
'সব বাঙালিই বাংলাদেশি,' শিলংয়ে কুরুচিকর পোস্টার খাসির স্টুডেন্ট ইউনিয়নের, তীব্র প্রতিবাদে সরাতে বাধ্য হল পুলিশ
সম্প্রতি মেঘালয়ে বাঙালি হেনস্তার ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বরাক উপত্যকা সহ বিভিন্ন এলাকার বাঙালিরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছেন। দূর্গাপূজার পঞ্চমীর সকালে মেঘালয়ের খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন শিলংয়ে অত্যন্ত কুরুচিকর বাঙালি বিদ্বেষী কিছু পোস্টার লাগিয়ে দেয়। এতে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় ওঠে, একসময় মুখ্যমন্ত্রী স্তরে গিয়ে পৌঁছায় ব্যাপারটি, এরপর পোস্টারগুলো উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয় প্রশাসন। তবে স্টুডেন্ট ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা বাঙালিদের বিভিন্ন প্রতিবাদের ফলস্বরূপ হয়েছে।
ব্যানারগুলোয় পরিষ্কার ভাষায় লেখা হয়েছে, ‘সব বাঙালিই বাংলাদেশি’, ‘বাংলাদেশি, তোমরা মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং আসামে তোমাদের অত্যাচার বন্ধ করো,’ ইত্যাদি। পোস্টারগুলো সোশ্যাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই গর্জে ওঠেন। শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় এবং প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব অসম এবং মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পর্যন্ত এব্যাপারে যোগাযোগ করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ পোস্টারগুলো সরিয়ে নেয়। তবে ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, উত্তর-পূর্বের গন্ডি পেরিয়ে সেটা পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যে গিয়ে পৌঁছেছে। প্রত্যেকেই এই কথার তীব্র নিন্দা করছেন।
খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ডোনাল্ড থাবাহ বলেন, “আমরা এই পোস্টগুলো লাগিয়েছি এবং এর পিছনে আমাদের নিজস্ব যুক্তি রয়েছে। বাঙালি সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠন লাগাতার আমাদের উপর দোষারোপ করছে আমরা নাকি তাদের ওপর অত্যাচার করছি। শুধু মেঘালয় নয় বাইরে থেকেও বাংলা সংগঠন নানান কুৎসা রটিয়ে যাচ্ছে। তারা মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী অনেকের কাছে আমাদের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে চিঠি লিখছে। এমনকি মেঘালয়ের রাজ্যপালের কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের কথায় যদি আগামীতে কেন্দ্র সরকার আমাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয় সেটা কে সামলাবে? অযথা আমাদের দোষারোপ করে ছোট করার কোনও মানে হয়না। আমাদের রাজ্যের পুলিশ বারবার বাঙালিদের আশ্বাস দিয়েছে, তাদের কোনও ভয় নেই, তাহলে কেন এত প্রতিবাদ? তাদের কাছে এই উত্তর পাইনি আমরা।
কিন্তু এটা বলতে পারি, মেঘালয়ে থাকা প্রত্যেক বাঙালিই পুরনো সময়ের নন। বিভিন্ন সময় ঝাঁকে ঝাঁকে বাঙালিরা রাজ্যে প্রবেশ করেছে, এতে আমাদের মানুষ কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। এবার তারা আমাদের উপর অত্যাচার শুরু করেছে, যেটা আমরা মেনে নিতে পারছিনা। অন্যান্য রাজ্যের বাঙালিদের নিয়ে আমাদের কোনও অসুবিধে নেই, তবে রাজ্যের উপর দিয়ে চলাচলের ক্ষেত্রে কিছু প্রটোকল প্রত্যেকের জন্যই থাকবে।
এইবছর ফেব্রুয়ারি মাসে শিলংয়ে দুই দলের মধ্যে পারস্পরিক সংঘর্ষের ফলে এক খাসিয়া যুবকের মৃত্যু হয়। দুষ্কৃতিকারীদের মধ্যে কিছু অভিযুক্ত বাঙালি ছিল। এই সূত্র ধরে কিছু সংগঠন মেঘালয়ে থাকা বাঙালিদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এই প্রতিবাদ ধীরে ধীরে রীতিমতো বাঙালি হেনস্তার রূপ নিয়েছে বলে অনেকেই দাবি করছেন। বিভিন্ন সংগঠন লিখিতভাবে বাঙালি হেনস্তার বিরুদ্ধে কেন্দ্র সরকার এবং মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছে। আগামীতে মেঘালয় সীমান্তে প্রতিবাদ জানানো হবে এমনটাও বলা হয়েছে। তবে পুজোর আগে এধরনের কুরুচিকর পোস্টার লাগানোর পিছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
Comments are closed.