Also read in

আসাম সরকার আর্থিক সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে বাংলা ভাষা শহীদদের সন্মান জানাবেঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা

আসাম সরকার বরাক উপত্যকার ভাষা শহীদদের পরিবারবর্গকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে সন্মান জানাবে। আজ বিধানসভায় এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী ডঃহিমন্ত বিস্ব শর্মা। উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এ কথা জানিয়ে বলেন ভাষা শহীদদের নাম দিলে সরকার তাদের পরিবারবর্গকে আর্থিক সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে সন্মান জানাবে।
অর্থমন্ত্রী ডঃহিমন্ত বিস্বশর্মা সম্প্রতি এবারের বাজেটে বড়োল্যান্ডের শহীদদের পরিবারবর্গকে এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা সাহায্য প্রদানের কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া কার্বি আংলং জেলার শহীদদের সাহায্য প্রদানের জন্য আগামী বাজেটে অর্থ ধার্য করা হবে বলে অর্থমন্ত্রী জানান।

Bhasha Andolon May 19, 1961

ভাষা শহিদদের প্রতি এই সন্মান প্রদর্শনের খবর আর এক ভাষা শহীদ দিবসের আগের দিন বরাকবাসীর জন্য খুশীর । এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে , বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি ভাষার শহীদদিবসও আগামীকাল পালন করা হচ্ছে। এই দিনে সুদেষ্ণা সিনহা মনিপুরি ভাষার জন্য শহীদ হয়েছিলেন।
আসামের শিলচরে বাংলাভাষার জন্য ১১ জন শহীদ নিজের শেষ রক্তবিন্দু উৎসর্গিত করেছিলেন। এই শহীদরা হলেন কমলা ভট্রাচার্য, সুনীল সরকার, সুকোমল পুরকায়স্থ, কুমুদ দাস, চন্ডীচরণ সূত্রধর, তরণী দেবনাথ, হীতেশ বিশ্বাস, শচীন্দ্র পাল, কানাই নিয়োগী, সত্যেন্দ্রকুমার দেব, বীরেন্দ্র সূত্রধর। আসাম সরকার অসমিয়া ভাষাকে বাধ্যতামূলক করায় বরাক উপত্যকায় এর প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। এরই অঙ্গ হিসেবে শিলচর রেল স্টেশনে হাজার হাজার জনতা ১৯৬১ সালের ১৯শে মে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হন। আসাম রাইফেলস এই আন্দোলনকে প্রতিহত করতে না পারায় আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালায়। এরই ফলে রক্তাক্ত হয়ে উঠে স্টেশনের মাটি। সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ হারান নয় জন শহীদ এবং পরে আরো দুজন। তবে শহিদের আত্মত্যাগ ব্যর্থ হয়নি। আসাম সরকার বাধ্য হয় তাদের সার্কুলার প্রত্যাহার করতে। বরাক উপত্যকায় সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা স্বীকৃতি পায়। পররর্তী সময়ে করিমগঞ্জে মাতৃভাষা রক্ষার্থে আরও তিন জন আন্দোলনে সামিল হয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। এই শহীদদের পরিবারবর্গকে সাহায্য প্রদানের বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।

11 martyrs of 1961 Bhasha Andolon

ঐতিহাসিক অসম আন্দোলনের শহিদদের পরিবারবর্গকেও আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়েছিল আগেই। এর সূত্র ধরে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল বিধান সভার উপাধ্যক্ষ দিলীপকুমার পালকে বরাকের বাংলা ভাষা শহীদদেরও সন্মান জানাতে সরকার কার্পণ্য করবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, শিলচর রেল স্টেশনের নাম পাল্টে ‘ভাষা শহীদ স্মরণ স্টেশন’ করার জন্য বহু সাংস্ক্রিতিক সংস্থা অনেক দিন ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা অনেক বার এ ব্যাপারে আবেদন জানি‍য়েছেন।কেন্দ্রীয় সরকার এই আবেদন মঞ্জুরও করেন। কিন্তু রাজ্য সরকার এটি স্থগিত রাখে। শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি সম্প্রতি বলেন যে রেলস্টেশনের নাম এভাবে পাল্টালে অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে রাজ্য সরকার এটি স্থগিত রাখতে সিদ্ধান্ত নেয়।
শিলচরে স্থানীয় এবং সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলো এর পরও বিভিন্ন সভা করে নিজেদের দাবি পূরণের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের জন্য এবং যারা পাটোয়ারির বক্তব্যে মর্মাহত হয়েছিলেন তাদের সবার জন্য এটি কিছুকটা হলেও সান্ত্বনা।

Comments are closed.