"কোভিড পরীক্ষা এখনও নিঃশুল্ক, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করিয়ে নিন," বললেন জেলাশাসক; আপাতত বহাল থাকছে সাপ্তাহিক লকডাউন
পরিস্থিতি সামাল দিতে একদিকে যেমন লকডাউন জারি করা হয়েছে অন্যদিকে কোভিড পরীক্ষার মাত্রা আগে থেকে অনেক বৃদ্ধি করেছে প্রশাসন। তবে টেস্টিং সেন্টারের সংখ্যা বাড়লেও ক্রমশ কমে আসছে পরীক্ষার সংখ্যা। প্রশাসনের মতে এর কারণ হচ্ছে সাধারণ মানুষের অনীহা। জেলাশাসক কীর্তি জল্লি জেলার প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে আবেদন জানিয়েছেন তারা যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরীক্ষা করিয়ে নেন। শহরে বিভিন্ন সেন্টার রয়েছে তবু একসঙ্গে একই এলাকার ৩০ জন বা তার থেকে বেশি আবেদন করলে স্বাস্থ্যবিভাগের দল পাঠিয়ে বাড়িতেই পরীক্ষা করা হবে। তবে জোর করে পরীক্ষা করা হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
জেলাশাসক এব্যাপারে বলেন, “দেশের অন্যান্য রাজ্যে এখন কোভিড পরীক্ষা আর বিনামূল্যে হচ্ছে না। আমাদের রাজ্যে এখনও পরীক্ষাটি নিঃশুল্ক, ফলে যে কোন ব্যক্তির পরীক্ষা করাতে অনীহা থাকার কথা নয়। আমরা শিলচর শহরের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে সেন্টার খুলেছি, কিন্তু কোনও কোনও এলাকায় এত কম মানুষ সাড়া দিচ্ছেন, আমরা ভাবছি সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। এবার থেকে যে সেন্টারে দিনে পাঁচজনের কম লোক আসবেন সেগুলোকে সীমিত করে শুধুমাত্র দুই ঘন্টার জন্য খোলা রাখা হবে। একটি টেস্টিং সেন্টার খুলে সেটা চালিয়ে নিয়ে যেতে অনেক খরচ হয় এবং স্বাস্থ্যকর্মীর প্রয়োজন হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের কাছে এমনিতেই স্বাস্থ্য কর্মীর অভাব রয়েছে। এমন সময়ে এতগুলো সেন্টার খোলা রেখে যদি পরীক্ষার মাত্রা বৃদ্ধি না পায় তবে পুরো প্রচেষ্টাই বিফল হবে। তাই আগামীতে কিছু সেন্টার হয়তো বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু আপাতত শুধুমাত্র সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে।”
মঙ্গলবার বিকেলে জেলাশাসক কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়। জেলাশাসক কীর্তি জল্লি, অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত সত্যওয়ান এবং স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক সুমন চৌধুরী এতে যোগ দেন।
বাড়িতে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে কীর্তি জল্লি বলেন “আমরা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বাড়ি বাড়ি স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে জ্বর এবং কোভিড পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে কাউকে জোর করে পরীক্ষা করা হবে না, কেউ এগিয়ে এলে আমরা খুশি হবো। শিলচর শহরের প্রায় ১৪০টি পাড়া এবং অ্যাপার্টমেন্ট আমাদের কাছে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছে তাদের মধ্যে কেউ পজিটিভ হলে সেখানে রেখেই চিকিৎসা করতে আগ্রহী। অথচ তারা এগিয়ে এসে প্রত্যেকের পরীক্ষা করানোর ক্ষেত্রে কোন বড় পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। আমি চাইবো শহরের প্রত্যেকটি অ্যাপার্টমেন্ট আমাদের কাছে আবেদন করুক, আমরা স্বাস্থ্যবিভাগের দল পাঠিয়ে অ্যাপার্টমেন্টের প্রত্যেকের পরীক্ষা করাবো এবং সঙ্গে সঙ্গে রেজাল্ট জানানো হবে। এতে মূল উদ্দেশ্য সফল হবে।”
সুমন চৌধুরী জানান, ২৭ আগস্ট অর্থাৎ লকডাউন শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে শুরু করে মঙ্গলবার পর্যন্ত শিলচর শহরে নতুন টেস্টিং সেন্টারগুলোয় ১৪৮০টি সেম্পল পরীক্ষা হয়েছে, এতে ২৫৮ জন পজিটিভ হয়েছেন। মোট পরীক্ষার প্রায় দশ শতাংশ পজিটিভ হয়েছে অর্থাৎ শহরের প্রত্যেক এলাকায় যদি পরীক্ষা হয় তাহলে পজিটিভ’র সংখ্যা অন্তত দশ গুণ বাড়বে।
সুমিত সত্যওয়ান এব্যাপারে বলেন, “২৬টি টেস্টিং সেন্টার খোলার পরেও প্রতিদিন ২৯০টি পরীক্ষা হয়েছে। শিলচর শহরের জনসংখ্যার তুলনায় এটি অত্যন্ত নগণ্য। এভাবে চললে আমাদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। শিলচর শহরে বয়স্ক ব্যক্তির সংখ্যা উপত্যকার যে কোন এলাকা থেকে বেশি। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর তালিকা দেখলে বোঝা যায়, অনেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার পর রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। বারবার বলা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা অজানা ভয় থেকে যাচ্ছে। এই ভয় দূর করতেই আমরা সেন্টারগুলো চালু করেছিলাম। এবার থেকে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে পরীক্ষা করানোর পরিকল্পনা চলছে। তবে এটাও সফল হবেনা যদি সাধারন মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে না আসেন।”
লকডাউনের ব্যাপারে জেলাশাসক জানিয়েছেন, ৪ সেপ্টেম্বরঃ রাত বারোটা পর্যন্ত এই লকডাউন থাকবে, এটাই রাজ্য সরকারের নির্দেশ। এছাড়া আপাতত সাপ্তাহিক লকডাউন প্রত্যাহারের কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাই, ৪ সেপ্টেম্বর বিশেষ লকডাউন শেষ হলেও আরো দুইদিন সাপ্তাহিক লকডাউনে জেলার সাধারণ চলাচল বন্ধই থাকবে। লকডাউন চলার ক্ষেত্রে কোন বিশেষ রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ী মহলের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,”একজন জেলাশাসক রাজ্যের মুখ্য সচিবের নির্দেশেই কাজ করেন। অবশ্যই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হয়। তবে তাদের ইঙ্গিতে জেলাশাসক কাজ করেন, এই ধারণাটাই নিম্নমানের, আমি এর কোন উত্তর দিতে বাধ্য নই এবং এটি আমার রুচিবোধেও বাঁধে।”
Comments are closed.