আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মরণে উপেক্ষিত বাংলা!
চীন ও ভারতের সৈন্যদের সংঘর্ষে ভারতীয় সেনার ২০ জন জওয়ান প্রাণ দিয়েছেন। এই ঘটনায় সারাদেশ দুঃখিত এবং রাগান্বিত। শিলচরের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ও এর থেকে বাদ যায়নি, তারা বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবাদ অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। বরাক উপত্যকা একাদশ শহীদের ভূমি, ১১টি তরুণ প্রাণ মাতৃভাষার রক্ষার্থে এখানে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। অথচ শহীদের রক্তে রাঙানো এই ভূমিতে গড়ে ওঠা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়েই উপেক্ষিত বাংলা ভাষা। চীন সীমান্তে প্রাণ দেওয়া শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে বৃহস্পতিবার বিকেলে যে অনুষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজন করেছিল, এতে ইংরেজি এবং হিন্দিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি লেখা থাকলেও বাংলার কোনও জায়গা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতি এবং সম্পাদক পদে যারা জয়ী হয়েছিলেন দুজনেই বাঙালি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সহ বিভিন্ন পদে যারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, প্রত্যেকেই বরাক উপত্যকার বাঙালি। অথচ তাদের উপস্থিতিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপেক্ষিত হয় উপত্যকার মাতৃভাষা।
সাংবাদিক সম্মেলনে তারা প্রত্যেকেই বাংলায় কথা বলেন। অথচ শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশদ্বারে যে ব্যানার লাগানো হয়েছে, সেখানে হিন্দি এবং ইংরেজিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি লেখা রয়েছে। অসমের বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বাংলার কথা লিখতে ভুলে গেলে, এটা ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত।
বিশ্ববিদ্যালয় নানান অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং আন্দোলনের জন্য খবরের শিরোনামে থাকছে। যখন বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের ১০০ সেরার তালিকা থেকে বাদ পড়ল, তখন উপাচার্য দিলীপ চন্দ্র নাথ বলেছিলেন, বছরব্যাপী ছাত্র আন্দোলন এর জন্য দায়ী। ছাত্ররা এর বিরোধিতা করে উপাচার্যকে অযোগ্য বলে আখ্যা দেয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পেছনে উপত্যকার ১০ বছরের আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে। বরাক উপত্যকায় যেকোনও বড় আন্দোলনের পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করে ১৯৬১’র ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। আসাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি।
১৯৬১’র বাংলা ভাষা আন্দোলনের পর এই উপত্যকায় সবথেকে বড় আন্দোলন ছিল আসাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আন্দোলন। আকসার প্রতিষ্ঠাতা প্রদীপ দত্তরায় সহ অঞ্চলের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। তাদের আন্দোলনের মূল শক্তি ছিল মাতৃভাষা। অথচ তাদের উত্তরসূরী এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আধিকারিকরা বাংলা ভাষার প্রতি উপেক্ষার মনোভাব প্রদর্শন করছেন। তাদের উপস্থিতিতেই বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় স্তরের রেংকিংয়ে ক্রমশ অবনতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এব্যপারে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ চললেও এখন পর্যন্ত কোন আন্দোলন শুরু হয়নি।
Comments are closed.