সেনাবাহিনীতে কর্মরত শিলচরের ছেলে জম্মু ও কাশ্মীরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত, ক্ষোভ শিলচরে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত শিলচরের ছেলে বীরেন্দ্র সিংহের বুধবার রাতে আকস্মিক ভাবে মৃত্যু হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারায় কর্মরত থাকাকালীন গুলিবিদ্ধ হওয়ায় মৃত্যু হয় তাঁর। শুক্রবার সকালে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে মৃতদেহটি শিলচর সংলগ্ন চেংকুড়ি এলাকায় বীরেন্দ্রর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তবে তাঁর অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং সেনাবাহিনীর তরফে তাঁকে শহীদের সম্মান না দেওয়ার বীরেন্দ্রর পরিবারের লোকজন এবং এলাকাবাসীরা চরম অসন্তোষ ব্যক্ত করেন।
তাঁরা জানিয়ে দেন সেনাবাহিনী এবং সরকারের তরফে বীরেন্দ্রকে ‘শহীদ’ বলে ঘোষণা করে তাঁকে প্রাপ্য সম্মান না দেওয়া পর্যন্ত মৃতদেহের সৎকার করা হবে না। পরে জেলাশাসকের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রয়াত সেনার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর রাষ্ট্রীয় রাইফেল্সে সিপাহী পদে নিযুক্ত ছিলেন বীরেন্দ্র । বুধবার মধ্যরাতে নিজের কক্ষে গুলিবিদ্ধ হন তিনি, পরে সেনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মেডিক্যাল অফিসার ক্যাপ্টেন পবন ধামানের অফিসিয়াল রিপোর্ট অনুযায়ী বুধবার রাত প্রায় ১টার সময় গুলিবিদ্ধ হন বীরেন্দ্র। গুলিটি তাঁর পিঠের নিচের দিকে লাগে এবং খুব বেশী রক্তপাত হওয়ায় ঘটনার এক ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যু হয়। তবে গুলিটি কিভাবে লাগল এবং সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের মত সুরক্ষিত এলাকায় কে চালালো এসব নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।
বীরেন্দ্র যেখানে ছিলেন সেই কুপওয়ারা বা জম্মু ও কাশ্মীরে সম্প্রতি কোনও গুলাগুলির ঘটনা ঘটেনি, তাই এখানে প্রশ্ন আসছে কীভাবে তিনি বন্দুকের গুলিতে মারা যান?
পরিবারের সদস্যদের মতে আগামী ১৩ মার্চ বাড়ি আসার কথা ছিল বীরেন্দ্রর। তবে বৃহস্পতিবার এক অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন করে তাঁর পিতা যোগেন্দ্র সিংহকে জানায় যে বীরেন্দ্র গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। অন্য এক ব্যক্তি বীরেন্দ্রর ভাইকে ফোন করে নিজেকে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে পরিচয় দেয় এবং জানায় যে বীরেন্দ্র আত্মহত্যা করেছে। এসবের ফলে পরিবারের সদস্যরা এবং স্থানীয় মানুষ উত্তেজিত হয়ে পরেন। যোগেন্দ্র এদিন সেনাবাহিনীর কমান্ডার অফিসারের কাছে একটি ই-মেইল পাঠিয়ে কথাটি জানান এবং ঘটনার সত্যতা জানতে চান। তবে তাৎক্ষণিক ভাবে কোনও জবাব আসেনি। পরে সেনাবাহিনীর তরফে যোগেন্দ্রকে ই-মেইল পাঠিয়ে বীরেন্দ্রর মৃত্যুর খবরটি সঠিক বলে জানালেও তারা উল্লেখ করেন যে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তিনি দেহটি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবেনা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পরিবারের সদস্যদের জানানো হয় যে শুক্রবার সকালে বীরেন্দ্রর মৃতদেহ তাঁর বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। এব্যাপারে জেলা প্রশাসনকেও জানানো হয়। তবে শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসন বা সরকারের পক্ষ থেকে কেউ মৃতদেহটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করতে আসেন নি। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর তরফেও বলা হয় যে তারা শুধু আনুষ্ঠানিক সেল্যুট জানাবেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব ওনার দেবেন না। এতে সাধারণ মানুষ অসন্তুষ্ট হয়ে পরেন। বীরেন্দ্রর পরিবারের সদস্যরা বলেন, আমরা ছেলেকে সেনা বাহিনীতে পাঠিয়েছি, সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কর্মরত অবস্থায় জওয়ানের মৃত্যু হলে তাঁকে শহীদ বলেই ঘোষণা করা হয় এবং যোগ্য সম্মান দেওয়া হয়। অথচ আমাদের ছেলের মৃত্যু নিয়ে এসব কিছুই হচ্ছেনা। সেনা জওয়ান মারা গেলে দেশের প্রধানমন্ত্রীও শোক ব্যক্ত করেন আর আজ একজন জনপ্রতিনিধি তো দুরস্ত, জেলাশাসকও আসেন নি। এই অপমান আমরা মানতে পারছি না। আমদের ছেলে দেশের কাজে গিয়ে প্রান দিয়েছে, তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান না জানালে আমরা শেষকৃত্য করব না।
পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলাশাসক এস লক্ষ্মণণ তাঁর দুই প্রতিনিধিদের পাঠান। তাঁরা পরিবারের সদস্য এবং এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে রাজি করান। শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে ‘গার্ড অব ওনার’ দেওয়া হয়। প্রায় কয়েক হাজার মানুষ প্রয়াত জওয়ানের শেষ যাত্রায় অংশ নেন।
Comments are closed.