কালাইনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পড়ুয়ারা নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিল এবং 'রাশ ড্রাইভিং' করছিল, বলছে পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত
বুধবার দুপুরে কালাইন-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কে মারুতি অল্টো এবং দ্রুতগামী ট্রাকের সংঘর্ষে বদরপুরের নবীনচন্দ্র কলেজের পাঁচ পড়ুয়া প্রাণ হারিয়েছিলেন। এতে বরাক উপত্যকার প্রত্যেকেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন, সড়ক অবরোধ হয়েছে, বিধায়ক ঘেরাও হয়েছেন, বিধায়কের অভিযোগে এক ছাত্র গ্রেফতার হয়েছেন, পরে তাকে ছাড়া হয়েছে। তবে কাছাড়ের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে, পড়ুয়ারা নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিল এবং সেটা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে, যাকে সাধারণ ভাষায় বলা হয় ‘রাশ ড্রাইভিং’। ফলে একতরফা লরি চালকের উপর দোষারোপ করা যায় না। সম্প্রতি কাছাড় জেলার বিভিন্ন এলাকায় দুরন্ত চারচাকা গাড়ির আঘাতে বেশ কিছু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, ফলে ড্রাইভারদের দিকে স্বভাবতই আঙুল উঠছে।
এদিনের ঘটনায় মারুতি অল্টো গাড়িটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষের পর পাশের এক পুকুরে গিয়ে পড়ে। এর আগে তিন ছাত্র ছিটকে রাস্তায় পড়েন এবং দুইজন গাড়িতেই থেকে যান। ঘটনাস্থলে চারজনের মৃত্যু হয় এবং গুরুতর আহত অবস্থায় শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার রাস্তায় আরেকজনের মৃত্যু হয়। প্রত্যেকেই স্নাতক বিজ্ঞান শাখার প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র ছিল। ঘটনার পর পুলিশের আধিকারিকরা সবগুলো দিক খতিয়ে দেখছেন। কিভাবে সংঘর্ষটি হয়েছে, কার দোষ ছিল, কোথা থেকে সূত্রপাত হয়েছে, ইত্যাদি বিষয়ে তাদের বিভিন্ন অভিমত রয়েছে।
পুলিশসুপার বিএল মিনা জানিয়েছেন, তদন্তকারী একাংশ আধিকারিকরা বলছেন, গাড়ির ড্রাইভার বাইকে করে পেছন পেছন আসছিল। ড্রাইভারের সিটে পাঁচ পড়ুয়ার মধ্যে একজন বসেছিল। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল কিনা এটা এখনও তদন্তের বিষয়, তবে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে দক্ষতা ছিল না এটা বলা যায়। শোনা গেছে তারা গাড়ির ভেতর থেকে একটা ফেসবুক লাইভ করেছিল, সেখানে অনেকে দেখেছেন অত্যন্ত জোরে গান চালিয়ে এবং খুব বেশি স্পিডে গাড়ি চালানো হচ্ছিল। অবশ্যই এব্যাপারে এখনও পরিষ্কারভাবে কিছু বলার সময় হয়নি। তবে ছাত্ররা ‘রাশ ড্রাইভিং’ করছিল এটুকু বলাই যায়।’
এবার প্রশ্ন হচ্ছে পড়ুয়াদের অপরিপক্ক হাতে ড্রাইভিং ছেড়ে দিয়ে কেন চালক বাইকে আসছিলেন? কেনই বা পাঁচ মেধাবী ছাত্র এধরনের একটি পদক্ষেপ নিল যেটা তাদেরই প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, মারুতি অল্টোটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল, একের পর এক গাড়িকে ওভারটেক করছিল। দুর্ঘটনার আগে একটি ম্যাজিক গাড়িকে খুব বাজেভাবে ওভারটেক করে এবং সামনে গিয়েই ট্রাকের মুখোমুখি হয়। সম্প্রতি বরাক উপত্যকার রাস্তাঘাট নতুন রূপ পেয়েছে এবং এতেই গাড়ির স্পিড স্বভাবতই বেড়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনা হচ্ছে।
তবে শুধুমাত্র মারুতি অল্টো নয়, উল্টো দিক থেকে আসা ট্রাকটিও অত্যন্ত দ্রুতগতিতেই ছিল, তাই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগে একই এলাকায় আরেক দুর্ঘটনায় দুই ব্যক্তি মারা গেছেন। তাই পুলিশের তরফে শুধুমাত্র ছাত্রদের রাশ ড্রাইভিংয়ের উপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানো হয়তো সম্ভব হবে না। পাশাপাশি ছাত্রদের হাতে গাড়ি বা বাইকের চাবি তুলে দেওয়ার আগে অভিভাবকদের আরও সাবধান হতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে আমরা আরও দুর্ঘটনার সাক্ষী হতে পারি। দোষারোপের কাদা-ছোড়াছুড়ি শেষ হলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে আত্মসমালোচনা করতে হবে।
নবীনচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় নিহতরা বিএসসি প্রথম সেমিস্টারের ছাত্র ছিল। অত্যন্ত মেধাবী এবং মনোযোগী ছাত্র ছিল তারা, একসঙ্গে গাড়ি করে কলেজে এসেছিল এবং কলেজ শেষে সেই গাড়িতেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল। যদি পুলিশের দাবি সত্যি হয়, তাহলে অভিভাবকদের এব্যাপারে কিছুটা খামতি থেকে গেছিল বলা যায়, অপরিপক্ক হাতে গাড়ির চাবি তুলে দেওয়াই হয়তো শেষমেষ কাল হয়েছে।
Comments are closed.