প্রয়াত অসীম দত্তের মুখাগ্নিতে পিপিই কিট পরে যোগ দিলেন সাংবাদিকরা
সোমবার সকালে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন বরিষ্ঠ সাংবাদিক অসীম দত্ত। এদিন রাতেই শিলচর শ্মশানঘাটে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে অনির্বাণ রায় এবং শিলচর শহরের কিছু সাংবাদিক এতে অংশ নেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছিল, যদি সাংবাদিকরা এতে অংশ নিতে চান তবে তারা পিপিই কিটের ব্যবস্থা করবেন। রাইসিং ইয়ুথ সোসাইটির যুবকরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রাত প্রায় সাড়ে বারোটায় মৃতদেহ শ্মশানঘাটে নিয়ে আসে। সেখানে আগে থেকেই সাংবাদিকরা শেষ দেখা দেখবেন বলে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনেকেই বাইরে থেকে ফোনে যোগাযোগ করছিলেন।
মৃতদেহ নিয়ে যখন এম্বুলেন্স শ্মশানঘাটে ঢুকে সাংবাদিকরা দূর থেকেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। রাইসিং ইয়ুথ সোসাইটির পক্ষ থেকে পিণাক রায় উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, তাদের জন্য পিপিই কিট রয়েছে, চাইলে এগুলো লাগিয়ে মুখাগ্নিতে যোগ দিতে পারেন। সাংবাদিক অভিজিৎ ভট্টাচার্য, বিশ্বকল্যাণ পুরকায়স্থ এবং প্রয়াত অসীম দত্তের পরিবারের সদস্য অনির্বাণ রায় পিপিই কিট পরে এতে যোগ দেন। কোভিড প্রটোকলের আওতায় মৃতদেহটি খুব সাবধানে প্লাস্টিকে মোড়া ছিল। প্রত্যেকেই দূর থেকে প্রথমে প্রণাম জানিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এরপর ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে সেটি বাইরে নিয়ে আসা হয়। এর আগে শ্মশানের চুল্লি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। তাকে সেখানে খুব সাবধানে নিয়ে যাওয়া হয়।
কোভিড চুল্লিতে মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মন্ত্রোচ্চারণের জন্য কোনও পুরোহিত আসতে পারেন না। ফলে রাইজিং ইয়ুথ সোসাইটির সদস্যরা ইউটিউব দেখেই মন্ত্রোচ্চারণ করেন। অনির্বাণ রায় এবং দুই সাংবাদিক মুখাগ্নিতে যোগ দেন। বাকি সাংবাদিকরা দূর থেকে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর খুব সাবধানে পিপিই কিটগুলো খোলা হয়। এনজিওর সদস্যরা সেগুলো স্যানিটাইজ করে পুড়িয়ে ফেলেন। যারা পিপিই কিট পরেছিলেন, তাদের প্রয়োজনমতো স্যানিটাইজ করা হয়।
সাংবাদিক ভাস্কর সোম, অমল লস্কর, বাপি আচার্য, শিবা দে, কংগ্রেস দলের তরফে অভিজিৎ পাল সহ অনেকেই শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন। রাতে বারবার বৃষ্টি হচ্ছিল, ফলে প্রায় সকাল ছয়টায় দাহকার্য শেষ হয়।
প্রয়াত অসীম দত্ত মূলত তিনসুকিয়ার বাসিন্দা ছিলেন, সেখানেই পড়াশোনা করেছেন, পরবর্তীতে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতকোত্তর চলাকালীন চাকরিতে যোগ দেন। গুয়াহাটিতে দীর্ঘদিন কাটিয়েছেন। স্ত্রীর চাকরিসূত্রে তাদের প্রথমে শিলচরে আসা। ১৯৯৯ সালে শিলচরে এসে এখানেই বাকি জীবন কাটান। তার একমাত্র কন্যা স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রী। বাকি আত্মীয়-স্বজনরা প্রায় প্রত্যেকেই গুয়াহাটি বা তিনসুকিয়ায় রয়েছেন। তার স্ত্রী এবং কন্যা দুজনেই কোভিড পজিটিভ; তারা শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
Comments are closed.