
টান্টুতে জানাজায় ৫০ হাজারের ভিড়; "চেষ্টা করেও আটকাতে পারিনি, এবার ভিডিও দেখে আটক করা হবে" বললেন জেলাশাসক
হাইলাকান্দির লালাবাজার এলাকায় টান্টুর পীর আতাউর রহমান চৌধুরীর জানাজায় শুক্রবার হাজার হাজার লোকের সমাগম হয়। প্রায় কোনও ধরনের সামাজিক দূরত্ব বা কোভিড নিয়মাবলী না মেনেই অনেকে এতে অংশ নেন।
এব্যাপারে হাইলাকান্দির জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং বলেন, তারা অনেক চেষ্টা করেও জনসমাগম আটকাতে পারেননি। এবার ভিডিও দেখে যারা সেখানে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের আটক করা হবে।
জেলাশাসক মেঘ নিধি দাহাল বলেন, “হযরত শাহের প্রতি উপত্যকার মানুষের বিপুল শ্রদ্ধা ছিল এবং তার মৃত্যুতে অনেকেই শোক ব্যক্ত করেছেন। আমরা আগে থেকে ধারণা করেছিলাম বিপুল জনসমাগম হতে পারে। কোনওভাবে যাতে কোভিড নিয়ম উপেক্ষা না হয় সেটা নিয়ে ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এলাকায় কোভিড পরীক্ষা কেন্দ্র রাখা ছাড়াও মাস্ক, সেনিটাইজার ইত্যাদি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলাম আমরা। তবে সেই মুহূর্তে কোনও কিছুই কাজে আসেনি। আমাদের ধারণা, প্রায় ৫০ হাজার লোক এতে যোগ দিয়েছেন। এতবড় জনসংখ্যাকে আটক করা পুলিশের দ্বারাও সম্ভব ছিল না। তবে এই দুঃসময়ে এতবড় জনসমাগম হওয়ায় এখন সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আপাতত দুটো পদক্ষেপ নিতে চলেছি, যারা এসেছেন তাদের এবং তাদের সংস্পর্শে আসা প্রত্যেকের পরীক্ষা করানো, এছাড়া ভিডিও দেখে নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে কিছু লোককে আটক করা।
আমাদের পুলিশ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে, যেগুলো ভিডিও আমাদের কাছে আছে, সেটা দেখে প্রত্যেক ব্যক্তির পরিচয় খুঁজে বের করা হবে, পরবর্তীতে তাদের আটক করা হবে। পাশাপাশি তাদের কোভিড পরীক্ষা করিয়ে পজিটিভ এলে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে। প্রত্যেকেই হাঁটছিলেন ফলে পুলিশের পক্ষ তাদের কোনওভাবে আটকানো সম্ভব হয়নি। প্রত্যেকেই আবেগিক ছিলেন, ফলে তাদের আমরা দোষারোপ করছি না। তবে সুরক্ষার জন্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আগামীতে নিতে হচ্ছে।”
জেলাশাসক জানান, তারা আগে থেকে কাছাড় এবং করিমগঞ্জের প্রশাসনকে এব্যাপারে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা ধারণা করেছিলাম হাইলাকান্দি ছাড়াও কাছাড় এবং করিমগঞ্জের অনেক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা এতে অংশ নেবেন। এমনকি এব্যাপারে আমাদের কাছে খবরও ছিল। বৃহস্পতিবার রাতেই কাছাড় এবং করিমগঞ্জের জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক হয়, একসময় ভেবেছিলাম শুক্রবারের জন্য আন্তঃজেলা পরিবহণ বন্ধ করে দেয়া হোক। তবে সেটা সম্ভব হয়নি। এমনিতেই লকডাউনের শেষ দিন চলছে এবার নতুন করে বিধি-নিষেধ আরোপ করলে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারতো। যে এলাকায় জানাজা হয়েছে এর প্রায় এক কিলোমিটার আগেই আমরা সমস্ত রকমের যানবাহন আটকে দিই, তবু পায়ে হেঁটে প্রত্যেক এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।”
শুধু প্রশাসন নয় ধর্মগুরুরাও আগে থেকে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বলেছিলেন, কোনওভাবেই যাতে কোভিড নিয়মের উপেক্ষা না হয়, তবু বিশেষ মুহূর্তে কেউ আবেগ ধরে রাখতে পারেননি এবং জনসমাগম হয়েছে। এবার অনুষ্ঠানের ভিডিওগুলো সোশ্যাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল হচ্ছে, অনেকেই এব্যাপারে প্রশ্ন করছেন। কেউ কেউ এমনটাও বলছেন, জনপ্রতিনিধিরা ব্যর্থ হওয়ায় এধরনের জনসমাগম হয়েছে। তারা যদি জনগণকে আগে থেকে বোঝাতে পারতেন তাহলে এত বড় ঘটনা ঘটতো না।
Comments are closed.