করোনামুক্ত হওয়ার ১৩ দিন পর আবার পজিটিভ তরুণ চিকিৎসক; তবে কি এভাবেও ফিরে আসছে ভাইরাস!
২৯ জুলাই কোভিড পজিটিভ হয়েছিলেন সোনাই রোডের তরুণ চিকিৎসক দ্বৈপায়ন দেব। এর আগে তার বাবা আক্রান্ত হয়েছিলেন। কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ে তার নাম আসে এবং পরীক্ষা করিয়ে তিনি পজিটিভ হন। এরপর শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দশ দিন চিকিৎসাধীন থেকে রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে নেগেটিভ হন এবং ছাড়া পান। নিয়ম অনুযায়ী সাতদিন বাড়িতেই থাকেন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের অনুমতি নিয়ে আবার কাজে যোগ দেন। তবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি তিনি বুঝতে পারেন তার শরীরে জ্বর, দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
চিকিৎসক এবং দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে তিনি আবার পরীক্ষা করান এবং আশ্চর্যজনক ভাবে রেজাল্ট পজিটিভ আসে। তিনি আবার শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন গতকাল। তিনি ফেসবুকে নিজেই খবরটি জানান।
এতে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তবে কি সুস্থ হওয়ার পর আবার পজিটিভ হওয়া সম্ভব? এভাবেই কি অনেকেই পজিটিভ হচ্ছেন কিন্তু তাদের আর পরীক্ষা হচ্ছে না এবং তারা সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন? শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা জেলার অন্যান্য করোনা কেয়ার সেন্টার থেকে যারা মুক্তি পাচ্ছেন তারা কি আদৌ পুরোপুরি নেগেটিভ এবং নিরাপদ?
সারাদেশে কোভিড প্রটোকল বানানোর দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্র সরকারের অধীনে থাকা আইসিএমআর। সম্প্রতি আইসিএমআরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, “দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হয়েছে কিনা এব্যাপারে পরিষ্কার তথ্য তুলে ধরতে কিছু বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। কোনও ব্যক্তির স্যাম্পল অন্তত বিএসএল-৩ স্তরের ল্যাবে পরীক্ষা করাতে হবে। শুধু ভারতবর্ষে নয় সারা বিশ্বে একই কথা বলা হচ্ছে। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে পুনরায় সংক্রমণ হয়নি ভাইরাস আগে থেকেই শরীর থেকে গেছিল। এই বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে আলোচনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। কেন্দ্র সরকার এবং আইসিএমআর কাজটি ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। যদি পুনরায় সংক্রমিত হওয়া সম্ভব হয়, তবে সরকারের নিয়মনীতিতে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে।
শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়ার মতে এটা দ্বিতীয়বার ইনফেকশনের ঘটনা নাও হতে পারে বরং শরীরেই ভাইরাস থেকে গেছে এবং পরবর্তীতে আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। তিনি বলেন, “এই ঘটনায় আমরা কিছুটা চিন্তিত, পুরো কেস ভালো করে স্টাডি করা হচ্ছে। রাজ্য স্তরের আধিকারিকদের এব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হওয়ার হওয়ার ঘটনা ও হতে পারে, কেননা এই চিকিৎসক সুস্থ হওয়ার পর অনেকের সংস্পর্শে এসেছেন। আবার এমনটা হতে পারে তার শরীরে ভাইরাস এমন একটা মাত্রায় ছিল যেখানে রেপিড এন্টিজেন টেস্ট নেগেটিভ দেখিয়েছে। পরে তার মাত্রা বৃদ্ধি হয়েছে এবং লক্ষণ ধরা পড়ায় পুনরায় পরীক্ষায় পজিটিভ দেখা গেছে। দুই ক্ষেত্রেই কিছু কথা থেকে যাচ্ছে; যেমন, যদি পুনরায় ভাইরাস সংক্রমণ হয়ে থাকে তাহলে শরীরে এন্টিভাইরাসের মাত্রা কম ছিল। প্রথমে তিনি যেহেতু অ্যাসিম্পটোমেটিক ছিলেন ফলে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাত্রা কম হওয়া স্বাভাবিক। আবার হয়ত এমনটা হয়েছে, শরীরে ভাইরাস এমনভাবে থেকে গেছিলো যে আমাদের টেস্টে ধরা পড়েনি। এই ভাইরাসটি নতুন এবং বারবার চরিত্রবদল করছে। দুই ক্ষেত্রেই চিন্তার কারণ রয়েছে। আমরা এব্যাপারে আলোচনা করছি।
হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডাঃ ভাস্কর গুপ্ত মনে করেন এটাই একমাত্র ঘটনা নয়। তিনি বলেন, “সাধারণ ক্ষেত্রে অনেকেই পরীক্ষা করছেন না এবং চরম পরিস্থিতিতে পৌঁছে তাদের হাসপাতলে আসতে হচ্ছে। যারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন তাদের মধ্যে লক্ষণ পুনরায় দেখা দেওয়া সম্ভব, তবে তারা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতি তাদের চুপ থাকতে বাধ্য করছে। দ্বৈপায়ন দেবের পুনরায় পজিটিভ হওয়া হয়তো রেকর্ডে আসা প্রথম ঘটনা। তবে আমার মনে হয় যদি পুনরায় পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে এটিই একমাত্র নয়।”
হাসপাতালে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ভাইরাসটি নতুন এবং এর পরীক্ষার প্রক্রিয়া জটিল। বিভিন্ন ব্যক্তির ভাইরাস লোড বিভিন্ন রকম হয়, তাই আমরা কোনও ব্যাপারেই একশ শতাংশ নিশ্চিত হতে পারি না। কেউ পজিটিভ হওয়ার পর গাইডলাইন মেনে তার চিকিৎসা হয়, কিছুদিন পর আবার তার পরীক্ষা হয় এবং একটি নিশ্চিত স্কেল মেপে বলা হয় তিনি নেগেটিভ। আলাদা ব্যক্তির শরীরে এই মাত্রাটি আলাদা হয়। ফলে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ঠিক হবে না। আমরা চিকিৎসক দ্বৈপায়ন দেবের রিপোর্ট ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। এইচআইভি হলে যেমন প্রত্যেক ব্যক্তিরই আলাদা আলাদা স্কেল থাকে, এই নতুন ভাইরাসের চরিত্র ও এভাবেই আলাদা আলাদা হয়। আমরা প্রায় ৮০ হাজার টেস্ট ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছি, ভাইরাসের নানান চরিত্র আমাদের চোখে পড়েছে যেগুলো নিয়ে পরবর্তীতে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে এই পুনরায় পজিটিভ হওয়ার ঘটনা আমাদের আবার চিন্তা করতে বাধ্য করছে।”
বিশেষজ্ঞরা সরাসরি মানছেন না যে ভাইরাস পুনরায় সুস্থ ব্যক্তির শরীরে সংক্রমণ হতে পারে। যদি এমনটা হয় থাকে, তবে যাদের সুস্থ বলে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে, তাদের আবার পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এছাড়া যদি কেউ মনে করে একবার সুস্থ হয়েছি আর সংক্রমণ হবে না সেটাও ভুল হবে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর আগের মতই সাবধান থাকা বাঞ্ছনীয়।
Comments are closed.