Also read in

স্বরাষ্ট্রসচিবের মধ্যস্থতায় বৈঠকের পর অসমের জমি থেকে বাহিনী সরিয়ে নিতে রাজি হল মিজোরাম

বৈঠকের পর বৈঠক হওয়া সত্ত্বেও কিছুতেই অসমের দখল করা জমি থেকে নিজেদের বাহিনী সরিয়ে নিতে রাজী হচ্ছিল না মিজোরাম সরকার। কেন্দ্রীয় বাহিনী অসমের এলাকায় পৌঁছার পরও মিজোরা নাছোড়বান্দা। অসমের এক ব্যক্তির হত্যা হয়েছে, দুটো বিদ্যালয় বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার কাছাড়ের পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসককে বন্দুক দেখিয়ে দুষ্কৃতীরা চলে যেতে বলেছে। শেষমেষ কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিবের মধ্যস্থতায় মিজোরাম এবং অসমের মুখ্য সচিব এক ভিডিও কনফারেন্সে মুখোমুখি বসেন। বৈঠকে মিজোরাম সরকার অসমের দখল করা জমি থেকে নিজেদের বাহিনী সরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। পাশাপাশি মিজোরাম এবং অসমের সংযোগকারী সড়ক থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে মিজোরাম সরকার।

মিজোরামের মুখ্যসচিব লালনানমাইওয়া চুয়াংগো জানিয়েছেন, দুই পক্ষের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতিতে মিজোরাম সরকার অসমের জমি থেকে নিজেদের বাহিনী সরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। তিনি বলেন, “কেন্দ্র সরকারের মধ্যস্থতায় আয়োজিত বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা অসমের জমি থেকে আমাদের বাহিনীর সরিয়ে নিতে রাজি হচ্ছি। তবে পাশাপাশি অসমের জমিতে দুই রাজ্যের সংযোজনকারী সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে, সেটা খুলে দিতে হবে।”

তিনি কেন্দ্র সরকারের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, “দুই রাজ্যের সীমান্ত সমস্যা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক এটা আমরা সব সময় চাই। তবে সম্প্রতি যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে সেটা সমাধানের একটা সূত্র বের করা অবশ্যই জরুরি ছিল। কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে দুই রাজ্যের মুখ্য সচিবকে নিয়ে সরাসরি বৈঠক আয়োজন করায় একটি সমাধান সূত্র বেরিয়েছে। আমরা আশা করছি সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অসম সরকার আমাদের পাশে থাকবে।”

অসমের মুখ্য সচিব জিষ্ণু বড়ুয়া মিজোরামের এই পদক্ষেপের সাধুবাদ জানিয়েছেন। বরাক বুলেটিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব দুই রাজ্যের মুখ্য সচিবকে নিয়ে একটি ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। মিজোরামের পক্ষ থেকে শেষমেষ বলা হয়েছে তারা অসমের জমি থেকে তাদের বাহিনীর সরিয়ে নেবেন। তারা বলছেন অসম সরকার জাতীয় সড়কে অবরোধ করেছে, এটা ভুল তথ্য। সড়ক অবরোধ সাধারণ মানুষ করেছেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলব এবং আমার বিশ্বাস তারা অবরোধ উঠিয়ে নেবেন।”

তবে অতীতেও এধরনের বৈঠক হয়েছে, বৈঠকের পর মিজোরাম অসমের জমি থেকে পুলিশ বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার কথা দিলেও সেটা পরে রাখা হয়নি। মিজোরামের তরফ থেকে সশস্ত্র বাহিনী অসমের জমিতে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। অসমের সরকারি স্কুল বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অসমের জমিতে বানানো সেতুতে মিজোরামের বাহিনী বাঁস বেঁধে বন্ধ করে দিয়েছে। উপর থেকে চিৎকার করছে, “এটা মিজো দেশ, ভারতবর্ষ এখানে ঢুকতে পারবে না।”

সম্প্রতি দুই রাজ্য এবং কেন্দ্রের আলোচনার পর সীমান্ত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোট ছয়টি কোম্পানি পাঠানো হয়েছে। অসমের দিকে তিনটি এসএসবি কোম্পানি থাকবে এবং মিজোরামের দিকে তিনটি বিএসএফ কোম্পানি বসবে। কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী যেসব এলাকায় অশান্তি রয়েছে সেখানে সীমান্তে কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদাড়ি থাকবে। অবশ্যই তারা সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ম্যাপ অনুযায়ী যে সীমান্ত রয়েছে সেটা মেনেই কাজ করবে। মিজোরামের দিকে ভাইরেঙতে জেলায় একটি বিএসএফ কোম্পানি এবং দুটি প্লাটুন বসবে। কলাশিবের সাইহাপুই ভি এবং মামিত জেলার থিংগলুঙ-তে একটি করে বিএসএফ কোম্পানি থাকবে। অসমের দিকে কাছাড় জেলায় দুটি এসএসবি কোম্পানি এবং করিমগঞ্জ জেলায় একটি এসএসবি কোম্পানি পাঠানো হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে ক্যাম্প বানানোর জন্য জায়গা খুঁজতে শুরু করেছে। আগামীতে তারাই সীমান্ত এলাকা দেখাশোনা করবে।

অর্থনৈতিক অবরোধের ফলে সীমান্তে দুই পাশেই হাজার হাজার মাল বোঝাই লরি আটকা পড়ে আছে। এবার দুই রাজ্যের মধ্যে মনোমালিন্য মিটে গেলে যদি অর্থনৈতিক অবরোধ খুলে যায় তাহলে ট্রাক চালকরা স্বস্তি পাবেন। তবে কেউ কেউ মনে করছেন, লাগাতার দশ দিন অর্থনৈতিক অবরোধ রাখার ফলে মিজোরাম মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে। শোনা গেছে মিজোরামে অত্যাবশ্যকীয় মূল্যের দাম প্রায় ৮ থেকে ১০গুণ বেড়ে গেছে। আগামীতে অবস্থা আরও শোচনীয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতেই মিজোরাম মাথানত করেছে।

জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব মনে করেন মিজোরাম তাদের কথা রাখবে না। তারা রবিবার দুপুরে এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন সেখানে তাদের উপর মিজো বাহিনী আক্রমণ চালায়। তিনি বলেন, “মিজোরাম বারবার কথা দিয়েও রাখছে না, আমার মনে হয় না এবারও তারা কথা রাখবে। তবু আমরা মনের সদিচ্ছা নিয়ে একটা আশা রাখছি, দেখা যাক আগামীতে কি হয়।”

Comments are closed.