স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে ষাটোর্ধ্ব দম্পতিকে মধ্যরাত পর্যন্ত হেনস্থা, প্রশ্নের মুখে জেলাশাসকের প্রতিশ্রুতি
জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি দুদিন আগেই ফলাও করে বলেছিলেন ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা, দিব্যাঙ্গ ও শিশুদের সরকারি কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে না বরং তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে তাদের ঘরকে কনটেইমেন্ট ঘোষণা করা হবে। অথচ রবিবার বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রামনগরের আইএসবিটিতে ৬৮ বছরের এক প্রাক্তন শিক্ষক এবং তার অসুস্থ স্ত্রীকে স্বাস্থ্যপরীক্ষার নামে বসিয়ে রাখা হলো। পশ্চিমবঙ্গ থেকে গাড়ি করে তারা ফিরেছেন, ষাটোর্ধ মহিলা রাস্তার ধকল সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অথচ সারা সন্ধ্যা একটু জল চাইলেও তাকে দেওয়া হয়নি। একবার খাবার দেওয়া হয়েছে, সেটাও অত্যন্ত নিম্নমানের। কিন্তু তারা খাবার চাইছেন না, শুধু বলছেন, “আমরা বৃদ্ধ এবং অসুস্থ, আমাদের একটু আগে পরীক্ষা করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিন। বাড়িটাকে পুরোপুরি কনটেনমেন্ট করুন, আমরা নিয়ম ভাঙবো না, যতদিন বলবেন বাড়িতে থাকব।”
প্রাক্তন শিক্ষক অরুণ চক্রবর্তী এবং তার স্ত্রী সন্ধ্যা চক্রবর্তী এভাবেই মধ্যরাত পর্যন্ত রামনগরের আইএসবিটিতে বসে রয়েছেন। সন্ধ্যা চক্রবর্তীকে ফোন করলে তিনি জানালেন, সন্ধেবেলা খুব জল তেষ্টা পেয়েছিল, জল বিতরণও হচ্ছিল, অথচ তিনি চাইতে বলা হলো, “আপনাদের জন্য এই জল বরাদ্দ হয়নি।” তারা লকডাউন হওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপে ঘুরতে গেছিলেন। সেখানে আটকা পড়ে দুমাস ধরে অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছেন। শেষমেষ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর টুইট দেখে সেই নম্বরে যোগাযোগ করেছেন এবং অনেক টাকা খরচ করে গাড়ি ভাড়া করে শিলচর ফিরেছেন। রাস্তায় যেখানে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে তারা করিয়েছেন। শিলচর এসেও সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই বাড়ি যেতে চাইছিলেন। তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে দুই বয়স্ক ব্যক্তিকে একপ্রকার হেনস্তা করার কতটুকু প্রয়োজন ছিল এব্যাপারে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন।
জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী ঘটনাটি ফেসবুকে তুলে ধরেন। তার প্রশ্ন, আমরা কি এই দুঃসময়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের প্রতি আরেকটু সংবেদনশীল হতে পারিনা?
প্রাক্তন শিক্ষক অরুণ চক্রবর্তীর বাড়ি মালুগ্রামে। তিনি স্মার্টফোন ব্যবহারে খুব একটা অভ্যস্ত নন। তবু অনেক কষ্টে নিজেদের নাম রেজিস্টার করান। গাড়ি ভাড়া করে নিজের জেলায় ফিরেন। এখানে তার সঙ্গে এধরনের ব্যবহার করা হবে এটা ভাবতে পারেননি। তিনি জানান, সন্ধ্যা আটটায় তারা যে গাড়ি করে এসেছিলেন সেটা ছেড়ে দেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। তাদের সরকারি গাড়িতে করে বাড়িতে অথবা কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে বলে জানানো হয়। রাত প্রায় একটায় তাদের বলা হল একটি বাসে উঠতে যেখানে আরো যাত্রীরা রয়েছেন। তারা হাতজোড় করে বললেন, “আমরা বয়স্ক ব্যক্তি ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা আমাদের বেশি। দয়া করে আমাদের অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে না বসিয়ে একটু আলাদা করে যেখানে পৌঁছানোর পৌঁছে দিন।”
তারা বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে পড়েছিলেন, বয়স্কদের একটু আলাদা রেখে প্রয়োজনে বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইন করা হবে। তবে এবার তারা ভয় পাচ্ছেন এই প্রক্রিয়ার মধ্যে যদি কোনও ব্যক্তি এমন থাকে যার শরীরে সংক্রমণ রয়েছে এবং এখনো পরীক্ষা হয়নি, তবে আখেরে তারাও আক্রান্ত হবেন।
উল্লেখ্য জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি বলেছিলেন, যাদের ভাইরাস সংক্রমনের সম্ভাবনা বেশি তাদের সরকারি কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে না। তাদের হাতে সিল লাগিয়ে দেওয়া হবে যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন তাদের কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের সব টেস্ট হয়ে রেজাল্ট নেগেটিভ আসছে না ততক্ষণ তারা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে বেরোতে পারবেন না। তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরকারিভাবে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমরা চাইব পাড়াপড়শি এবং এলাকার মানুষ তাদের যথাসম্ভব সাহায্য করুন। তবে রবিবার সন্ধ্যায় যা হলো এতে প্রশাসনের প্রতিশ্রুতিগুলো প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে।
Comments are closed.