কংগ্রেস থেকে ৬ বছরের জন্য বহিস্কৃত বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা ও প্রাক্তন বিধায়ক রুমি নাথ
প্রাক্তন মন্ত্রী দিনেশ প্রসাদ গোয়ালার ছেলে তথা লক্ষীপুরের বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা এবং বড়খলার প্রাক্তন বিধায়ক রুমি নাথকে কংগ্রেস দল থেকে ছয় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজদীপ গোয়ালাকে বরখাস্ত করেছে সারা ভারত কংগ্রেস কমিটি এবং রুমি নাথকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির। নির্বাচনের প্রায় ছয়মাস আগে এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই জেলা কংগ্রেসের কাছে একটি বড়সড় ধাক্কা।
জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রদীপ দে জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত স্থানীয়স্তরে নেওয়া হয়নি, এই সিদ্ধান্ত রাজ্য কমিটির এবং অন্যটি কেন্দ্রীয় কমিটির। রুমি নাথের ব্যাপারে তিনি বলেন, “তিনি নামমাত্র কংগ্রেস দলে ছিলেন, দলের বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন কার্যকলাপের যথেষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। এটা মনে রাখতে হবে তিনি আগেও অন্য দল থেকে বহিস্কৃত হয়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ রয়েছে, তবে আমরা গণতান্ত্রিক দল, তাই হঠাৎ করে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা। সবদিক বিবেচনা করে রাজ্য কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আমি আশা করি এতে কংগ্রেস দলের ভাবমূর্তি আরও উন্নত হবে।”
রাজদীপ গোয়ালার ব্যাপারে তার বয়ান, “তিনি একজন বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতার সন্তান তথা কাছাড় জেলার একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ক। কিন্তু দলের কাজে তার কোনও যোগদান নেই। বরং বিরোধী দলের সরকারের প্রশংসায় তিনি পঞ্চমুখ। তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আছে সেটা আমি স্পষ্ট করে বলতে পারব না, তবে দলের সিদ্ধান্ত বিনা কারণে আসে না। আবার সেটা যদি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত হয়, এর পেছনে অবশ্যই পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে। তবে এতে আমাদের মনোবল একেবারেই ভেঙে যাচ্ছে না। আমরা আগামী নির্বাচনের আগে নিজেদের শক্ত করে তুলবো। এই কাজটি করতে হলে ভেতরে শত্রুদের শনাক্ত করে এদের দূর করে দিতে হয়, এমন কাজটাই করছেন আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আমরা তাদের সমর্থন করি।”
ব্যবসায়ী ত্রৈলোক্য নাথের কন্যা রুমি নাথ বিজেপির টিকিটেই প্রথমবার বিধায়ক হয়েছিলেন। পরবর্তীতে কংগ্রেসের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ঘনিষ্ঠ হন এবং দল বিরোধী কার্যকলাপের ফলে তাকে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। একসময় মুসলমান যুবকের সঙ্গে প্রেম করে ধর্ম পরিবর্তন, স্বামী-সংসার ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া, গাড়ি চুরি কেলেঙ্কারিতে জেল খাটা এবং আবার সব ছেড়ে ঘরে ফিরে আসা, যাকে আজকাল ঘরওয়াপসি বলা হয়, সবটাই ঘটে রুমি নাথের জীবনে। তবে বিজেপির কিশোর নাথের কাছে পরাজিত হওয়ার পর পরবর্তীতে ধীরে ধীরে গেরুয়াপন্থী হয়ে ওঠেন তিনি। বাড়িতে নরেন্দ্র মোদি সহ অন্যান্য বিজেপি নেতার বড় বড় ফটো হাঁকিয়ে বারবার বার্তা দিয়েছেন তিনি কোন দিকে যেতে চান। বিজেপির ক্ষমতা দখলের পর এভাবে অনেকেই গেরুয়াপন্থী রূপ নিয়েছেন তবে সবাই দলে ঢোকার রাস্তা খুঁজে পাননি। ইতিমধ্যে বড়খলায় অঘোষিত নির্বাচনী প্রচারও করছেন রুমি নাথ। এবার কংগ্রেস দলের থেকে বহিস্কার হওয়ায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার রাস্তা কিছুটা প্রশস্ত হয়েছে বটে, তবে দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য বহিষ্কার হওয়ার দ্বিতীয় রেকর্ড করলেন তিনি।
রাজদীপ গোয়ালার ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু অন্য। এই বছর ১৩ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আমাদের জানিয়েছিলেন রাজদীপ গোয়ালা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। যদিও রাজদীপ এব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি, কিন্তু তার ইঙ্গিত এমনটাই ছিল। এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “যেদিন তরুণ গগৈ বদরুদ্দিন আজমলের হাত ধরেছেন সেদিন ঠিক করে নিয়েছিলাম আর এই দলে থাকা যাবে না।”
লক্ষীপুর সমষ্টি থেকে এখন পর্যন্ত বিজেপি একবারের জন্যও জয়ী হয়নি। শুধু বরাক উপত্যকা নয় সারা রাজ্যের এক বড় মাপের কংগ্রেস নেতা ছিলেন দীনেশ প্রসাদ গোয়ালা। ২০১১ সালেও তিনি জয়ী হয়েছিলেন, তবে হঠাৎ করে তার মৃত্যু হয়। এরপর উপনির্বাচনে বাবার মৃত্যুর সেন্টিমেন্ট সামনে রেখেই জয়ী হন রাজনীতিতে আনকোরা রাজদীপ গোয়ালা। ১৭ মাস পর আবার নির্বাচন হয় এবং তিনি আবার জয়ী হন। ২০১৬ সালে রাজ্যে বিজেপি সরকার আসার পর হাতেগোনা কয়েকজন কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন যারা সরকারের সমালোচনা করেছেন। রাজদীপ গোয়ালাকে কখনোই সরকারের সমালোচনায় সরব হতে দেখা যায়নি, বরং নানা প্রসঙ্গে তিনি প্রশংসাই করেছেন। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা, ফলে তার সঙ্গে রাজদীপের সম্পর্ক ভালো। সেই হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একসময় দাবি করলেন রাজদীপ বিজেপিতে আসছেন। এব্যাপারে কংগ্রেস দলের কোন প্রতিক্রিয়া না এলেও এবার তারা তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
Comments are closed.