নির্দেশের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে, বন্ধ হচ্ছে না শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রের স্থানীয় সম্প্রচার, জানালেন প্রসার ভারতীর সিইও শশিশেখর ভেমপতি
প্রসার ভারতীর একটি নির্দেশের উপর ভিত্তি করে গতকাল শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্র সরকারিভাবে সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল। এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে ছিলেন প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও তথা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক জহর সরকার। এবার প্রসার ভারতীর বর্তমান সিইও শশিশেখর ভেমপতি স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রের স্থানীয় সম্প্রচার বন্ধের কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বিভাগীয় নির্দেশের কোথাও ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে, ফলে একদিনের জন্য শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে শুক্রবার সকালেই তিনি স্থানীয় আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুরো তথ্য জানতে চান। এরপর তাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন কোনভাবেই যাতে সম্প্রচার বন্ধ না হয়।
জানা গেছে শুক্রবার বিকেলে শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রের স্থানীয় সম্প্রচার পুনরায় শুরু হয়েছে। তবে এই পুরো ব্যাপারে দূরদর্শন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্টীকরণ দেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি একটি দৈনিকে খবর বেরোয়, শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রে স্থানীয় সম্প্রচার বন্ধ করে দিচ্ছে প্রসার ভারতী। বৃহস্পতিবার সম্প্রচার বন্ধও করে দেওয়া হয়। দূরদর্শন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, “আপাতত নির্দেশের স্পষ্টীকরণ জানতে চাওয়া হয়েছে, তবে যেহেতু সরকারি নির্দেশ, তাই এটা অমান্য না করে আপাতত সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।”
এতে স্থানীয় সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। প্রাক্তন সাংসদ এবং বর্তমান সাংসদ, দুজনেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের কাছে চিঠি লিখে আবেদন জানান। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন প্রকাশ্যে বিরোধিতা শুরু করে। বরাক বুলেটিনের পক্ষ থেকে প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও তথা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক জহর সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “যে উদ্দেশ্য নিয়ে শিলচর বা শান্তিনিকেতনের মত দূরদর্শন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য কোনোভাবেই ফুরিয়ে যায়নি। তাহলে কেন এধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? এটা বুঝতে পারছিনা। তবে যদি আদৌ এধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে, এতে আমি অত্যন্ত দুঃখিত।”
অধ্যাপক জয়দীপ বিশ্বাস প্রায় দেড় দশক ধরে শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রের ‘মুখোমুখি’ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন। তিনি বলেন, “যদিও শহরাঞ্চলে এখন দূরদর্শন কেন্দ্রের ততটা জনপ্রিয়তা নেই, কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এখনও এর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়ে অনেকের সাক্ষাৎকার নিয়েছি যার প্রতিক্রিয়া পরবর্তীতে দেখা গেছে। এছাড়া এই অঞ্চলের ছোট বড় সবগুলো ভাষাগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে একটি প্ল্যাটফর্ম দেয় স্থানীয় দূরদর্শন কেন্দ্র। যদি স্থানীয় প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
একই সুরে প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেন, “দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে আমাদের নিজস্ব পরিচয় হয়ে কাজ করছে শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্র। হঠাৎ করে এই অঞ্চলের স্থানীয় সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তবে আমাদের এলাকার বর্তমান প্রতিনিধিরা গুয়াহাটি গিয়ে এই অঞ্চলের কথা বলার সাহস পান না, এটা আমরা সবাই জানি। হয়তো আগামীতে এভাবেই একের পর এক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানগুলো হাতছাড়া হবে।”
সাংসদ রাজদীপ রায় বলেন, “আমরা এব্যাপারে স্পষ্ট ভাবে জানতে চেয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের কাছে চিঠি লিখেছি। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”
বরাক বুলেটিনের পক্ষ থেকে প্রসার ভারতীর সিইও শশিশেখর ভেমপতির সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। শুক্রবার দুপুরে তিনি নিজেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপে তার কথাগুলো লিখে পাঠান, তারপর ফোনে জানান, নির্দেশের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে, এ ব্যাপারে শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রের সঙ্গে তিনি আবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেছেন। তার কথায়, “প্রসার ভারতী পক্ষ থেকে কখনোই বলা হয়নি শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রের স্থানীয় সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হোক। সরকারি নির্দেশের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। আমি শুক্রবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন প্রত্যেকেই কার্যালয়ে গেছেন। যেটুকু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল সেটা আমরা স্পষ্ট করে নিয়েছি। শিলচরের মানুষের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, কোনও স্থানীয় সম্প্রচার বন্ধ করার আমাদের পরিকল্পনা নেই।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, “যেটুকু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল সেটা পরিষ্কার করার জন্য গুয়াহাটি এবং শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রের আধিকারিকদের কাছে আবার স্পষ্টীকরণ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বললেও শিলচর দূরদর্শন কেন্দ্রের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি তারা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে বিকেল তিনটের সময় স্থানীয় সম্প্রচার শুরু হওয়ার কথা ছিল। অনেকেই অপেক্ষায় ছিলেন সম্প্রচার হয় কিনা এটা দেখার জন্য। কেউ কেউ বলছিলেন হয়তো এসপ্তাহের সম্প্রচার শুরু না করে আগামী সোমবার থেকে শুরু হবে। তবে শেষমেষ সম্প্রচার শুরু হয়েছে। এতে প্রত্যেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন।
অনেকেই স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম গুলোর প্রশংসা করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, “সংবাদমাধ্যম সঠিক প্রশ্ন সঠিক জায়গায় করতে পারলে এই ধরনের পরিস্থিতি অনেক সহজে সামাল দেওয়া যায়।”
Comments are closed.