Also read in

"সাধারণ মানুষকে মন্ডপ বানিয়ে পুজো করতে বাধা দিলে আগে নিজের কার্যালয়ের অস্থায়ী মন্ডপ গুড়িয়ে ফেলুন," জেলাশাসককে কড়া বার্তা সুস্মিতার

রাজ্য সরকারের দুর্গাপুজোর নির্দেশাবলীতে অনুযায়ী অস্থায়ী মন্ডপ বানিয়ে দুর্গাপুজো করতে বাধা নেই। তবে স্বাস্থ্যবিভাগের নির্দেশ জারি হওয়ার ২৪ঘন্টা পর কাছাড়ের জেলাশাসক আরেকটি নির্দেশ জারি করেন। এতে পরিষ্কার ভাষায় লেখা রয়েছে, শুধুমাত্র স্থায়ী মণ্ডপেই পূজো হবে। অথচ কাছাড়ের জেলাশাসক কার্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো আয়োজন উপলক্ষে আদালত অস্থায়ী মন্ডপ গড়ে তোলা হয়েছে। জেলাশাসকের বিধি নিষেধ জারি করার আগেই সেখানে মন্ডপের কাজ শুরু হয়েছে এবং সেটা অর্ধেকের বেশি বানানোও হয়ে গেছে। এতে সমাজের প্রত্যেক স্তরের মানুষ প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন।

জেলাশাসক কীর্তি জাল্লির অন্যতম প্রশংসক হচ্ছেন জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব। তিনিও এব্যাপারে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন। তার বয়ান, যদি সাধারণ মানুষকে মন্ডপ বানিয়ে পুজো করতে নিষেধ করা হয়, তবে আগে নিজের কার্যালয় চত্বরে গড়ে ওঠা মন্ডপ ভেঙে দেওয়া উচিত জেলাশাসকের।

বরাক বুলেটিনের সঙ্গে এব্যাপারে আলোচনায় তিনি বলেন, “কথায় বলে চ্যারিটি বিগিনস্ এট হোম, অর্থাৎ কোনও বিষয়ে অন্যদের শেখানোর আগে নিজে সেটা পালন করতে হয়। রাজ্য সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে জেলাশাসক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে শোনা গেছে। তিনি পরিষ্কার ভাষায় লিখে জানিয়েছেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলায় কোনও অস্থায়ী মন্ডপ বানানো চলবে না। অথচ তার কার্যালয়েই পুজোর নামে বেশ বড়সড় মন্ডপ বানানো হচ্ছে, এটা পরিস্কার দ্বিচারিতা। আমি বলব, তিনি যদি মনে করেন জেলায় কোনও অস্থায়ী মন্ডপ বানানো উচিত হবেনা, তবে তার উচিত আগে নিজের কার্যালয়ের অস্থায়ী মন্ডপটি ভেঙে ফেলা। তবে হিন্দুশাস্ত্রে পুজোর মণ্ডপ বানানো শুরু হয়ে গেলে সেটা পুজো শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভেঙে ফেলা অশুভ। তাই তার উচিত জনগণের ওপর এভাবে উদ্ভট নির্দেশ চাপিয়ে না দেওয়া।”

উল্টোপাল্টা মানুষের কাছ থেকে বুদ্ধি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া বন্ধ করতেও পরামর্শ দেন সুস্মিতা দেব। তিনি বলেন, “কীর্তি জাল্লি একজন আইএএস আধিকারিক, যথেষ্ট বিচক্ষণ মহিলা এবং আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। অতীতে বিভিন্ন বিষয়ে আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছি এবং তিনি সেটা গ্রাহ্য করেছেন। তবে পুজোর নিয়ম নীতি নিয়ে আমার মনে হয় তাকে কিছু উল্টোপাল্টা মানুষ বুদ্ধি দিচ্ছেন। তাদের বুদ্ধি নিয়ে জেলাশাসক এধরনের উদ্ভট সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যা জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী। আমি তাকে বলব আপনি একজন শিক্ষিত বিচক্ষণ ব্যক্তি, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনার হয়তো রয়েছে। তাই উটকো ব্যক্তিদের পরামর্শ না নিয়ে প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন, এতেই সবার মঙ্গল। আর বিধি নিষেধ শুধুমাত্র সাধারন মানুষের জন্যই থাকবে রাজনৈতিক নেতাদের জন্য নয়, এটা মেনে নেওয়া যায় না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ উদ্বোধন করতে এসে হাজার মানুষ নিয়ে অনুষ্ঠান করতে পারেন, তখন জেলাশাসক বিধি-নিষেধ আরোপ করেন না। আর সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সাবধানে দুর্গাপুজো করবেন এতে একের পর এক নিষেধ, এটা অনুচিত।”

কাছাড় জেলার মানুষের মনের ভাব ভালো করে বুঝতে পারেননি জেলাশাসক অথবা বুঝতে চেষ্টা করেননি তিনি, এমনটাও ধারণা সুস্মিতা দেবের। তার বয়ান, “এই কঠিন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র প্রশাসনই একা হাতে সবটা সামলায়নি। সাধারণ মানুষ সচেতন থেকে সহায়তা করেছেন, তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। দুর্গাপুজো বরাক উপত্যকার মানুষের কাছে শুধুমাত্র আরেকটা পুজো নয়, এটা বছরের সেরা উৎসব। কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে এসে সাধারণ মানুষ যদি উৎসবে কিছু মুহূর্ত ভাল করে কাটান, এতে কারও ক্ষতি হবে না। মানুষকে সচেতন করা প্রশাসনের কাজ, তাদের উপর উল্টোপাল্টা নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া নয়। নিয়ম বানানোর ক্ষেত্রে মানুষের পরামর্শ নিতে হয়, তাদের মনের ভাব বুঝতে হয়। জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি যে নির্দেশ জারি করেছেন, এটা পড়লে পরিষ্কার বোঝা যায় তিনি জনগণের মতামত শোনেননি বা শোনার চেষ্টা করেননি। আমি তাকে বলব যখন আপনি জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে বসে আছেন এবং একের পর এক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, আপনার উচিত জনগণের মনের ভাবটা বুঝে নেওয়া।”

সুস্মিতা দেব বরাবরই কাছাড় জেলার জেলাশাসকের প্রশংসক। শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে খাবারের দুরবস্থা নিয়ে যখন কথা উঠতে শুরু করেছিল, সে সময় রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে শিলচরে এসেছিলেন অনুরাগ গোয়েল। সুস্মিতা দেব তার সঙ্গে দেখা করে আবেদন জানান, হাসপাতালের খাবার পৌঁছে দেওয়া সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হোক। এতে লাভ হয় এবং পরবর্তীতে জেলাশাসকের অধীনে চলে আসে খাবার সহ বিভিন্ন দায়িত্ব। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কীর্তি জাল্লিকে একের পর এক পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তবে এই প্রথম তার সরাসরি সমালোচনা করলেন সুস্মিতা।

Comments are closed.