মরনাপন্ন রোগীকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে ভরদুপুরে 'গ্রিন করিডোর' শিলচর
শিলচর শহরের চিরাচরিত দৃশ্য হচ্ছে ট্রাফিক জ্যামে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে, খুব কম ক্ষেত্রেই নিজে পিছনে থেকে অ্যাম্বুলেন্সকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেন চালকরা। তবে এই শহরেই বুধবার দেখা গেল এক অন্য দৃশ্য। এক রোগীকে মেহেরপুর থেকে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়ার সময়ে শিলচর শহরকে ১০ মিনিটের জন্য ‘গ্রিন করিডোর’ বলে ঘোষণা করা হলো। ভরদুপুরে রাস্তা খালি করে অ্যাম্বুলেন্স পার করে দেওয়ার ঘটনা শিলচর শহরের ইতিহাসে এই প্রথম।
রাস্তায় চলাচলকারী প্রত্যেক যাত্রী আশ্চর্য হয়ে দেখছেন দৃশ্যটি। কেউ কেউ ভাবছেন হয়ত কোনও বড় ব্যক্তিত্ব যাচ্ছেন তাই রাস্তার এই অবস্থা। আবার কেউ কেউ বলছেন মুখ্যমন্ত্রীর কথায় এটা করেছে প্রশাসন। এক অ্যাম্বুলেন্সকে এত সুরক্ষা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেখে কেউ কেউ বলেছেন অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর মুখ্যমন্ত্রী নন তো! তবে আসল ঘটনা হচ্ছে, ৩৩ বছরের এক মরণাপন্ন রোগীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার জন্যই শিলচর শহরকে গ্রিন করিডোর করা হয়েছিল।
হাইলাকান্দির প্রাক্তন যুগ্ম স্বাস্থ্য-সঞ্চালক আবেদ রসুল মজুমদারের ছেলে ইসতাক রসূল মজুমদার করোনা ভাইরাস সহ আরও কয়েকটি সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি শিলচরের গ্রীন হিলস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তার স্বাস্থ্যের ক্রমশ অবনতি ঘটতে থাকে, ফলে ঠিক করা হয় বাইরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিলেও ডাক্তাররা বলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে নিয়ে যেতে হবে। আবেদ রসুল মজুমদারের ছোট ভাই আনিস রসূল মজুমদার কাছাড় জেলার প্রাক্তন অতিরিক্ত জেলাশাসক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গ্রিন হিলস হাসপাতাল থেকে শুরু করে শিলচর শহর হয়ে বিমানবন্দর যাওয়ার রাস্তাকে কিছু সময়ের জন্য গ্রিন করিডোরে পরিণত করা হবে। তাই হঠাৎ করেই শুরু হয় তোড়জোড়।
আনিস রসূল মজুমদার জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ইসতাক রসূল মজুমদারকে। রক্তে ইনফেকশন সহ আরও একটু সমস্যা ছিল। চিকিৎসার আগেই তার কোভিড পরীক্ষা হয় এবং পজিটিভ রেজাল্ট আসে। সেখানে ডাক্তাররা যথাসম্ভব চেষ্টা করলেও সারিয়ে তুলতে পারছিলেন না। একসময় স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। ঠিক করা হয় তাকে কলকাতার এএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। সঙ্গে সঙ্গে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয় এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সাহায্যের জন্য আবেদন জানানো হয়। জেলা দুর্যোগ মোকাবেলা বিভাগের পক্ষ থেকে জেসিকা রোজ লালসিম এক নির্দেশে পুলিশকে বলেন, যখন এম্বুলেন্স শহরের রাস্তা দিয়ে যাবে তখন গ্রিন করিডোর গড়ে তুলতে। অর্থাৎ রাস্তায় চলাচলকারী প্রত্যেক যান-বাহনকে সরিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য পরিষ্কার রাস্তা তৈরি করতে। শিলচর শহরের ইতিহাসে এই প্রথম গ্রিন করিডোরের দৃশ্য দেখলেন মানুষ।
Comments are closed.