
লকডাউন সমস্যার সমাধান নয়, করোনা আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা: কমলাক্ষ
লকডাউন সমস্যার সমাধান নয় বলে মনে করেন উত্তর করিমগঞ্জ সমষ্টির বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। তিনি এ ব্যাপারে তার অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, করিমগঞ্জ তথা বরাক উপত্যকার মানুষের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে, সঙ্গে রয়েছে ক্ষোভ। মানুষ ভয়ে ভীত হয়ে এর থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না, তাই জনগণের একাংশ লকডাউনের পক্ষে মত পোষণ করছেন। কিন্তু প্রকৃত সত্যটা হচ্ছে, সরকার নিজের দোষ ঢাকতে চাইছে। করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে আইসিইউ নেই, ভেন্টিলেশন নেই, এমনকি রেপিড টেস্টের কিট পর্যন্ত নেই। শিক্ষকদেরকে কোভিড টেস্ট করতে বলা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে রেপিড টেস্টের কিট পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।
এই অবস্থায় করিমগঞ্জে আইসিইউ ও ভেন্টিলেশন স্থাপন, রেপিড টেস্টের কিট সরবরাহ সহ স্বাস্থ্যবিভাগের পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানান তিনি। সেইসঙ্গে আসামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে কটাক্ষ করে বলেন, এসি রুমে বসে সাংবাদিক সম্মেলন না করে যে মানুষগুলো কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের কান্না শুনুন, তাহলে বাস্তবটা বুঝতে পারবেন। তিনি সে সঙ্গে এও বলেন, লকডাউনের মাধ্যমে আমরা এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি লাভ করতে পারব না। বরং স্বাস্থ্য বিভাগ তথা হাসপাতালগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান কিছুটা হলেও সম্ভব। তাই তিনি অতিসত্বর করিমগঞ্জে আইসিইউ স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। সরকার তার ব্যর্থতা ঢাকতে এই সব পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। কাজেই অতিসত্বর যদি স্বাস্থ্যের পরিকাঠামো উন্নয়ন না হয় তাহলে করিমগঞ্জের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাবে বলে তিনি হুমকি দেন।
এদিকে তিনি এর আগেও অভিযোগ প্রকাশ করেছিলেন, আসামের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ কেলেঙ্কারি হচ্ছে কোভিড কেলেঙ্কারি। কোভিড মোকাবিলার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই আসামের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার একহাত নিয়েছেন কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতি, করোনা নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলা, দায়সারা মনোভাব আর লোক দেখানো নাটকের কারণে আজকের দিনে অসমের ভয়াবহ অবস্থা বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিশেষ করে শিলচর মেডিক্যাল কলেজের বেহাল চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে দিন দিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।এর জন্য একমাত্র দায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলে উল্লেখ করেছেন বিরোধী দলের নেতা তথা উত্তর করিমগঞ্জ সমষ্টির বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।
করোনাকালে শাষক দলের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ, কোভিড নিয়ে বিভিন্ন দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির কথা উল্লেখ করে শুক্রবার তিনি সরাসরি আক্রমন করেন আসামের স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে।কমলাক্ষের অভিযোগ, আসামের স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিজেই করোনা নিয়ে কোন ধরনের রাজনীতি না করার আহ্বান রেখেছিলেন সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে । কিন্তু তার আমলেই আসামের বুকে সর্ববৃহৎ কেলেঙ্কারি হচ্ছে, করোনা কেলেঙ্কারি। সিন্ডিকেট রাজ গড়ে তোলে করোনার পজিটিভ, নিগেটিভের নাম করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা । তাঁর আরও অভিযোগ, মন্ত্রী নিজে তিন তিনটা প্রেস মিট করলেও সাধারণ মানুষ কোন উপকৃত হননি। বরং বিনা চিকিৎসায় আজকের দিনে মরতে হচ্ছে রাজ্যবাসীকে।ভয়াবহ অবস্থা বরাক উপত্যকারও। রাজ্য জুড়ে লক্ষাধিক কোভিড আক্রান্ত। মৃত্যর হার এখন বেশি বরাক উপত্যকায়। কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি করিমগঞ্জ জেলায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সমালোচনা করে ক্ষুব্ধ কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন , এই সরকারের আমলে বিনা চিকিৎসায় মরতে হচ্ছে মানুষকে। হত্যা করা হচ্ছে মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা না দিয়ে । এসবের জন্য দায়ী কিন্তু একমাত্র রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী। মানুষের কাছে এর জবাব দিতে হবে স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে। বিশেষ করে করিমগঞ্জের মানুষ তাঁকে কালো পতাকা নিয়ে স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করছেন ।
বিস্ফোরক মন্তব্য করতে গিয়ে দে পুরকায়স্থ আরো বলেন যে, পরিযায়ী শ্রমিকদের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে । এক একজন শ্রমিকের মাথাপিছু ৩০ হাজার টাকা খরচ রয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিজে স্বীকার করেছেন। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কি ব্যবহার করা হলো? ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন থাকার বদলে তিন চার কিংবা পাঁচদিনের মাথায় হোম কোয়ারেন্টাইন । বড় জোর চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। করিমগঞ্জে ইতিমধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের কীট দেওয়ার নামে ২২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। তার কথায়, বর্তমানে আসামের অপদার্থ সরকারের মানুষের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা নেই । একনায়কত্ব চলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর।হিমন্ত-রাজে জনসাধারণ অতিষ্ঠ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, অসমবাসীর দান করা আরোগ্য নিধির অর্থ নিয়েও।আজ রেপিড টেস্ট কীট শূন্য বরাক উপত্যকা। রয়েছে লাইফ সেভিং মেডিসিনের অভাব।সংক্রমন দিন দিন বাড়ছে।আক্রান্ত মানুষ কোভিড টেস্ট করাতে পারছেন না । আর আইসিইউ নিয়ে তো কথা বলে লাভ নেই। ভেন্টিলেশন শূন্য করিমগঞ্জ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে একের পর এক আক্রমন করতে গিয়ে বিধায়ক কমলাক্ষ বলেন যে, বিগত চারমাস আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিজে ঘোষণায় বলেছিলেন, করিমগঞ্জে ২৫ টি আইসিইউ’র ব্যবস্থা করার কথা। কিন্তু এরপর সিদ্ধান্ত বদল করে ৫ টি ভেন্টিলেটর লাগানোর জন্য ঘোষণা করেন মন্ত্রী নিজে। রাজ্য স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী পীযুষ হাজারিকা, বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য একাধিকবার করিমগঞ্জ সফর করে ভেন্টিলেটরের প্রসঙ্গে জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে বসলেও আজকে অবধি কোন সমাধান হয়নি। ভেন্টিলেশন শূন্য করিমগঞ্জ হাসপাতাল। ১০৮ মৃত্যঞ্জয়ের অভাব করিমগঞ্জে । জরুরি অবস্থায় কোভিড আক্রান্ত রোগী ছাড়া সাধারণ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিক্যালে প্রেরণ করলে এম্বুলেন্সের জন্য বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হচ্ছে করিমগঞ্জের মানুষের।
তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী, একমাত্র আসামের স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কারণে আসামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা হয়েছে। করোনা রাজনীতিতে জড়িত তিনি নিজেও। কোভিড সংক্রমনে মানুষের মৃত্যর একমাত্র কারণ স্বাস্থ্য মন্ত্রী নিজে। একমাত্র মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার প্রত্যক্ষ মদতে গড়ে উঠেছে আসাম জুড়ে করোনার নাম করে সিন্ডিকেটরাজ। আত্মসাৎ করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকা । যা আসামের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ কেলেঙ্কারি বলা যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
Comments are closed.