নির্যাতিতা ছাত্রী অভিযোগ তুলে নেওয়ায় ছাড়া পেলেন করিমগঞ্জ কলেজের পার্থ সারথি দাস
করিমগঞ্জ কলেজ কাণ্ড এক নতুন মোড় নিল। নির্যাতিতা ছাত্রী নিজের পূর্ব বক্তব্য পাল্টে নেওয়ায় এবং অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়ায় ছাড়া পেলেন অধ্যাপক পার্থ সারথি দাস। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, একদিন আগে স্নাতক শ্রেণীর এক ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে স্বনামধন্য করিমগঞ্জ কলেজের অধ্যাপক পার্থ সারথি দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ছাত্রীর সঙ্গে অধ্যাপক দাস অশালীন আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ তোলে কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্র ছাত্রীরা আন্দোলনও শুরু করে। এর ফলে পুলিশ ডাকতে হয় এবং পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে নির্যাতিতা ছাত্রী গতকাল কোর্টে জানায় যে ‘এটা নিছক ভুল বোঝাবুঝি ছিল’। ছাত্রীটির বক্তব্য শোনার পর এবং এফিডেভিট গ্রহণ করে কোর্ট জানায়, সবকিছু মিটমাট হয়ে যাওয়ায় অধ্যাপককে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।নির্যাতিতার পক্ষ থেকে অভিযোগ তুলে নেওয়ার পর অধ্যাপককে জেলে পুরে রাখার কোন মানে হয় না বলে কোর্টের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়। এদিন নির্যাতিতা ছাত্রী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ তুলে নেয় এবং অভিযোগকারীর পক্ষ থেকে কোর্টে এফিডেভিট জমা দেওয়া হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই দল একসঙ্গে বসে বিস্তর আলোচনার পর সমস্ত অভিযোগ উঠিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে কোনও চাপের মুখোমুখি হয়ে ছাত্রীটি অভিযোগ উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে কিনা জানতে চাইলে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, কোর্টের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে ছাত্রীটি জানায় যে তার উপরে কোন চাপ সৃষ্টি করা হয়নি। এদিকে কেস’র সঙ্গে জড়িত এক আইনজীবী জানান যে যদিও কোর্ট পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে অধ্যাপক দাসকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য, তবুও পুলিশ ঘটনাটির তদন্ত জারি রাখতে পারে। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় যে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য ছাত্রীটিকে বাধ্য করা হয়েছে তাহলে অধ্যাপক দাসকে আবার গ্রেফতার করা যেতে পারে।
এদিকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রায়শই এ ধরনের অভিযোগ ওঠার বিষয়টি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষক মহলের একাংশ। এই অবস্থায় তাদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত একাংশ শিক্ষক। একজন অধ্যাপক বলেন,” এটা আজকাল এক প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সত্যি বিপদজনক। প্রায়ই ছাত্রীরা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনছে। বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমগুলো এত বেশি সক্রিয় যে এ ধরনের খবর মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। করিমগঞ্জ কলেজের অধ্যাপকের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয়, ফলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এখন অভিযোগ তুলে নেওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। যৌন নির্যাতন যে অপরাধ, তা সবাই জানেন এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া উচিত।কিন্তু এক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যমকে বেছে নেওয়ার পরিবর্তে কিংবা কলেজ প্রাঙ্গণে আন্দোলনের পরিবর্তে থানায় গিয়ে এফআইআর দায়ের করা উচিত ছিল ছাত্রীটির। কাজেই অপরাধ করলে যেমন শাস্তি হওয়া উচিত,তেমনি মিথ্যা অভিযোগে কোনও শিক্ষক হেনস্থা হলে সেটাও সমীচীন নয়।”
Comments are closed.