Also read in

আধার সম্পর্কে বরাক উপত্যকায় কৌতূহল, আতংক ও উৎকণ্ঠার অন্ত নেই, এই প্রতিবেদন কিছুটা স্বস্তি দেবে।

গত কয়েক মাস ধরে,বরাক উপত্যকার বাসিন্দারা প্রায় বিনিদ্র রজনী যাপন করছে যার মূল কারন হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা NRC তে নাম অন্তর্ভুক্ত করা । এখন তাদের জন্য আরেকটি মাথা ব্যাথা এসে গেছে আধার কার্ড। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ ইতিমধ্যেই আধারকে যুক্ত করার জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বাড়ানোর জন্য একটি আবেদন নাকচ করেছে। বিভিন্ন মূল সেবার সাথে আধার সংযোগের সময়সীমা ৩১ মার্চ, ২০১৮ এবং এতেই বরাক উপত্যকা তথা সমগ্র আসামে এক আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

খুব দ্রুতগতিতে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে যে যদি ৩১ শে মার্চ ২০১৮ তারিখের আগে আপনি যদি আধার লিঙ্ক না করেন তবে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি ব্লক হয়ে যাবে অথবা যদি আপনার কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকে তবে আপনি আধার পাবেন না,আবার কেউ কেউ বলছেন যে আধার কার্ড পেতে গেলে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকাটা বাধ্যতামূলক এবং ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকসংখ্যা বাড়াতে আধার কে হাতিয়ার করছে।

বরাক উপত্যকার সকল নাগরিকদের আমরা আবেদন করব “আতঙ্কিত হবেন না” এবং একইসঙ্গে সংবাদ চ্যানেল ও দৈনিক খবরের কাগজগুলোকে তাদের সম্প্রচার বা ছাপার সময় সামান্য সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ করি। এখন আসুন বিস্তারিত দেখা যাক …

আধার কি?

এটি পরিচিতির জন্য ১২ অংকের একটি বিশেষ শনাক্তকরণ সংখ্যা যেটিকে ছয়টি মূল পরিষেবার সাথে বাধ্যতামূলকভাবে সংযুক্ত করতে হবে যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, এল.পি.জি অ্যাকাউন্ট, প্যান কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড,রেশন কার্ড ও মোবাইল নম্বর। একবার এই আধার নম্বর পেয়ে গেলে খুব সহজেই বাধ্যতামূলক সেবাগুলির সঙ্গে সংযোগ করা যাবে। আধার সংযুক্ত করা খুবই সহজ প্রক্রিয়া এবং অনলাইন ও অফলাইনে উভয়ভাবেই করা যায়, তাই নাগরিকদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে সময় ব্যয় করার ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না, তারা কল এবং এসএমএস এর মাধ্যমেও এটি করতে পারবেন ।

ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া(ইউআইডিএআই)হল সরকারের নোডাল এজেন্সি , আধারের তথ্যগুলি সংগ্রহ করে এবং ১২-ডিজিটের সংখ্যা প্রকাশ করে। ইউআইডিএআই ইলেক্ট্রনিক্স এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। আধার ২০০৯ থেকে কার্যকরী হয়, ইউআইডিএআইয়ের তৎকালীন চেয়ারম্যান নন্দন নিয়েলকেনির(সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইনফোসিস) তত্ত্বাবধানে আধারের নাম এবং লোগো ডিজাইন করা হয়েছিল।

আধার করার জন্য কি অর্থের প্রয়োজন?

না, ভারত সরকার অনেক অনুমোদিত এজেন্সী বা সংস্থা নিয়োগ করেছে এবং তাদের ব্যেয় বহন করছে ; আধারের জন্য আবেদনকারী নাগরিককে এক টাকা ও দিতে হবে না। যদি কেউ অর্থের জন্য জিজ্ঞাসা করে, এই লিঙ্কে একটি অভিযোগ দায়ের করুন, https://pgportal.gov.in/ , সরকার ব্যবস্থা গ্রহন করবে । দয়া করে কেউ অর্থ প্রদান করবেন না …

 

Large number of people are applying for AADHAAR, SBI Silchar branch.

 

৩১ মার্চ,২০১৮ কি আধার কার্ড তৈরির অন্তিম তারিখ?

না, দয়া করে আতঙ্কিত হবেন না … ৩১ শে মার্চ ২০১৮ সময়সীমা আসামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা । দূরদর্শনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে স্টেট ব্যাঙ্কের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শ্রী প্রদীপ পাল সবিস্তারে বলেছেন যে, “যদি কে,ওয়াই,সি (আপনার গ্রাহককে জানুন) সঠিকভাবে জমা দেওয়া হয় তবে ৩১ শে মার্চ এর পরে ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করা হবে না, কারণ আধার নথিভুক্তিকরণ প্রক্রিয়া আসামে একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।“ সুতরাং, আতঙ্কিত হয়ে পেছনের দরজা খুজবেন না । এটি একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া যা চলতে থাকবে ।

আধার নথিভুক্তির জন্য কোথায় আবেদন করতে হবে ?

সরকারের আদেশানুসারে সম্প্রতি ষ্টেট বাঙ্ক এর পাঁচটি শাখা (শিলচর, নিউ শিলচর, হাইলাকান্দি, বদরপুর ও করিমগঞ্জ), দেনা ব্যাংকের একটি শাখা এবং এলাহাবাদ ব্যাংকের একটি শাখা বরাক উপত্যকাতে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে। বর্তমানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সরকার নিয়োজিত সংস্থাকে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো প্রদান , নথিভুক্তিকরণ আবেদন পত্র পরীক্ষা ও সামগ্রিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছেন ; আসল কাজগুলো ওই সংস্থাই করছে। ব্যাংকগুলি এখন শুধু তাদের নিজস্ব গ্রাহকদের (পরিবার সদস্য সহ) আবেদনই গ্রহণ করছে। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ব্যাংক এবং ডাক বিভাগে ও নথিভুক্তিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে ; মানে এই মুহূর্তে এসবিআই, এলাহাবাদ ব্যাংক এবং দেনা ব্যাঙ্কের গ্রাহক ছাড়া অন্যান্যদের অপেক্ষা করতে হবে।

আবেদনপত্রের সঙ্গে প্যান কার্ড বা ভোটার আই কার্ড ও ব্যাঙ্ক পাশ বুকের ফটোকপি দিতে হবে (মূল নথিগুলো সঙ্গে নিতে হবে )। আপনার ছবি নেওয়া হবে, দশটি আঙ্গুলের ছাপ বায়মেট্রিক পদ্ধতিতে নেওয়া হবে, চোখ (আইরিশ) স্ক্যান করবে । বর্তমানে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আমদের এখানে একজনের দশ থেকে পনের মিনিট লাগছে (যদি লিঙ্ক ভালো থাকে ) । এইভাবে একদিনে একটা মেশিনে ৩০ জনের বেশি নথিভুক্ত করা যাচ্ছেনা । তাই বোঝাই যাচ্ছে আধার নথিভুক্তকরন প্রক্রিয়া এখনো বিশ বাঁও জলে ।

 

Comments are closed.