লকডাউন'র পর: কি লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের কোলে ?
শুক্লা চৌধুরী
তারপর! তারপর কি হবে ! শুধু আমাদের নয়, শুধু ভারতবাসীর নয়, সারা পৃথিবী জুড়েই এই প্রশ্ন উঠবে। এই কদিন তো আমাদের যেভাবেই হোক কেটে যাবে বাড়ির ভেতরে। সরকার নিম্নবিত্তদের বাড়ি বাড়ি খাবার পাঠাচ্ছেন, কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে। করোনার সঙ্গে যুদ্ধ তো এত শীঘ্র মিটে যাওয়ার নয়। যদিবা কোনক্রমে সে যুদ্ধ কাটিয়ে উঠি, আবার গেল গেল রব উঠবে, চারিদিকে হাহাকার উঠবে। অর্থনৈতিক মন্দা, সারা পৃথিবীর একই অবস্থা হবে। বিদেশিদের আসা-যাওয়া কমে যাবে। ট্যুরিজমে বড় ধাক্কা লাগবে। সবাই সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখবে, কারণ আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত বিশ্বজুড়ে এই মহামারী সবাইকে গ্রাস করার জন্য বসে আছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, কোন কিছুই ভুলবার নয়। এগুলো আমরা সিনেমায় দেখেছি বা বইয়ে পড়েছি। কি করুণ সেই দিনগুলো। দুর্ভিক্ষ ! কি মর্মান্তিক সেই দৃশ্য, একজনের খাবার আর একজন কেড়ে নিচ্ছে! এবার আরও অনেক বড় যুদ্ধ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী কত দৃঢ়, সহিষ্ণু, সাহসী এটা বোঝা যায় তার এই কঠিন সিদ্ধান্তে। তালাবন্ধ – লকডাউন ! সত্যি কথা বলতে কি, এই এত সহজ কথাটা যে কত কঠিন সেটা আজ বুঝতে পারলাম। তিন সপ্তাহের এই তালা বন্ধে দেশের অর্থনীতি যে কোথায় গিয়ে নামবে, সেটা তো বলবেন তাবড় তাবড় অর্থনীতিবিদরা । প্রধানমন্ত্রী সেটা জানেন, কিন্তু দেশের জনগণকে বাঁচানোর অঙ্গীকার যে তিনি নিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী তার দেশের জনসাধারণের মঙ্গলার্থে এরকম একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
এবার কথা হলো, আমাদের কি হবে। আমরা মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তরা কি করব। আমরা প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের সমস্যার কথা বুঝি না, আমাদের পেটে খিদে। আমরা কাজ চাই। এই সামাজিক অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে তো অনেক দিন সময় লাগবে। এরই মধ্যে আরেকটা সমস্যা শুরু হয়ে গেছে। সেটা হলো দিনমজুরদের ঘরে ফেরা, ওদের আটকানো যাচ্ছে না। ট্রেন, বাস বন্ধ হলে কি হলো ওরা হেঁটেই দিল্লি থেকে রাজস্থান , উত্তর প্রদেশ, বিহারে ওদের গ্রামে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত । খাদ্য সমস্যা তো আছেই, তার ওপর করোনা থেকে ওদেরকে রক্ষা করতে হবে। আমরা চাই না করোনা গ্রাম পর্যন্ত বিস্তার করুক। তাহলে আমাদের এতদিনের সমস্ত পরিশ্রম বিফল হবে। শুধু একটা কথাই বলবো “তফাৎ যাও”।
কিন্তু আমরা লড়বো; আমাদের নিজের জন্য, দেশের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের জওয়ানরা যে চিরকালই আমাদের সুরক্ষার জন্য লড়ে আসছেন, আর এখন এই দুঃসময়ে স্বাস্থ্যকর্মী, সুরক্ষা কর্মী, সাফাই কর্মী সবাই অবলীলায় আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখার জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। কিছুদিনের এই খরা আমরা অবশ্যই কাটিয়ে উঠব। এখন আর হ্যান্ডশেক নয়, বিদেশেও এখন সবাই সবাইকে দুই হাত জোড় করে করছে, এটাই তো আমাদের পরম্পরা। আর এই যুদ্ধ আমরা জিতবোই। বিশ্ব চেয়ে দেখবে, আমরা চাইলে সব পারি। কবির ভাষায়,”ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।”
Comments are closed.