইরে কেমন ছিল এই নেতার কর্মজীবন? তথ্য আর ব্যাখ্যায় সময়ের দাবি মেনে কি কি বিষয় স্থান পেল এই জীবনীগ্রন্থে? প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতেই বিমলাংশু রায়ের জীবনীগ্রন্থের লেখক দীপঙ্কর ঘোষের সঙ্গে কিছুক্ষণের আলাপচারিতা!
কথোপকথনের সম্পাদিত অংশ তুলে ধরা হলো।
বিমলাংশু রায়ের বায়োগ্রাফি লেখার সূচনাটা কোথায়? সেটা কি সম্পূর্ণ আপনার নিজস্ব পরিকল্পনা ছিল?
আসলে আমি অনেক ছোটবেলা থেকেই উনার সহযোগী ছিলাম।ফলে খুব কাছের থেকে ওনার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জীবন এবং রাজনৈতিক জীবন প্রত্যক্ষ করেছি। উনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। অনেক পরে উনার জন্মদিনে কিংবা মৃত্যু দিবসে নারী শিক্ষা আশ্রম থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় যখন উনার সম্পর্কে বলতাম তখন আমার নিজেরও মনে হতো এগুলো লিখে রাখলে ভালো হয়। না হলে সময়ের অতলে তলিয়ে গিয়ে সব হারিয়ে যাবে। তাছাড়া রাজদীপ রায়ও আমাকে ভীষণভাবে উৎসাহিত করলেন বিমলাংশু রায়ের বায়োগ্রাফি লেখার জন্য।
তারপরই কি আপনি কলম ধরলেন?
না সেভাবে নয়,আসলে তার মধ্যে আরও একটি ব্যাপার ঘটল। বিমলাংশু রায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ২০১০ সালে একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল এবং তখন ‘শ্রদ্ধা’ নামের একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে অরুণ জেটলি, ইন্দ্রমনি বরা প্রমূখ যোগ দেন। সেই ম্যাগাজিনে অন্যান্যদের সঙ্গে আমিও লিখেছিলাম। আমার বিষয় ছিল বিমলাংশু রায়। ওই লেখায় অনেক অজানা তথ্য উঠে এসেছিল। তাই দেখে অনেকেই বিমলাংশু রায়কে নিয়ে আরও তথ্যবহুল লেখা লিখতে আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তারপরও আর তেমনভাবে এটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা সম্ভব হয়নি। দু’বছর আগে রাজদীপ রায় আমাকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেন কাজটা শুরু করার জন্য। তখন আমার মনে আরও একটা বিষয় উঁকি দিলো। ভাবলাম, শুধু আমি কেন, বিমলাংশু রায়কে নিয়ে অন্যদের চিন্তা ধারাও তুলে ধরলে কেমন হয়?তাই অন্যদের কাছ থেকে এক্ষেত্রে অনেক তথ্য গ্রহণ করে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।
আপনি বলছিলেন, বিমলাংশু রায়কে আপনার খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেই সুযোগটাই কি আপনি কাজে লাগালেন?
না, আমার চিন্তা ধারা অন্যরকম ছিল। আমি বরং চেষ্টা করলাম, বিমলাংশু রায়কে আমি আমার চোখে কিভাবে দেখেছি, তা গ্রন্থে প্রকাশ না করতে। বলতে পারেন, বিভিন্ন জীবনীগ্রন্থ পড়ার সুবাদে আমার বদ্ধ ধারণা ছিল যে লেখক যখন ঘনিষ্ঠ কাউকে নিয়ে বায়োগ্রাফি লেখেন তখন একদিকে যেমন লেখার মধ্যে লেখক বারবার নিজে এসে যান, তেমনি তার সত্যাসত্য নিয়েও সন্দেহ দেখা দেয়। তাই আমি সূত্রধরের কাজ করেছি। আমি চেষ্টা করেছি, মানুষের মুখ থেকে তার সম্পর্কে জেনে তা ভাষায় ফুটিয়ে তোলার, সঙ্গে মানুষের মুখ থেকে শোনা বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করেছি, বিভিন্ন তথ্য তথা ওই সময়ের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছি।
এগুলো সব সংগ্রহ করতে কিংবা বইটি লেখার জন্য গবেষণামূলক কাজে কতটা সময় ব্যয় হয়েছে?
আসলে এটি সব মিলিয়ে পাঁচ ছ’ মাসের কাজ। কিন্তু যেহেতু একনাগাড়ে কাজটা করতে পারিনি তাই আমার দু বছর সময় লেগেছে।
এই যে বায়োগ্রাফিটা লিখলেন, আপনার এই যাত্রাপথে লেখক হিসাবে কি কি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করতে চাইবেন?
একটা বিষয় এখানে উল্লেখ করতে চাই, বিমলাংশু রায়কে নিয়ে লিখতে গিয়ে আমি ‘আসামে বিজেপির উত্তরণ ও কিছু বিক্ষিপ্ত সময়ের কথা’ নিয়ে উপ শিরোনামে কিছু টুকরো টুকরো কথা লিখেছি, যে ঘটনাগুলোর সঙ্গে বিমলাংশু রায়ের কোনও সূত্রে যোগাযোগ ছিল। খুব স্বাভাবিকভাবেই দেশভাগের কথাও উঠে এসেছে। উনার বাবা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী ছিলেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী তো বটেই। দেশভাগের করুণ পরিণতিতে তাদের নিজের জন্মভূমি পরিত্যাগ করতে হয়েছিল। কাজেই কৈশোর জীবনে বিমলাংশু রায় দেশভাগের যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন হঠাৎ করে দেশভাগের ফলে উদ্বাস্তু হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা তাকে অন্তর্মুখী করে তোলে। এক অন্তর্মুখী কিশোর ভবিষ্যতে কিভাবে বিশাল সংখ্যক মানুষের মনে জায়গা করে নিলেন কিংবা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়লেন সেই কথাগুলো উঠে এসেছে আমার লেখনীর মাধ্যমে।
বিমলাংশু রায়কে ঘিরে আর কোন্ কোন্ বিষয় এই বায়োগ্রাফিতে গুরুত্ব পেয়েছে?
তিনি জনসংঘের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি কীভাবে এই সংঘের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন সে কথাগুলোও উল্লেখ করেছি। একইভাবে আসামে বিজেপির জন্মলগ্ন থেকে যেহেতু তিনি দলের সঙ্গে ছিলেন, কাজেই এ কথাগুলোও উঠে এসেছে সময়ের দাবি মেনে। আবার ১৯৬০ সালের আসামের বঙ্গাল খেদা আন্দোলনের কথাও আমার লেখায় স্থান পেয়েছে। উল্লেখ্য, এই আন্দোলনের জন্য বিমলাংশু রায়েরও একটি শিক্ষা বর্ষ নষ্ট হয়েছিল। এরপর ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলনেও তার এক অগ্রণী ভূমিকা ছিল। কাজেই ভাষা-আন্দোলনের কথাও এসেছে সমানভাবে। এই বিষয়গুলো একে অন্যের হাত ধরে এগিয়ে গেছে নিজের ছন্দে।
বায়োগ্রাফিটাতে তাকে একটা সময়ের ক্যানভাসে আঁকার চেষ্টা করেছি। নাম দিয়েছি ‘অদ্বিতীয় বিমলাংশু – কালের ক্যানভাসে’
তাহলে এবার জানতে চাইব, আপনার মতে তিনি কেন অদ্বিতীয়? কেনই বা জীবনীগ্রন্থ লেখার মত যোগ্য ব্যক্তিত্ব?
এ প্রশ্নের উত্তরে একটা উদাহরণ দিতে চাই। মনে করুন একজন ডাক্তার রোগী দেখেন,অস্ত্রোপচার করেন। একজন শিক্ষক ছাত্রদের পড়ান, একজন রাজনীতিবিদ নির্বাচনে দাঁড়ান, তারপর হয়তো বা জেতেন, নয়তো পরাজিত হন। কাজেই জীবনীগ্রন্থ লেখার জন্য উনি কেন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব? এ কাজগুলোতো উনার পেশার অন্তর্গত। তাহলে কেন তাকে নিয়ে আমাকে আলাদা ভাবে ভাবতে হলো? আসলে আমাকে ভাবতে হলো কিংবা জীবনীগ্রন্থ লিখতে কলম হাতে নিতে হলো, কারণ তিনি অন্যদের থেকে আলাদা। রাজনীতিবিদ হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমাকে ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ব্যাখ্যা করার সুযোগ দিয়েছেন। রাজনীতিতে তিনি যেভাবে কাজ করেছেন, সেই ধারা কিন্তু অন্য রাজনীতিবিদদের থেকে আলাদা।
তাহলে আপনি বলতে চাইছেন,তার সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কটা জীবনীগ্রন্থ লিখতে আপনাকে উদ্বুদ্ধ করেনি। বরং তার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আপনাকে বাধ্য করেছে? কিংবা তার একজন অনুগামী হিসেবে আপনার মনে হয়েছে যে জীবনী গ্রন্থ লেখার জন্য উনি একজন যোগ্য ব্যক্তিত্ব?
হ্যাঁ, ব্যক্তিগত সম্পর্ক এখানে আমাকে উদ্বুদ্ধ করেনি। বরং একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তার ব্যক্তিত্ব আমাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে একাজে। সোজা কথায়, তিনি যে অন্যান্য রাজনীতিবিদ থেকে আলাদা, তিনি যে তার কাজের সুবাদে পরবর্তী প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম, সে বিষয়গুলো এবং সর্বোপরি তার সুপ্রসারিত কাজের পরিধি আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে তার জীবনী গ্রন্থ লেখায় কলম ধরতে।
হয়তো আমার মতো অনেকেরই মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন উঁকি দেবে, আরো অনেক বিধায়ক কিংবা রাজনীতিবিদরা রয়েছেন যাদের জীবনীগ্রন্থ লেখার কথা ভাবা হয়নি। বিমলাংশু রায়ও একজন বিধায়ক মাত্র! তবে কেন?
এখানে আমি বলতে চাই, একজন বিধায়ক তার নির্বাচন চক্র নিয়েই ভাববেন এটাই স্বাভাবিক। তার বাইরে গিয়ে কাজ করতে খুব একটা চোখে পড়ে না। কিন্তু বিমলাংশু রায় শিলচরের একজন বিধায়ক হয়েও এমন সব মানুষের জন্য কাজ করেছেন যারা তার নির্বাচন চক্রের বাইরে। স্বভাবতই ভোটের প্রত্যাশায় তিনি কাজ করেন নি।মুসলিম এলাকায় ভোটের কথা চিন্তা না করে পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, এতো এক উদাহরণ মাত্র! এ ধরনের অনেক কাজ রয়েছে। তিনি সব সময় বলতেন, আমি যখন রাজনীতি করি তখন আমাকে জাত ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ হিসেবে কাজ করা উচিত। কাজেই ভোটের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের জন্য তিনি কাজ করেছেন।
অন্য একটা ব্যাপার হচ্ছে, এই যে আমরা এখন এনআরসি নিয়ে জর্জরিত, বিমলাংশু রায় কিন্তু এগুলো নিয়ে তখন অন্য ভাবে অনেক চেষ্টা করেছেন। তিনি আইএমডিটি আইন বাতিলের জন্য আসাম বিজেপির প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি তখন এ নিয়ে অনেক লেখালেখিও করেছিলেন।
কথাপ্রসঙ্গে বলছি, এক জায়গায় আমি প্রশ্ন রেখেছি, তাহলে কি বিমলাংশু রায়ের চরিত্র পরস্পরবিরোধী? একদিকে তিনি অসমিয়া, মনিপুরি, আরো অনেক জাতির স্বার্থে দাবি তুলছেন, অন্যদিকে শুধুমাত্র একজন হিন্দু বাঙালি হিসেবে তিনি বলছেন, যদি বরাকের প্রতি ব্রহ্মপুত্রের বঞ্চনা এভাবে চলতে থাকে তাহলে বরাক আলাদা হতে বাধ্য হবে। একদিকে তিনি জাত, ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের জন্য লড়াই করছেন, অন্যদিকে উনার মধ্যে কি এক প্রাদেশিকতা কাজ করেছে?
এক্ষেত্রে আমি উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করেছি, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক জায়গায় বলেছেন,সব গাছের ছায়াই শীতল, কিন্তু নিজের উঠোনের গাছের ছায়া সবচেয়ে বেশি শীতল। সব জনগোষ্ঠীর জন্য কথা বলতে গিয়ে নিজের জনগোষ্ঠীর বিষয়ে মাঝেমধ্যে বিস্মৃত হয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে উনার কর্মজীবনের সুবাদে আমি তাকে অনেকের থেকে আলাদা করতে পেরেছি।তাছাড়া উনার মধ্যে অনেক গুণ ছিল, যা পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে সক্ষম।
অন্যদিকে ভারতীয় জনতা পার্টির উত্থান, জনসংঘের বিষয়ে তথ্য সমৃদ্ধ ইতিহাস না থাকায় অতি কথনে তথ্য অনেক বিকৃত হচ্ছে। তাই সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধ করাও খুব জরুরি ছিল। ভারতীয় জনতা পার্টি’র প্রারম্ভিক ইতিহাস এবং জনসংঘের প্রারম্ভিক ইতিহাসও বিমলাংশু রায়ের চরিত্র চিত্রণের পাশাপাশি গ্রন্থে তুলে ধরা হয়েছে।
রাজনীতিবিদ হিসেবে বিমলাংশু রায়কে আমরা সবাই চিনি। কিন্তু এই জীবনীগ্রন্থে আপনি কি উনার অন্য কোন দিকও তুলে ধরেছেন?
হ্যাঁ, উনি লেখালেখি করতে ভালোবাসতেন। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তিনি সমাজসেবা করতেও খুব ভালোবাসতেন। উদাহরণ হিসেবে শিব সুন্দরী নারী শিক্ষাশ্রমের কথা উল্লেখ করতে চাই। এটা একটি মৃতপ্রায় হাসপাতাল ছিল। তিনি যখন এই শিক্ষাশ্রমের ম্যানেজমেন্ট কমিটির প্রেসিডেন্ট হলেন তখন এর অগ্রগতির যাত্রা শুরু হল। আর আজ সেটি মেয়েদের এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাসপাতাল। এর পেছনে তার অক্লান্ত পরিশ্রম কাজ করেছে। সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার মত গুণ ছিল তাঁর। তাছাড়া রেডক্রসের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন। কয়েকটি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
তিনিও যেমন মূল শেকড় থেকে ছিটকে উদ্বাস্তু হওয়ার যন্ত্রণা প্রত্যক্ষ করেছেন, তেমনি আজও বরাক উপত্যকার বহু মানুষ উদ্বাস্তু হওয়ার ভয়ে আতঙ্কিত হচ্ছেন। জীবনী গ্রন্থের মধ্যে এ বিষয়ে কোন সংযোগ স্থাপিত হয়েছে, যাতে করে বইটি সমসাময়িক হয়ে উঠে?
আজকের এই কঠিন সময়ে অনেকেই উপলব্ধি করেন যে আজ যদি বিমলাংশু রায় কিংবা সন্তোষ মোহন দেব বেঁচে থাকতেন তাহলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো। আমি এক্ষেত্রে পাশাপাশি এও বলতে চেয়েছি, সন্তোষ মোহন দেবও বরাক উপত্যকার এক অপ্রতিরোধ্য জননেতা। বরাক উপত্যকার বাঙালি হিন্দুরা তার কাছে নিশ্চিত আশ্রয় পেত। আজকের দিনে বরাক উপত্যকা প্রায় নেতৃত্বহীন অবস্থায় পৌঁছেছে।
তখনতো নাগরিকত্বের ব্যাপারটা ছিল না। ‘ ইমিগ্র্যান্টস এক্সপালসন ফ্রম আসাম অ্যাক্ট ১৯৫০’ নামে যে আইন রয়েছে তাকে জোরদারভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি চেষ্টা চালান। ফলে আর কোন হিন্দু বাঙালির এ অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। তারা এখানেই থাকতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন। তখন তো আর ডি ভোটার, ডিটেনশন ক্যাম্প ছিল না, তবে আইএমডিটি অ্যাক্ট’র একটা যন্ত্রনাতো ছিলই। সেই আইএমডিটি অ্যাক্ট বাতিল করার জন্য তিনি তখন তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়ে এ বিষয়ে আবেদন রাখেন। এই আইন বাতিলের জন্য কোর্টে যে কেস হয়েছিল সেটাতেও তিনি জড়িয়ে ছিলেন। আইএমডিটি অ্যাক্ট বাতিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ভেবেছিলেন যে হিন্দু বাঙালির আর সমস্যা হবে না। ‘ইমিগ্র্যান্টস এক্সপালসন ফ্রম আসাম’ এর ফলস্বরূপ হিন্দু বাঙালিদের এক সুরক্ষা কবজ তৈরি হয়। তিনি এ নিয়ে লেখালেখিও করেছিলেন।
আজ যদি উনি বেঁচে থাকতেন তাহলে ৩৬ বছরের আইনি অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জনস্বার্থে আইনি লড়াইটা ভালোই লড়তে পারতেন। এখানে তার অনুপস্থিতিতে সৃষ্ট শূন্যতা অবশ্যই আমরা অনুভব করতে পারি।
শুভেচ্ছা রইল, আপনার লেখা বিমলাংশু রায়ের জীবনী গ্রন্থ পাঠকের কাছে পৌঁছে এর সঠিক মূল্যায়ন হবে।
ধন্যবাদ।
Comments are closed.