'ডালের বদলে হলুদ জল,দুর্গন্ধ যুক্ত আলুর ভর্তা, পুরনো ঠান্ডা ভাত,' মিড-ডে মিলে নিম্নমানের খাবার ফিরিয়ে দিলো শিলচরের ছাত্রছাত্রীরা
মিড-ডে মিল পৌঁছে দেওয়ার নামে অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার দিচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিওগুলো। দুপুর ১২ টায় মিড-ডে মিলের খাবার দেওয়ার কথা অথচ সে খাওয়ার এসে পৌঁছায় আড়াইটায়। খাবারের ডাব্বা খুলতেই দুর্গন্ধ, ডালের বদলে পাতলা হলুদ জল, আলু ভাজার নামে পচা আলুর ভর্তা এবং দুর্গন্ধযুক্ত ভাত। যে লোকটি গাড়িতে করে খাবার নিয়ে এসেছে, সে জানেনা তার গাড়িতে কি দেওয়া হয়েছে। স্কুলের শিক্ষকরা খাবার পরীক্ষা করে ছাত্রদের জন্য সেগুলো বিতরণের অনুমতি দিলে তাঁরা জানিয়ে দিল খাবার মুখে দেওয়ার মত নয়। চিত্রটি দেখা গেল শিলচর শহরের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিএনএনকে বালিকা বিদ্যালয়ে।
একই অবস্থা জেলার প্রায় প্রত্যেকটি সরকারি বিদ্যালয়ের। ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীরা সারাদিন ধরে নিজেদের ক্লাসগুলো করার পরও এই খাবার খেতে রাজি হয়নি। তাদের বয়ান, আমরা এতদিন ধরে দুপুর ১২ টায় খাবার পেয়েছি। সারা সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন ধরনের খাবার থাকতো, কিন্তু সব থেকে প্রয়োজনীয় বিষয় ছিল পরিচ্ছন্ন এবং স্বচ্ছ খাবার। গত চার দিনের মধ্যে আজকেই প্রথম আমরা খাবারের গাড়ি আসতে দেখলাম। তবে সেটা প্রায় ছুটি হওয়ার সময়। প্রথমত শিক্ষকরা খাবার পরীক্ষা করেননি, তবু আমরা যখন ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবারগুলো খেতে এগিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে ভাতের দুর্গন্ধ আর ডালের বদলে হলুদ জল দেখে আর খাওয়ার ইচ্ছে হয়নি। সঙ্গে আলু ভাজার নাম করে পচা আলুর ভর্তা। এসব খাওয়ার থেকে না খেয়ে থাকা অনেক ভালো।”
ডিএনএনকে বালিকা বিদ্যালয় সহ শিলচর শহরের প্রায় সব কটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খাওয়ার গুণগত মান দেখে এগুলো ছাত্রদের মধ্যে বিতরণ করতে মানা করে সোমবার। ডিএনএনকে উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ পরিতোষ দে বলেন, “পুজোর ছুটি শেষ হওয়ার পর প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বিদ্যালয়েই ছাত্রীদের খাবার বানানো হয়েছে। তবে ১ নভেম্বর থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা খাবার পৌঁছে দেবে বলে সরকারিভাবে নির্দেশ আসে আমাদের কাছে। প্রথম দিন তারা স্কুল ছুটি হওয়ার কিছুক্ষণ আগে খাবার নিয়ে আসে। যেখানে আমাদের বিদ্যালয়ের ৩০০ জন ছাত্রীদের খাবার দেওয়ার কথা, সেখানে ৫০ জনের খাবার পাঠিয়েছে তারা। এসবের কি মানে আমরা জানি না। তবে এধরনের অসুরক্ষিত খাবার ছাত্র-ছাত্রীদের পাতে দিতে আমরা সম্মত নই।”
নরসিং উচ্চতর বালক বিদ্যালয়, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, নেতাজি বিদ্যাভবন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শিব কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সরাসরি খাবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অনেকেই এসবের প্রতিবাদ করেন।
খাবারগুলো এসে পৌঁছতে পৌঁছতে ছুটির সময় হয়ে যাওয়ায় বেশকিছু অভিভাবক বিদ্যালয় চত্বরে উপস্থিত ছিলেন। তারা খাবার দেখে অত্যন্ত রেগে যান এবং গাড়ি আটকে সংস্থার প্রতিনিধিদের আসতে বলেন। যে লোকটি খাবার নিয়ে এসেছে তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, তার কাছে শুধু খাবারগুলো তুলে দেওয়া হয়েছে। খাবারের গুণগত মান নিয়ে তার কাছে কোন উত্তর নেই। অভিবাবকরা সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বিদ্যালয়ে এসে খাবারের গুণগত মান দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এ খাবার যদি আমাদের বাচ্চারা খায় তবে অসুস্থ হয়ে পড়বে। সরকার এত টাকা খরচ করে এনজিওর হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়েছে এবং তারা নিম্নমানের খাবার শুরু থেকেই দিতে আরম্ভ করেছে। আমরা সরকারকে বলতে চাই এই খাবার গরুও খাবে না। আপনারা আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য খাবার দিতে না পারলে প্রকল্প বন্ধ করে দিন।এ ধরনের পচা খাবার দিয়ে তাদের ঠকাবেন না।”
এদিকে এতদিন ধরে মিড-ডে-মিল কর্মী হিসেবে কাজ করে আসা হাজার হাজার মহিলারা এই পরিবর্তনের ফলে কাজ হারিয়েছেন। শুরু থেকে প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত থেকে তারা অনেক কম পয়সায় কাজ করেছেন। এবার এনজিওগুলো তাদের নিযুক্ত করেনি, ফলে তারা প্রতিবাদ করছেন। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। সোমবার তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় এবং শিলচর সংলগ্ন রামনগর এলাকায় খাবার নিয়ে যাওয়া গাড়ি আটকে মিড ডে মিলের খাবার রাস্তায় ফেলে দেন তারা।
সবমিলিয়ে প্রকল্পটি শেষমেষ চরম ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
Comments are closed.