Also read in

'হাত বেঁধে দিয়ে কাজ করতে বললে পারব না,' পরিষ্কার জানালেন ডাঃ রাকেশ পি গোপাল

দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ রাকেশ পি গোপাল শুক্রবার শিলচর এসেছেন। প্রতিমাসে তিনদিন শিলচর মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করবেন, রোগী দেখবেন এবং বিভাগের পরিকাঠামোগত উন্নতি তার তত্ত্বাবধানে হবে। সরকার পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে অনুমোদন আটকে রাখার পর এবার তার যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রথম দিন তিনি ৬০ জন রোগী দেখেছেন।

তবে এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে হাসপাতলে ক্যাথল্যাব স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হওয়া। ডঃ গোপাল শনিবার সকালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ এবং জেলাশাসকের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে যোগ দেবেন। হাসপাতালে ক্যাথল্যাব স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরুর সম্ভাবনার দিকগুলো তিনি পর্যবেক্ষণ করবেন। এরপর বিকেলে আবার ফিরে যাবেন। আসা-যাওয়ার খরচ ছাড়া পুরো প্রক্রিয়া তিনি বিনামূল্যে করছেন, শুধুমাত্র সাধারণ মানুষকে সাহায্য করার লক্ষ্যে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় সার্কিট হাউসে বিশেষ আলাপচারিতায় তিনি তার পরিদর্শনে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। ‘তিনি বলেন, শুধুমাত্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে আসতে রাজি হয়েছি। অবশ্যই এবেপারে সবথেকে বড় প্রেরণা হচ্ছেন পদ্মশ্রী ডাঃ রবি কান্নান। “শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধু দেশের মধ্যে নয় আন্তর্জাতিক মানের একটি ক্যাথল্যাব গড়ে তোলা স্বপ্ন রয়েছে আমার। তবে এখানেই শেষ নয়, সীমিত খরচে পর্যাপ্ত চিকিৎসা যাতে সাধারণ মানুষ পেতে পারেন, সেটাই আমার আসল লক্ষ্য। ইতিমধ্যে সরকারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, আমি তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, কি ধরনের পরিকাঠামোগত উন্নতি প্রয়োজন। তারা আমাকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছেন, তাদের পাশে থেকে কাজ করার জন্য। আমি নিজের মতো করে পরিকল্পনা করব, যাতে সাধারণ মানুষের কাজে আসে ক্যাথল্যাবটি। তবে পরামর্শ না দিয়ে যদি তারা আমাকে নির্দেশ দিতে শুরু করেন এবং সেটা আসল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী হয়, তবে কাজ করা সম্ভব হবে না। দুই হাত বেধে দিয়ে আমাকে যদি বলা হয়, আপনি কাজ করুন, সেটা পারব না। আমাকে আমার মত করে কাজ করতে দিতে হবে, আমার প্রচেষ্টার গ্যারান্টি আমি দিতে পারি।”

তিনি জানিয়েছেন ইতিমধ্যে শিলচর শহরের বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের তরফে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা শিলচর মেডিকেল কলেজ বাদ দিয়ে তাদের হাসপাতালে গিয়ে রোগী দেখার জন্য মোটা টাকার অফার পর্যন্ত দিতে ভুলেন নি। এব্যাপারে রাকেশ গোপাল বলেন, ‘দুপুরে শিলচরে এসেছি এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগী দেখেছি, পরিকল্পনা রয়েছে আগামীতে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্তর্জাতিক মানের একটি ক্যাথল্যাব গড়ে তুলব। তবে আশ্চর্য হলাম স্থানীয় কিছু বেসরকারি হাসপাতালের অফার শুনে। তারা বলছেন আপনি আমাদের হাসপাতালে রোগী দেখুন আমরা মোটা অংকের টাকা দিতে রাজি আছি। আমি তাদের বলেছি, এর থেকে অনেক বেশি টাকা রোজগারের ক্ষমতা রাখি আমি, কিন্তু এখানে জনগণের পাশে দাঁড়াতে এসেছি। সরকারি হাসপাতালে যদি স্বাচ্ছন্দে কাজ করে একটি পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি তাতে সাধারণ মানুষের বেশি লাভ হবে।’

ক্যাথল্যাব গড়ে তোলার পরিকল্পনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র পরিকাঠামো গড়ে তুললেই হবে না, মানুষের মনে বিশ্বাস অর্জন করতে হবে, এখানে আন্তর্জাতিক স্তরে পরিষেবা গড়ে তোলা হয়েছে বলে। পুরো প্রক্রিয়ায় প্রায় চার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। এরপর বিনোবা ভাবে এটোমিক সেন্টারের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। সুদক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে এসে পুরো ল্যাব চালানোর কাজে লাগাতে হবে। এত কিছুর পর চিকিৎসার মূল্য জনগণের নাগালের ভেতর থাকতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে সফলতা আসার পর ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জাগবে। শিলচর শহর থেকে যদি মানুষ গুয়াহাটি বা দেশের অন্যান্য জায়গায় গিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য খরচ করতে পারেন, তাহলে দূর দূরান্ত থেকে এখানে কেন আসবেন না? আমরা এমন একটা পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই যেখানে সারা দেশের মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার জন্য শিলচর শহরে আসবেন। আর সেই পরিষেবা তাদের স্বল্পমূল্যে পাইয়ে দেওয়া হবে। এই স্বপ্ন বাস্তব করতে পারলে চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে সার্থক মনে করব।’

এদিন দুপুরে শিলচর বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তাঁকে সংবর্ধনা জানায়, শিলচরের থাউজেন্ড সায়ন্তন গ্রুপের সদস্যরা। এরপর তিনি সোজা চলে যান শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে প্রথম দিন ৬০ জন রোগী দেখেন এরপর সার্কিট হাউসে চলে যান, রাতে সেখানেই থাকবেন।

তিনি থাউজেন্ড সায়ন্তন গ্রুপের সদস্যদের সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘সাধারন জনগন এক হয়ে কোন দাবির পক্ষে আওয়াজ তুললে সরকারকে সেটা মানতে হয়। আমরা অনেক কাজ করতে চাইলেও এরকম দাবি না উঠলে অনেক সময় সফল হইনা। আমি এই যুবকদের সাধুবাদ জানাই, তারা যেভাবে লাগাতার একই দাবির পক্ষে আওয়াজ চলে যাচ্ছেন, তার জন্য।

হাসপাতালে অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া জানিয়েছেন, কোভিড প্রটোকল মেনেই তিনি শুধু মাত্র একদিনের জন্য এসেছেন। প্রথমদিন কিছু রোগী দেখছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে প্রক্রিয়া অন্যরকম হবে। রোগী দেখার থেকেও প্রয়োজনীয় ব্যাপার হচ্ছে হাসপাতালে হৃদরোগ বিভাগকে উন্নত করতে তার পরামর্শ পাওয়া। এখানে ক্যাথল্যাব বসাতে পারলে অনেক রোগী বাঁচানো সম্ভব হবে বলেই আমাদের ধারণা। তিনি সমস্ত সম্ভাবনাগুলো খতিয়ে দেখবেন এবং তার প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ক্যাথল্যাব গড়ে তোলার জন্য টেন্ডার চাওয়া হয়েছে। আগামীতে তার তত্ত্বাবধানে যদি এটি গড়ে ওঠে তবে হাসপাতালের পরিষেবা উন্নত হবে। তিনি এদিন একা এসেছেন, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে তার সহ-চিকিৎসকদের নিয়ে চলে আসবেন।

Comments are closed.

error: Content is protected !!