অটোভর্তি প্যাসেঞ্জার, তবু দ্বিগুণ ভাড়া; হেনস্থা হচ্ছেন যাত্রীরা, কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পরিবহন আধিকারিকের
লকডাউনের সময় কাটিয়ে ওঠার পর ধাপে ধাপে বিভিন্ন নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। সাধারণ যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে প্রথমে ৫০ শতাংশ যাত্রী নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এতে প্রায় প্রত্যেক বেসরকারি যানবাহনের ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকার নির্দেশ দিয়েছেন গাড়িভর্তি যাত্রী নেওয়া যাবে তবে মাস্ক, সেনিটাইজার ইত্যাদি সুরক্ষাব্যবস্থা রাখতে হবে। এই নির্দেশ আসার আগে থেকেই অটো চালকরা গাড়িভর্তি প্যাসেঞ্জার নিচ্ছিলেন, কিন্তু ভাড়া দ্বিগুণ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জেলা পরিবহন আধিকারিক সিদ্ধার্থ শইকিয়া চালক সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবার থেকে পুরনো গাড়ি ভাড়া নিতে হবে। তবে সাধারণ যাত্রীদের হেনস্থার সীমা নেই, অটো ভর্তি প্যাসেঞ্জার নেওয়া হচ্ছে, দ্বিগুণ ভাড়া দিতে তারা মানা করলে প্রচন্ড দুর্ব্যবহার করছেন চালকরা। অনেকেই এগুলোর ভিডিও তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছেন। তবে পরিস্থিতি একফোঁটাও বদলায়নি।
৯ অক্টোবর রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোভিড প্রটোকল মেনে একশ শতাংশ প্যাসেঞ্জার নিতে পারবেন চালকরা। এবার কাছাড়ের পরিবহন আধিকারিক সিদ্ধার্থ শইকিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দেন, গাড়ি ভর্তি প্যাসেঞ্জার নেওয়া হবে বলে পুরনো হারে ভাড়া নিতে হবে। লকডাউন শুরু হওয়ার আগে সাধারণ যানবাহনে যে হারে ভাড়া নেওয়া হতো এখন থেকে সেই ভাড়া নিতে হবে। কেউ এই আদেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে পরিবহন বিভাগ।
সিদ্ধার্থ শইকিয়া বলেন, “আমরা তাদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি কোনভাবেই যাতে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া না হয়। যাত্রীদের কাছ থেকে সরাসরি অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনে চালকের লাইসেন্স কেড়ে নেব। এছাড়া আমাদের কাছে খবর এসেছে চালকরা মাস্ক, সেনিটাইজার ইত্যাদি ব্যবহার করছেন না। এক্ষেত্রে তাদের অতিরিক্ত শাস্তি হতে পারে। আমরা আগামীতে এ ব্যাপারে আরো কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছি, এর আগে প্রত্যেক চালক এবং অটো মালিকের কাছে আমাদের কড়া বার্তা, আপনারা কোনওভাবেই কোভিড প্রটোকল ভাঙবেন না এবং দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
আনলক পর্বে কেন্দ্র সরকারের নির্দেশ ছিল যাত্রীবাহী গাড়িগুলো পঞ্চাশ শতাংশ প্যাসেঞ্জার নিতে পারবে। এক সময় এর বিরুদ্ধে সরব হয় সারা আসাম মোটর মালিক সংস্থা এবং চাকা বনধের ডাক দেয়। তাদের দাবি ছিল, হয় গাড়ি ভর্তি প্যাসেঞ্জার নিতে দেওয়া হোক, না হলে ভাড়া দ্বিগুণ করা হোক। তাদের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্য সরকার পঞ্চাশ শতাংশ যাত্রী নেওয়ার নিয়ম সংশোধন করে বলেন, এখন থেকে গাড়ি ভর্তি যাত্রী নেওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে কোভিড প্রটোকল সম্পূর্ণভাবে মানতে হবে।
তবে বরাক উপত্যকায় একটি পুরনো রীতি রয়েছে, জিনিসপত্রের দাম হোক বা গাড়ি ভাড়া, একবার বৃদ্ধি হলে সেটা আর কমেনা। আনলক প্রক্রিয়ায় যখন ধীরে ধীরে অটো, টুকটুক সহ বিভিন্ন বেসরকারি যানবাহন চলতে শুরু করে, তারা ন্যূনতম দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাড়া তিনগুণ বা তারও বেশি গিয়ে দাঁড়ায়। যাত্রীরা এব্যাপারে প্রতিবাদ করলে উল্টো কথা শুনতে হয়। শহরে এমন ঘটনা হয়েছে যেখানে মাঝরাস্তায় প্যাসেঞ্জারকে অটো থেকে নামিয়ে দিয়েছেন অটোচালক। যদিও অর্ধেক প্যাসেঞ্জার নেওয়ার নির্দেশ ছিল কিন্তু চালকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গাড়ি ভর্তি করে যাত্রীও নিয়েছেন এবং দ্বিগুণ ভাড়াও নিয়েছেন।
লকডাউন পরিস্থিতিতে অটো চালকরা রোজগার করতে পারেননি অথচ বিভিন্ন টেক্স তাদের দিতে হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের কোন ধরনের সাহায্য করা হয়নি, ফলে এই পরিস্থিতিতে তারা অতিরিক্ত ভাড়া না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই পুরো বিষয়ে শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পালের বয়ান, “একদিকে যেমন অটো চালকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সমাজের অন্যান্য স্তরের মানুষও আর্থিকভাবে অনেকটাই পিছিয়ে গেছেন, এটা আমাদের প্রত্যেকের জানা রয়েছে। এক সময় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে অটো চালাতে হয়েছে তাই দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েছেন চালকরা। এখন সরকারের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে গাড়িভর্তি যাত্রী নিতে পারবেন তবে কেন দ্বিগুণ ভাড়া নেবেন? অটোতে যেসব যাত্রী চলাফেরা করেন তারা আর্থিকভাবে ততটা সচ্ছল নন। উচ্চবিত্তরা নিজেদের গাড়িতে চলাফেরা করেন। তাই শুধুমাত্র চালকদের দিকটা দেখলে হবেনা। সাধারণ মানুষের দিকও আমাদের ভাবতে হবে। সব মিলিয়ে এটুকু বলা যায়, অটো চালকরা যখন গাড়ি ভর্তি যাত্রী নেবেন, তাদের পুরনো হারে ভাড়া নিতে হবে।’
অটো মালিক সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়েছে এবং বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, গাড়ি ভর্তি যাত্রী নিলে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া যাবে না। এব্যাপারে মালিক সংস্থা একমত। যদি কোন অটোচালকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠে তাহলে সেটা যাচাই করে দেখা হবে এবং প্রয়োজনে সেই অটোচালকের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পুলিশের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামীতে বেশ কয়েকটি স্কোয়াড তৈরি করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হবে। অটো চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন কিনা সেটা যাচাই করা হবে, প্রয়োজনে যাত্রীদের কাছ থেকে আসল তথ্য শোনা হবে। যদি দেখা যায় সত্যিই চালকরা নিয়ম ভাঙছেন তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করারও সম্ভাবনা থাকবে।
Comments are closed.