ছাত্র-যুবকেরা ডন বস্কো স্কুলে ভাঙচুর করে হুলুস্থুল করছে, ম্যাজিস্ট্রেট পাঠাতে হল প্রশাসনকে
যেসব আন্তঃরাজ্য যাত্রীদেরকে ডন বস্কো স্কুলে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছিল তাদের আচার-আচরণে তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছেন জেলা প্রশাসন। কাছাড়ের জেলা উপায়ুক্ত আজ সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তিনি জানান, ডন বস্কো স্কুলে যাদের কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্র এবং যুবক। “তারা দাবি করছে, তাদের জন্য সব কক্ষে একটা করে টয়লেট দিতে হবে”।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য এবং পরিবার উন্নয়ন মন্ত্রকের সুপারিশকৃত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর অনুযায়ী প্রত্যেকটা রুমে আলাদা আলাদা টয়লেট দিতে পারলে খুবই ভালো। “প্রশাসনকে রাতারাতি শতশত কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বানাতে হচ্ছে, এই পরিস্থিতি অনুযায়ী আসাম কিংবা ভারতবর্ষের কোন জায়গায় প্রত্যেক কক্ষে একটি করে টয়লেট সম্ভব নয়। এমনকি আমাদের বাড়িতে ও প্রত্যেকটা রুমের সাথে একটা করে টয়লেট থাকে না”, ক্ষোভের সঙ্গে জানান জল্লি ।
জেলা উপায়ুক্ত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন যে, এ পর্যন্ত মোটামুটি ৮৫০০ ব্যক্তি বাইরে থেকে কাছাড় জেলায় এসেছেন এবং তাদের সবাইকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। “আমরা অন্য কোন দলকে নিয়ে এত সমস্যায় পড়িনি”, বললেন জাল্লি। “ওরা খাবার নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছিল, খবর নিয়ে জানলাম খাবারের মান সম্বন্ধে অভিযোগ নয়, অভিযোগ হলো পরিমাণ নিয়ে; খাবার কম দেওয়া হয়েছিল অভিযোগ তাদের। কিন্তু আসল ঘটনা হলো ওরা একজনে দুটো বা তিনটে করে প্যাকেট নিয়েছিল। এই ব্যাপারে আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, যদিও আমরা এগুলো প্রকাশ করব না। কারণ আমরা চাই না ওদের চেহারা সামনে চলে আসুক ।”
শুধু খাবার এবং সাধারণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপার নয়, ওরা সামাজিক দূরত্বের প্রটোকলের কথাও তুলেছে। জেলা উপায়ুক্ত জানালেন , “তারা প্রতিমুহূর্তে তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য দাবি করছে। ওই গ্রুপ থেকে একজন ইতিমধ্যে কোভিড পজিটিভ এসেছে, তাই ১৪ দিনের আগে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন উঠতে পারে না। আমি বুঝতে পারি পরিস্থিতি খুবই জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং। গতকাল ওরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিল, পুলিশের সাথে ও সহযোগিতা করেনি,” জানালেন উপায়ুক্ত।
গতকাল পরিস্থিতি বিবেচনায় ম্যাজিস্ট্রেট পাঠাতে হয়েছিল ডন বস্কো স্কুলে । এই প্রসঙ্গে জেলা উপায়ুক্ত বলেন “সাধারণত আমরা কোন কনটেইনমেন্ট জোনে কাউকে প্রবেশ করতে পাঠাই না । কিন্তু গতকাল বাধ্য হয়ে ম্যাজিস্ট্রেটকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ভেতরে যেতে হয়েছিল, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।”
জেলা উপায়ুক্ত সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “প্রশাসন কোয়ারান্টাইনে থাকা সবার সাথেই সুন্দরভাবে আলাপ-আলোচনা করে চলেছেন । ওরা বয়সে তরুণ, খুব তাড়াতাড়ি উত্তেজিত হয়ে পড়ে । ওরা ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, টুইট করছে এবং ভাবছে এভাবেই বোধ হয় দেশটা চালানো যাবে। কাছাড় জেলা প্রশাসন এই জেলার ১৮ লক্ষ লোকের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। কোন পরিস্থিতিতেই এই লোকেদেরকে বিপদে ফেলতে দেওয়া হবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, একটা এফআইআর ওদের জীবনের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিতে পারে, এটা আমরা চাই না”, জানান জেলা উপায়ুক্ত।
ডন বস্কো স্কুলের স্বত্বাধিকারী ও স্কুলে ভাঙচুর নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন । প্রশাসনের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে ব্যাপারটা আপাতত মিটে যাক, তারপর ভাঙচুর গুলো আবার ঠিক করে দেওয়া হবে। কীর্তি জাল্লি অনুরোধ জানান, “এই দলে যারা আছেন তাদের আত্মীয়-স্বজনদের অনুরোধ করছি যাতে ফোনের মাধ্যমে এদেরকে বোঝানো হয়। প্রশাসনিক শত ব্যস্ততার মধ্যেও ওইখানে একজন সহকারি ম্যাজিস্ট্রেট রাখতে হয়েছে, তাদের উচিত সর্বাবস্থায় সহযোগিতা করা ।”
এখানে উল্লেখ্য, গতকাল রাত্রে সাত বছরের শিশু কন্যা নাসরিন বেগমকে এই ডন বস্কো স্কুলের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা উপস্থিত হলে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাদের। অ্যাম্বুলেন্স সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আটকে রাখা হয়। অবশেষে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ছুটে যান প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিরা। পিপিই কিট পরে ভেতরে যেতে হয় ম্যাজিস্ট্রেট বিকাশ ছেত্রী সহ অন্যান্য প্রায় পনের জন পুরুষ ও মহিলা পুলিশকর্মীকে। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে প্রায় আড়াই ঘন্টা পরে পরিস্থিতি শান্ত করে কভিড পজিটিভ রোগীকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
Comments are closed.