প্রশাসনের চাপে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নিলেন লায়লাপুরের বাসিন্দারা, 'চালকদের সুরক্ষার আশ্বাস দিয়েছে মিজোরাম,' বললেন ডিআইজি
অসমের জমিতে মিজোরামের পুলিশ বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সীমান্ত এলাকায় অর্থনৈতিক অবরোধ গড়ে তুলেছিলেন স্থানীয়রা। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অবরোধ চলার পর বুধবার সন্ধেবেলা এটি আপাতত প্রত্যাহার করে নিতে রাজি হন লায়লাপুরের মানুষ। দুই রাজ্যের প্রতিনিধিরা এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়ে একটি বৈঠক করেন। একসময় বৈঠকেও উষ্মা দেখা যায়, কলাশিবের জেলাশাসক লায়লাপুরের বাসিন্দাদের বলেন, “এখন অবরোধ না খুললে ভবিষ্যতে আর মিজোরামে ঢুকতে পারবেন না আপনারা।” এতে এলাকাবাসী রেগে যান এবং বৈঠক প্রায় ভেস্তে যায়। তবে শেষমেষ আলোচনা হয় এবং অবরোধ উঠিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ডিআইজি দিলীপ কুমার দে এব্যাপারে বলেন, “মিজোরাম সরকার আশ্বাস দিয়েছে এদিক থেকে যাওয়া প্রত্যেকটি ট্রাক এবং চালকের সুরক্ষা দেবে তারা। রাজ্য সরকারের বৈঠকের পর আমাদের উপর নির্দেশ ছিল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে যাতে অবরোধ উঠিয়ে নিই। আমরা প্রথম দিন থেকেই চেষ্টা করেছি, এবার শেষমেষ এলাকাবাসী রাজি হয়েছেন। তাদের অভিযোগ রয়েছে, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে কথাবার্তা সরকারি স্তরে হবে। তবে সর্বাবস্থায় যাতে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বজায় থাকে এটাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে।”
গত রবিবার সন্ধ্যাবেলা কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিবের মধ্যস্থতায় অসম এবং মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হয়। এতে মিজোরাম সরকার অসমের জমি থেকে তাদের পুলিশ বাহিনী সরিয়ে নেবে বলে আশ্বাস দেয়। তবে তাদের পাল্টা দাবি ছিল অসমের জমি থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ উঠিয়ে নিতে হবে। সোমবার অসমের জমিতে থাকা মিজো পুলিশের একাংশকে সরিয়ে নিলেও জমি ছাড়তে অস্বীকার করে মিজোরাম। মুখ্য সচিব লালনানমাইওয়া চুয়াংগো বলেন, ‘যেটুকু অংশে মিজো পুলিশ বসানো হয়েছে এর থেকে অনেক বেশি জমি মিজোরামের প্রাপ্য। কেন্দ্র সরকারের সার্ভে অফ ইন্ডিয়া যে ম্যাপ বানিয়েছে সেটা শুধু কাগজে পত্রে হয়েছে। আক্ষরিক অর্থে সীমানা নির্ধারণ হয়নি। কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলা হয়েছিল। আংশিক পুলিশ বাহিনী সরিয়ে নেওয়া হবে, সেটা হয়েছে কিন্তু দখল করা জমি কিছুতেই ছাড়বেনা মিজোরাম।’
অসম সরকার মিজোরামকে যে আশ্বাস দিয়েছিল তার সম্মান রেখে এলাকাবাসীরা ২১টি ট্রাক যেতে দিতে দিলেও, অর্থনৈতিক অবরোধ অব্যাহত রাখা হয়। অবরোধকারীরা বলেন, “বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও মিজোরাম সরকার অসমের জমি থেকে তাদের বাহিনী সরিয়ে নেয়নি। বরং যত দিন গেছে তাদের অত্যাচার বেড়েছে, এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। দুটো সরকারি স্কুলে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর এলাকাবাসীরা পুরোপুরিভাবে অর্থনৈতিক অবরোধ করায় মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে মিজো সরকার।”
বুধবার কাছাড় এবং কলাশিবের জেলাশাসক স্তরের আরেকটি বৈঠক আয়োজন করা হয়, এতে অবরোধকারীদের প্রতিনিধিরাও আমন্ত্রিত ছিলেন। টানা বৈঠকের পর শেষমেশ অবরোধ প্রত্যাহারের ব্যাপারে রাজি হন এলাকাবাসীরা। তবে তা সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন অসম সরকারের পক্ষ থেকে লাগাতার তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা হয়েছে। বাধ্য হয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করছেন তারা। এলাকাবাসীর তরফে দিলবাগ হোসেন বলেন, “আমরা সঙ্গত কারণে অবরোধ করেছি, ১৫ দিন ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি তবে এবার বাধ্য হয়ে সেটা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আমাদের উপর লাগাতার চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে আমরা যাতে অবরোধ প্রত্যাহার করে নিই। আমাদের দাবি ছিল এলাকাবাসী সুরক্ষা আগে প্রদান করা হোক এরপর অবরোধ তোলা হবে। একসময় মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পর্যন্ত আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা দেখেছি বরাকের অন্যান্য জেলায় পুলিশের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছেন অবরোধকারীরা। আগামীতে আমাদের সঙ্গেও হয়ত এমনটাই করা হবে এটা ভেবেই অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছি আমরা। তবে এখানেই শেষ নয়, যদি মিজোরামের পক্ষ থেকে আমাদের উপর আগামীতে অত্যাচার করা হয়, পুনরায় অবরোধ গড়ে তুলতে সময় লাগবে না।”
Comments are closed.