Also read in

ধুমকেতু 'নিওওয়াইস' : সৌরজগতে এক অপরূপ অতিথি

যখন আমরা রাতের আকাশের দিকে তাকাতে ভুলে যাই, তখন অনেক মহাজাগতিক ঘটনা ঘটে যায়। তবে, যারা অবগত আছেন তাদের কাছে রাতের আকাশ হয়ে উঠেছে মোহময়ী। মোহময়ী রূপে রাতের আকাশে আবির্ভাব ঘটেছে এক ধূমকেতুর নাম যার ‘নিও ওয়াইস’। এই ধুমকেতু শুধু অ্যাস্ট্রোনমারদের আকর্ষিত করছে না, সাধারণ জনগণ ও এর রূপে যথেষ্ট আকর্ষিত হচ্ছেন।

এ মাসের ১৪ তারিখ থেকে এই ধুমকেতু নিও ওয়াইসকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে এবং তা আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত দেখা যাবে। সূর্যাস্তের ঠিক পরে উত্তর পশ্চিম আকাশে ‘বিগ ডিপার’ [বিগ ডিপার হচ্ছে মইয়ের মত দেখতে নক্ষত্র যা নক্ষত্রপুঞ্জ ‘ঊষা মেজর’ (সপ্তর্ষিমণ্ডল)এর একটি অংশ] এর কাছে দেখা যাবে।

এই ধুমকেতু নিও ওয়াইস, যাকে বিজ্ঞানীরা বলছেন C/2020 F3, প্রথম আবিষ্কার হয় এই বছরেরই ১৭ মার্চ । এটা আবিষ্কার করে ইনফ্রারেড অপটিমাইজড নিয়ার-আর্থ অবজেক্ট ওয়াইড-ফিল্ড ইনফ্রারেড স্পেইস এক্সপ্লোরার (NEOWISE) স্পেইসক্রাফট। তখন থেকেই এই ধূমকেতুর রূপের ছটা পর্যবেক্ষণ করতে পায় বিভিন্ন স্পেস টেলিস্কোপ, আন্তর্জাতিক মহাকাশ মিশনে থাকা অ্যাস্ট্রোনটরা এবং অবশ্যই পৃথিবীর উৎসাহী নক্ষত্র পর্যবেক্ষণকারীরা।

এই ধুমকেতু পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে আগামী ২৩ শে জুলাই।

ধুমকেতু হচ্ছে ধুলো, শিলা ও গ্যাসের তৈরি এক ধরনের বরফাবৃত মহাজাগতিক বস্তু। জমাট বাঁধা অবস্থায় একটা ছোট শহরের (১ থেকে ১০ কিলোমিটার) মতো আকৃতি হয় এই ধূমকেতুর। কিন্তু ঘুরতে ঘুরতে ধূমকেতুর কক্ষপথ যখন সূর্যের খুব নিকট দিয়ে পরিভ্রমণ করে তখন উষ্ণ হয়ে উঠে সুবিশাল আকার ধারণ করে। ধুমকেতু গুলো সূর্যের অনেক দূরে একটা অঞ্চলে থাকে যাকে বলে ‘Oort Cloud’ । সূর্য এবং অন্যান্য বড় গ্রহের (বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন) আকর্ষণে ধুমকেতু আমাদের সৌর জগতে প্রবেশ করে। সূর্যের কাছাকাছি আসার পর ধূমকেতুর অপরূপ লেজের ছটা দৃশ্যমান হয়। ধূমকেতুর নিজস্ব কোন আলো নেই, সূর্যের আলো এর দেহে ছড়িয়ে পড়ার ফলেই তা আমাদের চোখে দৃশ্যমান হয়।

“এই ধূমকেতুর ছবি তুলতে হলে বড় এক্সপোজার লাগবে, ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডের এক্সপোজারে ছবি এসে যাবে। ক্যামেরার লেন্স টাকে যতটুক সম্ভব ওয়াইড করতে হবে, ক্যামেরার অ্যাপারচার ও সর্বোচ্চে রাখতে হবে, সাথে তুলনামূলকভাবে বড় আই এস ও ( ৮০০ থেকে ৩২০০) রাখতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই শার্প ফটো তুলতে হলে একটা ট্রাইপড লাগবে”, বলেছেন ক্রিস জর্জ, একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার।

এমন বিরল ঘটনা জীবনে একবারই প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আসছে, কারণ নাসার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই ধুমকেতু আবার ফিরে আসতে পারে ৬৮০০ বছর পরে। তাই এমন সুযোগ ‘চোখ-ছাড়া’ করবেন না, আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে সন্ধ্যের পর চেষ্টা করুন দেখার।

Photo courtesy: Bob King

এই নিবন্ধের লেখক হিমাদ্রি শেখর দাস আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক।

 

Comments are closed.