Also read in

"দোষ থাকলে গ্রেফতার হতে রাজি, ব্যবসায়ীদের বাঙালি-মাড়োয়ারি বলে বিভাজন করবেন না," বলছেন ফাটকবাজারের ব্যবসায়ীরা

সম্প্রতি ব্যবসায়ী মূলচাঁদ বৈদের বিরুদ্ধে কোয়ারেন্টাইনে খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় পত্রিকায় এব্যাপারে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে । এতে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে এতে নতুন সংযোজন করেন ছাত্রনেতা প্রদীপ দত্ত রায়। তিনি বলেন, কেন বারবার একজন মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী সরকারি কাজের টেন্ডার পায়? এতে পুরো ব্যবসায়ী সমাজে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সোমবার শিলচরের ব্যবসায়ী সমাজের সদস্যরা এক সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেদের সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেন।

তবে তারা সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি কাছাড় জেলা প্রশাসনের ওপর ও বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যবসায়ী মূলচাঁদ বৈদ, বিবেক পোদ্দার, অসিত দত্ত সহ অন্যান্যরা যোগ দেন। তারা বলেন, “কাজ যখন হচ্ছে তখন অভিযোগ থাকা স্বাভাবিক। সংবাদমাধ্যম যেটা বলে, বেশিরভাগ মানুষ সেটাই বিশ্বাস করেন। তবে কিছু রাজনৈতিক স্বার্থন্বেষী লোক এই বিষয়ের মধ্যে বাঙালি-মাড়োয়ারি বিভেদ ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা একেবারেই কাম্য নয়, কেননা আমরা এই দুঃসময়ে যদি একসঙ্গে না থাকি তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। যারা এধরনের সুড়সুড়ি দিয়ে নিজেদের জমি তৈরি করতে চাইছেন, তাদের আমরা কাগুজে বাঘ ছাড়া আর কিছু বলবো না। কারো ভাষা সংস্কৃতি বেশভূষা নিয়ে বিভেদমূলক কথা বলা অত্যন্ত নিম্নমানের চিন্তা ধারার বহিঃপ্রকাশ।”

সম্প্রতি স্থানীয় পত্রিকায় অভিযোগ উঠেছিল, কোয়ারেন্টাইনে খাবার পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারি করছেন মূলচাঁদ বৈদ এবং তার ছেলে। এব্যাপারে প্রথমেই জেলা প্রশাসনের ওপর দায় চাপান মূলচাঁদ বৈদ। তিনি বলেন, “কোয়ারেন্টাইনে খাবার সরবরাহের ব্যাপারে রাজ্য সরকার যে নির্দেশ দিয়েছিল সেটা পরিবর্তন করে কাছাড় জেলা প্রশাসন। স্থানীয় তালিকার মধ্যেই আমাদের বলা হয় দুই হাজার টাকার প্যাকেটে ১৭টি আলাদা আলাদা জিনিস সরবরাহ করতে। আমরা যে সব জিনিসপত্র দিয়েছি সেটা জেলাশাসকের নির্দেশে দেওয়া হয়েছে। যদি আমাদের কাজে দুর্নীতি থেকে থাকে, সেটার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। আমাদের দোষ থাকলে গ্রেফতার হতে রাজি আছি। তবে যদি ভুল তথ্য দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করা হয় এবং কোন ব্যক্তি অযথা দোষারোপ করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে আমরা পিছপা হবো না।”

তিনি আরও বলেন, “এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার খাদ্য সরবরাহ করেছি আমরা। তাই কোটি কোটি টাকার কেলেঙ্কারি জায়গা থাকছে না। মোট ৫৭৬৫টি প্যাকেট সরবরাহ করা হয়েছে। অবশ্যই সেগুলো কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের হাতে সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোডাল অফিসার ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল, তার হাতেই এগুলো তুলে দেওয়া হয়। ফলে অভিযোগ থাকলে শুধু আমাদের দিকে আঙ্গুল তুললেই হবে না। আমরা প্যাকেটের ভিতরে কি খাদ্য দিয়েছি তার তালিকা প্যাকেটের মধ্যেই লাগিয়ে দিয়েছি। যারা এগুলো পাবেন তারা মিলিয়ে নিতে পারবেন।”

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্যরাও একসময় সংবাদমাধ্যমকে জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করেন। কোনটি সংবাদ এবং কোনটি সংবাদ নয়, কোন সংবাদ কোথায় বসাতে হয় ইত্যাদি বলতে শুরু করেন তারা। এতে উপস্থিত সাংবাদিকরা অপমানিত বোধ করেন এবং তাদের সরাসরি বলেন, “আমাদের অন্তত এব্যাপারে জ্ঞান দেবেন না।”

ব্যবসায়ীরা এটাও বলেন, তাদের স্বভাব ব্যবসা করা তাই কিছুটা লাভ অবশ্যই মাথায় রেখে কাজ করতে হয়। তাদের বয়ান, “মূলত আমরা ব্যবসায়ী, ফলে যেখানে লাভের আশা রয়েছে সেখানেই বেশি পরিশ্রম করতে ভালোবাসি। তবে, এই দুঃসময়ে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই দায়িত্বগুলো নিয়েছি। কঠিন পরিস্থিতিতে যখন কেউ এগিয়ে এসে খাবার জোগান দিতে রাজি হচ্ছিল না, আমরা করেছি। ছোটখাটো অভিযোগ থাকা স্বাভাবিক, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই এগুলো নিয়ে ভাবলে ভালো হয়। অযথা জনগণকে আমাদের বিরুদ্ধে উস্কে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। এতে আমরা অপমানিত বোধ করছি। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে নিজের মতো করে এর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে ব্যবসায়ী সমাজ।”

এভাবে নিজেদের সাফাই গাইলেও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তারা খানিকটা জেলাশাসকের সুরেই কথা বললেন। বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরায় তারা উল্টো সাংবাদিকদের বললেন, “আপনারা সময় মতো আমাদের জানালে আমরা এগুলো আটকাতে পারতাম।” তবে এর কোন সমাধান তারা স্পষ্ট করে তুলে ধরেননি।

Comments are closed.