Also read in

আপাতত কোয়ার্টার ছাড়তে হবে না কাগজ কল কর্মীদের: দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশে কিছুটা স্বস্তি

7দিল্লি হাইকোর্ট আজ এক নির্দেশে জানিয়েছেন যে, কাছাড় এবং নগাওঁ কাগজ কলের কর্মীদের আপাতত কোয়ার্টার ছাড়তে হবে না। গত বছর ২৩ ডিসেম্বর ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইবুন্যালের (এনসিএলটি-র) পক্ষ থেকে এক নির্দেশে কাগজ কলের প্রত্যেক কর্মচারীকে কাজে না আসার এবং যারা স্টাফ কোয়ার্টারে রয়েছেন তাদের অবিলম্বে কোয়ার্টার ছাড়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। এতে কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র হতাশার সৃষ্টি হয় এবং তারা ঐ নির্দেশটি মানবেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দেন। পাশাপাশি তারা নির্দেশের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন।

আজ এই আবেদনের প্রথম শুনানিতে বিচারপতি নাজিম ওয়াজিরি আপাতত নির্দেশটির উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। সরকারকে নির্দেশ দেন, পরবর্তী শুনানির আগে কোনওভাবেই যাতে কর্মচারীদের ওপর জোর খাটানো না হয়। সঙ্গে পিএফ কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কর্মচারীদের প্রাপ্য পিএফের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে তা জানাতে ।

উল্লেখ্য, ন্যাশনাল কম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল (এনসিএলটি)-র পক্ষ থেকে ২৩ ডিসেম্বর জারি করা এক নির্দেশে স্পষ্ট করে সরকারিভাবে কাগজ কলটিকে দেউলিয়া হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এনসিএলটি-র তরফে কুলদীপ বার্মা কাছাড় কাগজ কলের এইচ আর বিভাগের প্রধান অরিন্দম রায়কে জানান, প্রতিষ্ঠানটি এখন অকেজো এবং দেউলিয়া অবস্থায় রয়েছে। সরকারের তরফে লিকিউডেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এদিকে এই নির্দেশের খবর পেয়ে কাছাড় কাগজ কলের কর্মচারী ইউনিয়ন স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কর্মচারীরা যতদিন পর্যন্ত তাদের বকেয়া পাচ্ছেন না, তারা কোনও সরকারি নির্দেশে কাজ বন্ধ করবেন না। ইউনিয়নের তরফের মানবেন্দ্র চক্রবর্তী জানান, ৩৬ মাসের বেতন সহ বিভিন্ন খাতে কর্মচারীদের বকেয়া রয়েছে। সরকার যতদিন এগুলো মিটিয়ে দেবে না ততদিন এই ধরনের নির্দেশ কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না। মিলকে পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেওয়ার আগে অন্তত বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে, কেউ কোয়াটার ছাড়বেনা এবং কাজে যাওয়াও বন্ধ করবে না।

দিল্লি হাইকোর্টে রিট পিটিশনের মাধ্যমে এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়। কাছাড় কাগজ কল কর্মচারী ইউনিয়ন (আইএনটিইউসি) বনাম কেন্দ্র সরকারের এই মামলায় কাগজগুলোর তরফে মামলা লড়ছেন আইনজীবী কলিন গঞ্জালেস। মঙ্গলবার আদালতের তরফে আপাতত তাদের পক্ষে রায় দেওয়া হয়েছে। আগামী শুনানির দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি, এর আগে কোনভাবেই জোর করে কর্মচারীদের সরকারি আবাসন থেকে হটানো যাবে না, এটা হাইকোর্টের নির্দেশ। সঙ্গে আদালত পিএফ কমিশনারের কাছে জানতে চেয়েছেন তারা কেন কর্মচারীদের প্রাপ্য পিএফ মিটিয়ে দিচ্ছেন না। কর্মচারীদের বকেয়া পিএফ অতিসত্বর মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

আদালতের তরফে স্থগিতাদেশ আসায় কাগজ কল কর্মচারীরা অত্যন্ত আনন্দিত। পাশাপাশি তারা আশা ব্যক্ত করছেন, এবার হয়তো তাদের প্রাপ্য আদালতের নির্দেশেই আসবে। কাগজ কল ইউনিয়নের কর্মকর্তা মানবেন্দ্র চক্রবর্তী দিল্লি থেকে জানান, “আমাদের কোয়ার্টার ছাড়ার নির্দেশ আসার পর প্রত্যেক কর্মচারী এবং তাদের পরিবার ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন। দুই কাগজ কল মিলিয়ে এক হাজারের বেশি পরিবার কোয়ার্টারে থাকেন। পাশাপাশি কলকাতায় আমাদের কার্যালয়ে ও বেশকিছু পরিবার কোয়ার্টারে রয়েছেন। যদি এগুলো ছাড়তে হতো তাহলে সবাই রাস্তায় এসে নামতেন, এছাড়া আর কোন উপায় আমাদের কাছে বাকি ছিল না। ৩৬ মাস ধরে আমাদের বেতন বকেয়া, কর্মচারীদের সন্তানরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন। সরকার পক্ষের কাছে আমরা এব্যাপারে সাহায্য চেয়েছিলাম, কেউ কেউ আশ্বাস দিয়েছিলেন, তবে আশ্বাস গুলো ভরসাযোগ্য ছিল না। এবার আদালতের নির্দেশ আসায় আমাদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে, হয়তো এভাবেই বাকি বকেয়া টুকু আমাদের জুটবে।”

কর্মচারীরা শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এবং সংগঠনকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানান। সুস্মিতা দেব দিল্লি থেকে জানিয়েছেন, “কাগজ কল কর্মীদের লড়াইয়ে আদালতের আজকের নির্দেশ প্রথম জয়। তাদের কোয়ার্টার ছাড়তে হবে না এবং পিএফ কমিশন হয়তো আগামীতে বকেয়া মিটিয়ে দিতে বাধ্য হবে। তবে এখনো অনেক সংগ্রাম বাকি রয়েছে, আমার মনে হয় কাগজ কল কর্মীরা শক্ত হাতে নিজেদের দাবি টুকু আদায় করতে সমর্থ হবেন।”

Comments are closed.