সোনাই এলাকার যুবকের করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভাইরাল গুজবে স্বাস্থ্য বিভাগ : বরাক উপত্যকায় কেউ 'করোণা' আক্রান্ত নন
বিশ্বজুড়ে যখন করোণা নিয়ে সবাই আতঙ্কিত, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় গতকাল রাত থেকে একটি ম্যাসেজ বরাকবাসীকেও শঙ্কিত করে তুলেছে। সোশ্যাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল হওয়া বার্তাটিতে বলা হয়েছে যে সোনাইয়ের বাসিন্দা ফারুক হোসেন বরভূঁইয়া করোণা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং তাকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’য়ে ভর্তি করতে হবে। বরভূঁইয়া শিলচর বিমানবন্দরে ‘সেল্ফ রিপোর্টিং ফর্ম’টি পূরণ করেন এবং পূরণ করা ফ্রম অনুযায়ী তিনি কাশি এবং জ্বরে ভুগছেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক দ্বারা জারি করা ফর্ম অনুযায়ী,”করোণা ভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে ভারতে আগত সব ব্যক্তিকে এই ফর্মটি পূরণ করতে হবে। নিজের স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে হবে।” ফারুক হোসেন বরভূঁইয়া এবং বিমানবন্দর কর্মকর্তার দ্বারা স্বাক্ষরিত ওই ফর্মে উল্লেখ করা হয়েছে, চিন থেকে আসার পথে ফারুক হোসেন দিল্লিতে থামেন।
এদিকে ফারুক নিজে বলছেন যে তিনি কখনো চিন ভ্রমণ করেননি। এবং এবারের ভ্রমণে তিনি কোন বিদেশ সফরও করেন নি। “আমি প্রথমে রাজস্থান এবং সেখান থেকে দিল্লি হয়ে শিলচর এসেছি। আমার কাশি ও জ্বর হয়েছিল এবং আমাকে শিলচর বিমানবন্দরে স্ক্রীনিং করতে বলা হয়েছিল। তারা আমাকে যা যা করতে বলেছেন আমি তা করেছি। তবে কেন এ ধরণের ধারণার উদ্রেক হলো এবং চিন সফরের কথা বলা হলো তা আমার জানা নেই। কারণ আমি কখনো চিন যাইনি” বরাক বুলেটিনের সঙ্গে কথা বলার সময় ফারুক এ কথাগুলো উল্লেখ করেন।
তিনি সেই সঙ্গে এও বলেন,” মিথ্যে আমাকে এভাবে জড়ানো হচ্ছে। কেন মেসেজটি এভাবে ভাইরাল হলো এ বিষয়ে আমার কোন ধারণা নেই। বরং আমি ভূয়া সংবাদ প্রচারকারী ব্যক্তির সন্ধানের জন্য সাইবার সেলে অভিযোগ করার পরিকল্পনা করছি।”
ফারুক সেই সঙ্গে জানান, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গিয়েছিলেন।”চিকিৎসকরা আমার সাধারন চেকআপ করেন এবং জানান যে সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। আমি ভালো হচ্ছি” জানালেন ফারুক। তিনি আরো বলেন যে মেডিক্যাল কলেজের সুপারিনটেনডেন্ট ডঃ অভিজিৎ স্বামীকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন, বিমানবন্দরের যে কর্মকর্তা এই প্রতিবেদন ফাঁশ করেছেন সেই কর্মকর্তার সন্ধান করতে।”ডক্টর স্বামী আমাকে বলেন যে শিলচর বিমানবন্দরের দলটি তার অধীনে আসে না তাই তিনি এ ব্যাপারে কোনো সাহায্য করতে পারবেন না।” ফারুক যোগ করেন।
অন্যদিকে কাছাড়ের স্বাস্থ্য সেবার যুগ্ম পরিচালক ডক্টর সুদীপ জ্যোতি দাস বরাক বুলেটিনকে নিশ্চিত করেন যে ফারুক হোসেন বরভূঁইয়া ‘করোণা’ আক্রান্ত নন।” হ্যাঁ এটা সত্যি যে ফারুকের কিছু লক্ষণ ছিল। তবে পুঙ্খানুপুঙ্খ চিকিৎসার মাধ্যমে জানা গেছে যে তিনি সাধারণ সর্দি কাশি এবং জ্বরে ভুগছিলেন।” বললেন ডঃ সুদীপ জ্যোতি দাস। তবে ডাক্তার ফারুককে বাইরে জনগণের মধ্যে না যেতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু রিপোর্ট নেতিবাচক হওয়ায় ফারুক এ কথায় রাজি হননি। এমনকি তিনি একটি বিয়েতে যোগ দিয়েছেন এবং তার মোটরবাইক নিয়ে সর্বত্র ঘোরাফেরা করছেন।
এদিকে ফারুক জানান যে তিনি এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজারটিরও বেশি ফোন পেয়েছেন। যেখানে সবাই তাকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করছেন। ফারুক আরো জানান যে জনগণের প্রতিক্রিয়া দেখে তিনি হতবাক।
বিষয়টি যদিও এখনও অবাক করার মত যে তিনি কখনো চিনদেশে যাননি, অথচ সেলফ রেপোটিং ফর্মে লেখা ছিল যে তিনি চিন থেকে ফেরার পথে দিল্লিতে থেমে ছিলেন এবং ফারুক ফর্মে নিজে স্বাক্ষরও করেছিলেন।
তবে এখন স্পষ্ট যে বরাক উপত্যকায় কোনও করোণা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী নেই। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কাজেই সোশ্যাল মিডিয়া এবং হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজের দৌলতে যারা আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন, স্বাস্থ্যবিভাগের জারি করা প্রতিবেদনে তারা আপাতত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।
Comments are closed.